BJP RAJASTHAN

রাজস্থানে উপনির্বাচনে হার বিজেপি'র

জাতীয়

বিধায়ক হওয়ার আগেই সুরিন্দর পাল সিং-কে মন্ত্রী করে দিয়েছিল বিজেপি! কিন্তু এমনভাবে মুখ পুড়বে তা হয়তো আন্দাজ করতে পারেননি দলের নেতারা। বিজেপি ঔদ্ধত্য দেখালেও সুরিন্দর পাল সিংয়ের এ যাত্রায় অন্তত বিধায়ক হওয়া হলো না। রাজস্থানের করণপুর আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী রূপিন্দর সিং কানুরের কাছে ১১ হাজারেরও বেশি ভোটে পরাস্ত হয়েছেন তিনি। একারণেই রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘পরাস্ত হয়েছে বিজেপি’র গর্ব। ওরা যেভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি এবং নৈতিকতাকে অস্বীকার করে সুরিন্দরকে প্রার্থী করা হয়েছিল জনগণই তার যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছে বিজেপি-কে।’’
করণপুর আসনে উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির মধ্যেই সুরিন্দরকে মন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। প্রতিমন্ত্রী করলেও চার দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার মধ্যে সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং ওয়াকফ দপ্তরও আছে। সেই সময়েই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয় নির্বাচন কমিশনকে। বলা হয়েছিল, উপনির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে। এই সময় এক প্রার্থীকে মন্ত্রী করে দেওয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং চূড়ান্ত অনৈতিকও। কিন্তু বিজেপি রাজত্বে আর পাঁচটি বিষয়ের মতোই পাত্তা দিতে চায়নি কমিশন। অবশ্য সেই জবাব জনগণের কাছে পেল বিজেপি। সুরিন্দরকে পরাস্ত করে বিজেপি’র ঔদ্ধত্যে আঘাত করেছেন করণপুরবাসী।
এই হারের ফলে সুরিন্দরের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। নির্বাচিত না হলে মন্ত্রীকে ৬ মাসের মধ্যে কোনও ভোটে জিতে আসতে হয়। সুরিন্দর এবার হারলেন, এখন বাকি সময়ে ভরসা করে থাকতে হবে আবার কোনও আসনে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি—তার ওপর। নাহলে এখনই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়। ফলে বিজেপি কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপরেই নির্ভর করছে সুরিন্দরের মন্ত্রী থাকবেন, না তিনি ইস্তফা দেবেন।
২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় ভোট হয়েছিল ১৯৯ আসনে। করণপুর আসনের কংগ্রেস প্রার্থী গুরমিত সিং কানুরের ভোট পর্বের মধ্যেই ১৫ নভেম্বর মৃত্যু হওয়ায় ওই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। গুরমিত করণপুরের বিধায়ক ছিলেন। উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী করে গুরমিতেরই ছেলে রূপিন্দরকে। আর বিজেপি’র প্রার্থী হন সুরিন্দির। তবে প্রার্থী করেই ক্ষান্ত হয়নি বিজেপি, উপনির্বাচনের মাঝেই ৩০ ডিসেম্বর নজিরবিহীনভাবে তাঁকে মন্ত্রীও করে দেওয়া হয়। সোমবার উপনির্বাচনের ফল বেরনোর পর দেখা গেল কানুর পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৭৬১ ভোট এবং মন্ত্রী সুরিন্দরের পক্ষে পড়েছে ৮৩ হাজার ৫০০ ভোট। অর্থাৎ ১১ হাজার ২৬১ ভোটে সুরিন্দরকে পরাস্ত করে রূপিন্দর কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৬৯ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করতে সমর্থ হলেন। আর বিজেপি’র আসন ১১৫-তেই থমকে থাকল।
জেতার পর কানুর সামগ্রিকভাবে করণপুরবাসী এবং গণতন্ত্রের জয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এসে প্রচার করেছিলেন বিজেপি প্রার্থীর হয়ে। আসলে এই নির্বাচন তাঁর নয়, ছিল তাঁর প্রয়াত বাবারই। যাবতীয় চাপকে অস্বীকার করে করণপুরবাসী বাবার ৪০ বছর ধরে কাজেরই স্বীকৃতি দিলেন আমাকে জয়ী করে। আসলে বিজেপি’র ‘মাস্টারস্ট্রোক’ চূড়ান্ত ব্যর্থ হলো।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোবিন্দ সিং দোতসারা দলের জয়ের পর বলেছেন, ‘‘গত এক মাস যাবৎ রাজ্যে সরকার বলে কিছু নেই। মন্ত্রীসভা গঠন করতেই দেরি হয়ে গেল অনেক। এখন আবার কংগ্রেস আমলের সরকারি প্রকল্পের নাম বদলেই ব্যস্ত ভজনলাল শর্মা।’’ কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এদিন এক্স হ্যান্ডেলে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘বিজেপি কাউকে মন্ত্রী বানিয়ে দিতে পারে। কিন্তু জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন জনগণই।’’ এমন জোরালো ধাক্কা খেয়ে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সি পি যোশীর মুখ বাঁচানো প্রতিক্রিয়া বলেছেন, ‘‘উপনির্বাচনে সুরিন্দরের হারের কারণ পর্যালোচনা করা হবে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment