Lalan Sheikh custodial death

মূল চক্রীর মৃত্যুতে অধরা রয়ে গেল কি হার্ড ডিস্ক?

রাজ্য

Lalan Sheikh custodial death

সিবিআই’র হাতে কি সেই হার্ড ডিস্ক অধরাই রয়ে গেল? নাকি এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘লিড’ আসে যা বগটুইকাণ্ডের তদন্তে অন্য মোড় নিতে পারতো? তবে সবকিছুকে ছাপিয়েই বগটুইকাণ্ডের তদন্তে সিবিআই’র গাফিলতির গুরুতর ছবিই যেন সামনে এল। হেপাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু সিবিআই’র অপদার্থতা, অপেশাদারিত্বকেই বেআব্রু করেছে। 

 

এদিকে, এদিনই রামপুরহাট মহকুমা আদালতের এসিজেএম সৌভিক দে বড় লালনের মৃত্যুর ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 
বগটুইয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করা এবং যার পরিণতিতে এই ঘটনা তার পুরো কাহিনি খোলা পাতার মতো ছিল বড় লালনের কাছে। ফলে গোটা তদন্তের ভরকেন্দ্রে থাকা এক চরিত্রকে এভাবে হারানোয় যেমন সিবিআই’র গাফিলতিকে স্পষ্ট করেছে ঠিক তেমনই বগটুইয়ের পেছনে থাকা ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’কে খোলসা করার পথ খানিকটা হলেও থমকে দিয়েছে। 

 


গত ২১ মার্চ বগটুই মোড়ে স্থানীয় বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়। তার বদলা নিতেই সাথে সাথেই ভাদু অনুগামীরা শয়ে শয়ে জমায়েত হয়ে চড়াও হয় বগটুই গ্রামেরই তৃণমূলের ভাদু বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনদের বাড়িতে। কুপিয়ে, পুড়িয়ে, জ্বালিয়ে কালো মণ্ডে পরিণত করা হয় সাত-সাতটা লাশ। পরে মৃত্যু হয় আরও তিনজনের। মোট দশ জনের এমন নৃশংস হত্যা এবং ভাদু খুন— দুইয়ের তদন্তভার যায় সিবিআই’র হাতে। 

 

সিবিআই বগটুইয়ে পা দিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় বড় লালনের অপরাধের ব্যাপারে। তদন্তের প্রথম পর্যায়ে বড় লালনের বাড়িতে চালায় তল্লাশি। বাড়িতে লাগানো সিসিটিভির হদিশ পেলেও তার হার্ডডিস্ক ছিল উধাও। সেই হার্ড ডিস্কই হয়ে ওঠে গোটা গণহত্যার অন্যতম ‘প্রত্যক্ষদর্শী’।
কেন বড় লালনের সিসিটিভি হার্ড ডিস্ক এত গুরত্বপূর্ণ? সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, বড় লালনের সিসিটিভিগুলি যে মুখে ছিল তাতেই স্পষ্ট ধরা পড়বে সেই রাতে বগটুইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া ভাদু অনুগামীদের গতিবিধি। বড় লালনের বাড়ির সামনে দিয়েই গিয়েছিল গোটা জমায়েত। যে জমায়েত খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পরিণত হয় হাড়হিম করা পাশবিকতায়। 

 

পাশাপাশি তদন্তের গভীরে গিয়ে সিবিআই এটাও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, দাঁড়িয়ে থেকে যে যে এই গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিল তার মূল কাণ্ডারিই ছিল বড় লালন। বড় লালনের পাশাপাশি তার হার্ডডিস্কও হয়ে উঠেছিল সিবিআই’র অন্যতম হাতিয়ার। দীর্ঘ আটমাস ফেরার থাকার পর বড় লালনকে নাগালে পেলেও তার হার্ডডিস্ক ছিল অধরাই। 
সেই হার্ড ডিস্কের হদিশ করতে সোমবারই বড় লালনকে তার পরিবারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল সিবিআই। আদালতে তোলার আগে সোমবারই লালন শেখকে নিয়ে তল্লাশিতে বেরিয়েছিল সিবিআই। বড় লালনের মেয়ে রুকসানা খাতুন তা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘‘সোমবার বাড়ি বাড়ি নিয়ে ঘুরেছিল বাবাকে। হার্ডডিস্ক কোথায় আছে তা জানার জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আমরা তা জানি না বলা সত্ত্বেও খুব চাপ দিচ্ছিল সিবিআই অফিসারেরা।’’ বড় লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবিও এফআইআর-এ অভিযোগ করেছেন সিবিআই হার্ডডিক্স পাওয়ার জন্য স্বামীর ওপর অত্যাচার করেছে।

 


বড় লালনের মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত সিবিআই কোনও রকম মুখ খোলেনি রামপুরহাটে। তবে তদন্ত থেকে ঢের দূরে থাকা রাজ্য পুলিশ এই মৃত্যুর পরই সিবিআই’র ডাকে সক্রিয় হয়ে নানা ব্যাপারে তদ্বির তদারকি করার জন্য। সেই পুলিশের এক আধিকারিক দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন, ‘সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী লালন যদি আত্মহত্যা করে থাকে তাহলে সেটা মানসিক অবসাদ থেকেই হবে। কারণ বড় লালনের বিরুদ্ধে এমনিতেই যা তথ্য প্রমাণ সিবিআই পেয়েছে তাতে মামলা থেকে তার নিস্তার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকেই হয়ত চূড়ান্ত পথ বেছে নিয়েছে সে। দ্বিতীয়ত সোমবার সিবিআই যে বড় লালনের হার্ডডিস্কের খোঁজে মরিয়া ছিল তা স্পষ্ট। সেই হার্ডডিস্কের খোঁজ যদি সিবিআই পেয়ে গিয়েছিল তাহলে তারজন্য লালন চরম পথ নিতে আর দ্বিতীয়বার ভাবেনি।’ 

 


কিন্তু বড় লালনে মৃত্যুতে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ উন্মোচনের পথ পিচ্ছিল হয়েছে সিবিআই’র কাছে। বালি, পাথর, গোরু, কয়লা থেকে আদায় হওয়া তোলার বখরা নিয়ে বিবাদের পরিণতিতেই বগটুইকাণ্ড। সেই বখরা যেত কোথায় কোথায়? বখরার ভাগ না পেয়েই বা কারা খেপেছিল ভাদু-লালনের উপর? এই সব প্রশ্নে উত্তর দিতে পারত একমাত্র লালনই। কারণ বখরার নিয়ন্ত্রক আর বখরা না পেয়ে ক্ষুব্ধ— উভয় গোষ্ঠীর মাথাতেই ছিল শাসক দলের কোনও না কোনও তাবড়ের হাত। এসব খোলসা করতেই তো বড় লালন ছিল সিবিআই’র ‘বোড়ে’।

Comments :0

Login to leave a comment