সংবিধানের ২০০ নং অনুচ্ছেদের অধীনে রাজ্যপালের ক্ষমতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শমূলক মতামত অত্যন্ত হতাশাজনক।বিবৃতিতে বললো সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো।
পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণের ফলে রাজ্যগুলোর অধিকারের ওপর যে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই মতামত তা মোটেই রোধ করতে পারবে না। পলিটব্যুরোর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শমূলক মতামতটি রাজ্যপালদের স্বেচ্ছাচারী কাজকর্মের উপর সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের কোন ব্যবস্থা রাখেনি। যেখানে বিভিন্ন রাজ্যপালেরা কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
সংবিধান অনুযায়ী বিধানসভায় বিল পাশ হওয়ার পর তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয় তার অনুমোদনের জন্য। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা সংবিধানের ২০০ ধারা অনুসরণ করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সংবিধানের ২০১ ধারা অনুযায়ী, কোনও বিল রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে তার সামনে দু’টি বিকল্প থাকে হয় ওই বিলে সম্মতি জানানো, অথবা তা নাকচ করে দেওয়া। কিন্তু এই কাজের জন্য সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি।
গত ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ু সরকারের করা এক মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের আছে কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। কেন্দ্রীয় সরকার জানায় তারা রাজ্যপালকে সময় বেঁধে দেওয়ার বিরোধী। এদিন সুপ্রিম কোর্ট যেই রায় দিয়েছে তা সরকারের পক্ষেই গিয়েছে।
উল্লেখ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই এই বিষয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাখ্যা করতে শীর্ষ আাদালতের সামনে ১৪টি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। তারপর থেকেই প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্সের মামলা চলছিল সুপ্রিম কোর্টে।
বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো বলেছে, সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে বিলে সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে কোন সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যায় না। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের এই মতামত শুধুমাত্র বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোতে রাজ্যপালদের অতিরিক্ত-সংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগকে আরও উৎসাহিত করবে।
পলিটব্যুরো বলেছে, মতামতে বলা হয়েছে দ্বিতীয় বার রাজ্য বিধানসভা বা আইনসভায় কোন বিল যদি পাশ হওয়ার পর রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয় সেই ক্ষেত্রেও রাজ্যপাল নিজের সম্মতি দিতে বাধ্য নয়। রাজ্যপাল চাইলে বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন। পলিটব্যুরোর কথায়, সাংবিধানিক বেঞ্চ যেই মতামত জানিয়েছে তাতে একমাত্র স্বস্তির বিষয় হলো দীর্ঘকাল ধরে রাজ্যপাল কোন বিল মুলতুবি রাখলে বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপ সম্ভব। কিন্তু এখানেও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, কারণ ‘দীর্ঘকালীন নিষ্ক্রিয়তা’ বা ‘বিলম্ব’ বলতে কী বোঝায় তার কোনও সুস্পষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে।
CPIM Polit Bureau
রাজ্যপালদের কাজের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের কোন ব্যবস্থা রাখেনি সুপ্রিম কোর্ট : পলিটব্যুরো
×
Comments :0