আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নাগপুরের তৈরি করা স্ক্রিপ্টে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ধর্মের নামে ভাগাভাগি করতে নেমেছে বিজেপি এবং তৃণমূল। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে সাংবাদিকদের সামনে এই অভিযোগ করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রিহার্সাল চলছে রাজ্যে। বিজেপি বনাম তৃণমূল কোনও বিরোধ নেই, এক জায়গা থেকে পরিকল্পনামাফিক পরিপূরক রাজনীতি করছে। দুই দল একসঙ্গেই আছে, কেবল মানুষকে ভাগাভাগি করে রমজান মাস, দোল, ঈদ, রামনবমী ঘিরে উত্তেজনা তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কোনও দাঙ্গা-হাঙ্গামা চায় না বলেই দোল শান্তিতে পালিত হয়েছে। আমরা মানুষের কাছে আবেদন করছি, রীতিনীতি অনুযায়ী নিজ নিজ ধর্মানুষ্ঠান বরাবরের মতো পালন করুন, শুধু অন্যের কষ্টের কারণ হবেন না।
মানুষের জীবন-জীবিকার প্রকৃত সমস্যার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, রোজগার নেই, মজুরির সমস্যা, কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না, অথচ মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চলেছে। কাজ না থাকায় পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে চলে যেতে হচ্ছে, গ্রামে ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে। যত দিন যাচ্ছে, মানুষের এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এককাট্টা হচ্ছে, খেটে খাওয়া মানুষ সংঘবদ্ধ হচ্ছে লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে। আগামী ২০ এপ্রিলের ব্রিগেড তার সাক্ষ্য বহন করবে।
রুটিরুজি এই বিষয়গুলি আড়াল করতেই তৃণমূল এবং বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বিভাজনের উসকানি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ওরা মন্দির মসজিদের নামে ভাগাভাগির চেষ্টা করছে। বিধানসভায় জনবিরোধী বাজেট নিয়ে চর্চা না করে কার ধর্ম কত মহান তাই নিয়ে ঝগড়ার নাটক করছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এখানে ঘাঁটি গেড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার রাজনীতির স্ক্রিপ্ট তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন, সেই স্ক্রিপ্টে দুই দল চলছে। বেলডাঙার দাঙ্গার পরে কার্তিক মহারাজ আর হুমায়ুন কবীর একসঙ্গে আমোদ করেছেন। ভারত ক্রিকেট ম্যাচে জেতার পরে বিজেপি মধ্য প্রদেশে দাঙ্গা লাগিয়ে দিল, আর এখানে মেদিনীপুরে তৃণমূল দপ্তরে মহিলাকে ডেকে এনে ধর্ষণ করল তৃণমূলের অঞ্চল প্রধান।
ফুরফুরা শরিফে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সম্প্রীতির বার্তা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, বার্তা তো প্রশাসনিক দপ্তর নবান্ন থেকেই দিতে পারতেন। তাঁর প্রশাসন গতবারের রামনবমী ঘিরে শিবপুর, রিষড়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকাতে ব্যবস্থা নিয়েছিল? এবারও রামনবমী যত এগিয়ে আসছে দুই পক্ষ মিলে আবার উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে। এই মমতা ব্যানার্জিই এরাজ্যে আরএসএস’কে ডেকে এনেছিলেন বামপন্থীদের উৎখাত করতে। এখন আগামী বছরের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে আরেকটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে। রামমন্দিরের মতো জগন্নাথ মন্দিরকে ইস্যু করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলার মানুষ ভাগাভাগি চায় না, তাঁরা একসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতি বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে।
এদিন মহম্মদ সেলিম সিপিআই(এম)’র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির বৈঠকে যোগ দেন। তারই মাঝে সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক বিজয় পালকে সঙ্গে নিয়ে। রুটিরুজির সঙ্কট চাপা দিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির মধ্যে মহিলাদের ওপরে আক্রমণ বৃদ্ধিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সেলিম বলেছেন, মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। ধর্ষকদের এত সাহস বেড়েছে যে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে অঞ্চল সভাপতি ফুর্তি করতে ধর্ষণ করেছে মোকরমপুরে। পুলিশ আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি। মেদিনীপুরে শহরে আদিবাসী মহিলাকে সিভিক পুলিশ নির্যাতন করেছে, পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। উলটে পরিবারের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। এগুলি কোনোটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তৃণমূল পুলিশের সাহায্য নিয়ে অপকর্ম করে চলেছে। দিনহাটায় মহিলাকে কাজ দেবে বলে তৃণমূল নেতা উদয়ন গুহের ঘনিষ্ঠ ধর্ষণ করেছে। মহিলা, ছাত্র, যুব কর্মীরা এগুলোর প্রতিবাদ করেছেন, রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ চলবে।
মহারাষ্ট্রে আওরঙ্গজেবের সমাধি ধ্বংসে আরএসএস’র হুমকি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, এটাই তো কৌশল। মানুষের এখনকার জীবন-জীবিকার সমস্যা চাপা দিতে কয়েক শতাব্দী আগের বিষয় নিয়ে চেঁচামেচি করছে। কয়েক শতাব্দী আগে সমাধিস্থদেরও শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না, এখনকার জীবিতদেরও শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না।
মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরে গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, উনি ভাষণ দেওয়ার জন্য বিশ্বভ্রমণেও যেতে পারেন, তাতে বলার কিছু নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কী বলতে যাবেন? মিথ্যা, মিথ্যা এবং মিথ্যা?
Comments :0