Shahjahan CBI

হেপাজতে নিয়েই সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে সিবিআই

রাজ্য

নিজম  প্যালেসে শেখ শাহজাহান। আর সিবিআই সন্দেশখালির আকুঞ্জিপাড়ায় শাহজাহানের বাড়িতে! 
তবে বাড়িতে ঢোকেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। শাহজাহানের বাড়ির পাশাপাশি সরবেড়িয়ায় শেখ শাহজাহানের নামাঙ্কিত মার্কেটেও যায় সিবিআই। এদিনই সন্ধ্যায় রেশন কাণ্ডে ধৃত বনগাঁর তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্যের বাড়িতেও যায় সিবিআই, সেখানেও গত ৫ জানুয়ারি রাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি’র আধিকারিকরা।
৫ জানুয়ারি সকাললে প্রথমে ইডি আক্রান্ত হয় সন্দেশখালিতে। সেদি তৃণমূলের হামলায় একাধিক সাংবাদিকও রক্তাক্ত হয়েছিলেন। তারপরে প্রায় ১৯দিন চুপচাপ বসে থাকার পরে  এক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে শাহজাহানের চারটি বাড়িতে তল্লাশি করে, ১৩টি আলমারি, টেবিলের ড্রয়ারের তালা ভেঙে, খালি হাতে বাড়িতে সমনের নোটিশের ঝুলিয়ে ইডি ফিরে এসেছিল সন্দেশখালি থেকে। পুলিশও ছিল হাত গুটিয়ে, ইডি’ও।  ৫৬দিন পরে একেবারে কাঁচা চিত্রনাট্যে বাড়ি থেকে মাত্র ২৪কিলোমিটার দূরে মিনাখাঁর বামুনপুকুর থেকে পুলিশ ‘গ্রেপ্তার’ করে শাহজাহানকে। এরপর বিস্তর নাটকীয় টানাপোড়েন শেষে সিবিআইয়ের হাতে আসার পরে বৃহস্পতিবার কেন্রীরেয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা প্রথম পা রাখলো শাহজাহানের তল্লাটে।
শাহজাহানকে পুলিশের হাতে রাখতেই যে ভাবে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গেছে তড়িঘড়ি, যেভাবে সিআইডি শাহজাহানকে সিবিআই হেপাজতে দিতে গড়িমসি করেছে তাতে গ্রেপ্তারের পরেও এই তৃণমূলী বাহুবলী নেতা যে প্রভাবশালী তা স্পষ্ট। আদালতেও সেটা তুলে ধরতে চাইছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে শেখ শাহজাজানের মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখে স্পষ্ট হয়েছে যে যেনতেন ভাবে ৫ জানুয়ারি সকালে তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের বাড়ি ভিতরে তল্লাশিতে বাঁধা দিতে চেয়েছিল শাহজাহান শেখ। এমন কী আড়াল করতে চাইছিল শেখ শাহজাহান? সিবিআই সূত্রে জানা গেছে শাহজাহান শেখের বাহিনী যারা ওই দিন ঘটনাস্থলে ছিল তারা হল মাফুজা মোল্লা, রাম মির, শাহজাহান শেখ মারুক মির (চালক)  সাইফুদ্দিন গোলদার  দিলীপ গারু মইদুল শেখ প্রমুখ। এদেরও তলব করা হতে পারে।
আরেক তদন্তকারী সংস্থার তরফে ইতিমধ্যেই আদালতে  ৫ জানুয়ারি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে সকাল সাতটা পনেরো মিনিট নাগাদ ইডি আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌছেছিল। অনেক বার শাহজাহানকে ফোন করা হয়েছিল। ধরেননি। বাড়ির সামনে পৌছে ফোন করতে একবার ধরলেও ইডি’র কথা শুনেই ফোন কেটে দেয়। তারপর মোবাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। টাওয়ার লোকেশনে জানা যায় বাড়িতেই রয়েছে ফোনটি। আরেকটি নম্বরের ফোনের লোকশনও বাড়ি দেখাচ্ছিল। ইডির দাবি, টাওয়ার লোকেশন ধরে অন্তত ২৮ বার ফোন করা হয়েছে ওই সময়ের মধ্যে। ইডি’র কথা শোনার পরেই ২৮বার ফোন করে বাড়ির সামনে দলীয় বাহিনী জড়ো করেছিলেন তৃণমূল নেতা। তারপরেই হামলা হয়। তবে কী লুকোতে মরিয়া হয়ে তল্লাশিতে বাঁধা দেয় শাহজাজান বাহিনী?
সেই সূত্রেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকরা মনে করছেন, বাড়িতে বিপুল পরিমান নগদ টাকা ছিল যা উদ্ধার হলে পরিস্থিতি বেগতিক হত। ইডি’ও সেদিন টাকা গোনার মেশিন সঙ্গে নিয়েই তল্লাশিতে গিয়েছিল শাহজাহানের বাড়িতে উদ্ধার হওয়ার টাকার পরিমান কী তবে পার্থ চ্যাটার্জির বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমানকে ছাপিয়ে যেত? টালিগঞ্জে ও বেলঘড়িয়ায় নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত অর্পিতা মুখার্জির দুটির ফ্ল্যাট থেকে ৪৯কোটি ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। সেই টাকাও ছাপিয়ে যেত? রেশন কাণ্ডের দুর্নীতির সঙ্গে কী সেই টাকার যোগ ছিল? সেই টাকার সঙ্গে রাজ্যের কোন শীর্ষ প্রভাবশালী কোন যোগসূত্র রয়েছে? শাহজাহান শেখকে পুলিশি হেপাজতে রেখে দিতেই কী তা মরিয়া ছিল রাজ্য প্রশাসন ?
শনিবার বসিরহাট আদালতে তোলার কথা শেখ শাহজাহানকে। ন্যাজাট থানার দুটি ও বনগাঁ থানার একটি এফআইআরের ভিত্তিতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এর মধ্যে ন্যাজাট থানায় দায়ের এফআইআরের ভিত্তিতেই শাহজাহান শেখকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। দু’টি মামলাতেই মোট ৩৪টি ধারা যুক্ত করা হয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তাতে খুনের চেষ্টার ধারার পাশাপাশি ডাকাতি সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ করা হয়। ফলে আদালতে তোলা আগে এদিন সিবিআইয়ের তরফে সন্দেশখালি ও বনগাঁয় দুটি হামলা স্থলই ঘুরে দেখা হয়। ছবিও তোলেন আধিকারিকরা। এই মামলাতে এবার রেশন কাণ্ডে ইডি’র হাতে ধৃত শঙ্কর আঢ্যকে হেপাজতে নিতে চাইবে সিবিআই।
ইতিমধ্যে রেশন দুর্নীতি মামলায় শঙ্কর আঢ্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করেছে ইডি। ২০১২ তেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত একাধিক কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও দুবাইয়ে টাকা পাচার করেছেন এই তৃণমূল নেতা। মোট প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে দাবি ইডির। যার থেকে ০.৫ শতাংশ কমিশন পেতেন জ্যোতিপ্রিয় ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা। মোট প্রায় ৯০টি ফরেক্স কোম্পানিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করতো এই শঙ্কর আঢ্য। মূলত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের টাকাকে সরানোর কাজেই ব্যবহার করা হতো। শঙ্কর আঢ্যের দুটি সংস্থা আঢ্য ফরেক্স লিমিটেড, এস আর আঢ্য ফিনান্স প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে কোটি কোটির নগদ টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় পরিবর্তন করে পাচার করা হয়েছে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment