Attack on ED

সেদিন পালিয়েছিলেন মমতার মন্ত্রী, এবার মোদীর আধিকারিকরাও

রাজ্য

 ইডি’র আধিকারিকরা ছুটে পালাচ্ছেন, পিছনে তাড়া করছে শাহজাহানের বাহিনী— এই দৃশ্য নতুন হলেও বিস্ময়ের নয় সন্দেশখালির কাছে।
বছর তিনকে আগে এখানেই প্রাণ হাতে করে পালাতে হয়েছিল মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার সদস্য সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরিকে। ত্রাণ দিতে গিয়ে শাহজাহানের বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল খোদ এই মন্ত্রীকে। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি নিজেই জানিয়েছিলেন মরে যেতেন তিনি, কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন, শাহজাহানের বাহিনীই হামলা চালিয়েছে। প্রতিবাদে মন্ত্রীসভার বৈঠকেও যাননি তিনি। একজন মন্ত্রীর ওপর হামলা চালাচ্ছে ব্লক সভাপতি-তবুও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে প্রতিবাদের শব্দ বের করতে পারেনি খোদ মন্ত্রী নিজেই।
পুলিশও হাত গুটিয়ে ছিল তাই। মন্ত্রীর হামলার ঘটনাতেও সামান্য এফআইআর টুকুও রুজু করার সাহস পায়নি কেউ শাহজাহানের বিরুদ্ধে।
এতটাই দাপুটে বাহুবলী এই ব্যক্তি। মুখ্যমন্ত্রীর নীরবরতা, খোদ ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা এই দাপটের রাজনীতির আসল শক্তি। নবজোয়ার থেকে ইয়াসের সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জির সন্দেশখালি সফরে এই কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্যের মালিককেই ঘুরতে দেখা যায়। তাই পুলিশও হাত গুটিয়ে। প্রকাশ্যে গর্ব করেই তাই এই শেখ শাহজাহান বলে বেড়ায় তাঁর পুলিশের নিরাপত্তা লাগবে না, তাঁর  নিজের ‘কোবরা’ বাহিনী আছে। মাসিক প্রায় কুড়ি হাজার টাকা সহ একাধিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে পোষা তাঁর বাহিনী। প্রত্যেকের কাছে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র, প্রকাশ্যেই তা নিয়ে ঘোরে এই বাহিনী। লোকসভা থেকে বিধানসভা হয়ে পঞ্চায়েত এমনকি সমবায়ের ভোটেও এই বাহিনী গত ছয় ধরে তৃণমূলের হয়ে ভোট লুটের অপারেশন চালায়। 
হাজি নুরুল ইসলামের হাত ধরে তৃণমূলে পা রাখা, তারপর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক হয়ে অভিষেক ব্যানার্জির শিবিরে ঢুকে পড়া। শাহজাহানের দাপটের মূল রহস্য তাঁর বিপুল টাকার জোগান দেওয়ার ক্ষমতা। রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূল, তখন থেকেই দাপট বাড়তে শুরু করে, একের পর এক নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হতে থাকে। ১১ সালে বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় সিপিআই(এম) প্রার্থী নিরাপদ সর্দার। তাঁর ওপরে একাধিকবার আক্রমণ হয়। আদিবাসীদের ওপরেও চলে আক্রমণ, শুরু হয় পাট্টা, বর্গা জমি লুটের অভিযান। ২০১৬সালে ভোট লুট করে সন্দেশখালি বিধানসভা দখল নেয় তৃণমূল। হামলা মামলা করে কার্যত সন্দেশখালি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। লুট শুরু হয় সন্দেশখালি জুড়ে। সরকারি জমি দখল,  মেছো ঘেরি দখল শুরু হয়ে যায়। বারুদের স্তূপে চলে যায় সন্দেশখালি। শাহজাহান নিজে একটি আইনি দুটি বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে পুলিশের উপস্থিতিতে। গোটা এলাকা তার কবজায় চলে যায়। বাড়তে থাকে সম্পত্তির পরিমাণ। সুন্দরবনের কাঠ মধু,বাগদার পিন মাছ পাচারের কিংপিন হয়ে ওঠে শাজাহান। পরবর্তীতে পঞ্চায়েত সদস্য, উপপ্রধান, প্রধান এবং বর্তমানে জেলা পরিষদের প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হয়ে ওঠা, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ঘুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হওয়া। দলের কাজের পাশাপাশি সরাসরি প্রশাসনিক কাজে যুক্ত হয় শাহজাহান। বাড়তে থাকে প্রভাব। সরবেড়িয়া আগারহাটির উপপ্রধান পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচিত হয় শেখ শাজাহান। ততদিনে বোমা বন্দুকের জোরে গোটা সন্দেশখালি কবজা করে নেয়। সিপিআই(এম) করা যাবে না— ফতোয়া দেওয়া হয়। সিপিআই(এম) কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা, হামলা, ঘরছাড়া করার ঘটনা সবই তারই নেতৃত্বে। একাধিক খুন সহ অপরাধের ঘটনায় যুক্ত এই দাগী দুষ্কৃতীকেই দলের ব্লক সভাপতি থেকে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বানানো হয় মমতা ব্যানার্জির— অভিষেক ব্যানার্জির হস্তক্ষেপে।  বসিরহাট মহকুমার পুলিশ প্রশাসনের একটি অংশ মাসোহারার ভিত্তিতে চলে যায় শাজাহানের কবজায়। রামপুরে একটি গ্রন্থাগার উদ্বোধনে কলম পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক হাসান ইমরানকে দেখা যায় শাজাহানকে নিয়ে গ্রন্থাগার উদ্বোধনে। কলকাতায় প্রভাবশালীদের বাড়তে পৌঁছে যেত বাগদা, গলদা চিংড়ি। এমনই প্রভাব যে বেঁচে থাকতেই সন্দেশখালিতে তাঁর নামাঙ্কিত বাজারও রয়েছে। নিজের নামেই বাজার তৈরি করে ফেলেছে।
জ্যোতিপ্রিয়র সাথে ঘনিষ্ঠতার পর্বে চরমে পৌঁছে যায় ভেড়ি, ইটভাটা, বনসৃজনের জমি বিক্রি, নদীর অংশ ভরাট করে পিনমাছের কারবার, সুন্দরবনের কাঠ মধু সহ বিভিন্ন সামগ্রী পাচার। বাড়তে থাকে সম্পত্তি ,প্রতিপত্তি। এরপর আমফান ইয়াস পর্বে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে পৌঁছে যায় শাহজাহান। নবজোয়ার যাত্রায় অভিষেকের সাথে গোটা বসিরহাট পরিক্রমা করে বিএসএসএ ময়দানে রাত্রিযাপনও করে। সেই নৈশ সাক্ষাৎ নিয়েও একাধিক তথ্য দিয়েছে খোদ তৃণমূল কর্মীরাই।

Comments :0

Login to leave a comment