পশ্চিমবঙ্গে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, যে মরে গেছে (আর জি করে নৃশংস ও পৈশাচিকভাবে ধর্ষিতা তরুণী চিকিৎসক) সে তো আর ফিরে আসবে না। তাছাড়া আন্দোলনও তো এক মাস পেরিয়ে গেছে। এবার সকলে কাজে যোগ দিন, পুজোয় ফিরুন, উৎসবে মেতে উঠুন। অর্থাৎ একজন চরম অমানবিক, অসংবেদনশীল, নিষ্ঠুর মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন, সন্তানহারা মায়ের শোকের মেয়াদ এক মাসের বেশি হতে পারে না। আন্দোলনও যথেষ্ট হয়ে গেছে, আর দরকার নেই। সব ভুলে গিয়ে তিনি তাই সকলকে উৎসবে আনন্দে মেতে উঠতে বলেছেন। অতীতে এমন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তিনি যেসব ছোট ঘট্না দুষ্টু ছেলেদের কাজ বলে লঘু করে দিয়েছিলেন, অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন, এবারও তার অন্যথা হয়নি। এবার ছোট ঘটনা বলেননি ঠিকই তবে স্বাস্থ্য ও পুলিশ প্রশাসন অপরাধীদের বাঁচাতে অতীতের যে কোনও ঘটনার থেকে বহুগুণ বেশি বেপরোয়া ভূমিকা পালন করেছেন। বলা যায় খুনি-ধর্ষকরা যতটা অপরাধ করেছে তার থেকে কম অপরাধ করেনি স্বাস্থ্য ও পুলিশ প্রশাসন। তদন্তের নির্ধারিত ও প্রচলিত প্রক্রিয়াকে সচেতনভাবে অনুসরণ না করে এক জঘন্য, ঘৃণ্য ও কুৎসিত পথে চালিত করা হয়েছে। আর তা করা হয় অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে। আর এই গোটা পরিস্থিতিকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যেতে ও আড়াল করতে বদ্ধপরিকর মমতার সরকার। সেই জন্যই তাঁর কথাবার্তায় সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন বা অস্বীকার করছেন গুরুতর অভিযোগগুলিকে। একইভাবে অপরাধীদের আড়াল করতে এবং সরকারের অপদার্থতা ঢাকতে সর্বোচ্চ আদালতে মানুষের করের কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রথমে ২১জন, পরে ৩৪জন আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। এরপর যদি এই সরকারকে অপরাধীদের, ধর্ষক-খুনিদের সরকার বলা হয় তাহলে কি ভুল কিছু বলা হবে?
আসলে সেই ৯ আগস্ট থেকে, বিশেষ করে ১৪ আগস্ট মধ্যরাত থেকে বিচার চেয়ে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়েছে, সমাজের সব অংশের মানুষের মনের সুপ্ত প্রতিবাদের আগুন যেভাবে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। প্রতিদিন প্রতিবাদীরা যেভাবে রাস্তা দখল করছে, প্রতিবাদের আঙ্গিকে যেভাবে অতিনবত্বের অবতারণা ঘটছে, শহর ছাড়িয়ে গ্রামের প্রান্তরে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে শাসক দলের আতঙ্ক তো হবেই। প্রথমে ফোঁস করে হাওয়া বুঝে গর্তে ঢোকার চেষ্টা থেকেই বোঝা যাচ্ছে গদি সামলতেই তিনি উদ্বিগ্ন।
মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গেছেন গণপ্লাবনে আন্দোলন যেভাবে ভাসছে তাকে থামানোর শক্তি শাসক দল বা সরকারের নেই। তেমনি আন্দোলন থামানো না গেলে তাঁর দল প্রশাসন সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আবার আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলি পূরণ করার সততা ও সাহসও সরকারের নেই। ধর্ষক, খুনি, তোলাবাজ, দুর্নীতিবাজদের সাজা দিলে তৃণমূল দলটাই উঠে যাবে। এই অবস্থায় দাবি পূরণ বা ন্যায় বিচারে তাঁর মাথাব্যথা নেই। তিনি কৌশলে উৎসবের আনন্দে মানুষকে ডুবিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ আন্দোলনে জল ঢেলে দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন।
তাই নির্লজ্জভাবে ও নিষ্ঠুরভাবে শোকের মেয়াদ এক মাসের মধ্যে বেঁধে দিয়েছেন। বিচারের দাবির আন্দোলনের মেয়াদও এক মাসের মধ্যে বেঁধে দিয়েছেন। এক মাস হয়ে গেছে। এবার সেই চিকিৎসক মেয়েটিকে ভুলে যাও। ভুলে যাও আন্দোলন। ঝাঁপিয়ে পড়ো উৎসবে। এই ভদ্র মহিলা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
CM FESTIVAL
শোকের মেয়াদও বেঁধে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
×
Comments :0