Sunderban Development Minister

নামখানায় বিক্ষোভের মুখে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী

রাজ্য জেলা

সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ।

অনিল কুন্ডু- নামখানা

নদী বাঁধ মেরামতের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা চুরি, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার নামখানার নারায়ণগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত নদী বাঁধ মেরামতের কাজ পরিদর্শনে আসেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম চন্দ্র হাজরা। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। বিক্ষোভের ঘটনায় এক সময় তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। 
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, নামখানার নারায়ণগঞ্জে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর প্রায় ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় রয়েছে নদী বাঁধ। বুধবার থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। পলিথিন ব্যাগে মাটি ভর্তি করে বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। বাঁধ মেরামতের এই কাজ চলাকালীন বুধবার জোয়ারের সময় আচমকা বাঁধে ধস নামলে জেসিবি মেশিন নদী গর্ভে পড়ে যায়। জেসিবি মেশিনের চালক কোন রকমে প্রাণে বাঁচেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এদিন ঘটনাস্থলে আসেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। তাঁকে দেখে ক্ষোভ উগড়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মাটি দিয়ে আটকানো হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে লোনা জল ঢুকে একশো বিঘা জমি তলিয়ে যেতে পারে। ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতি হবে। নদী বাঁধ ভাঙনে এই আতঙ্ক আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের কথায়, বাঁধ মেরামতের কাজ ঠিক মতো করা হয় না। সেচ দপ্তরের ঠিকাদার টেন্ডার গোপন রেখে কাজ করে। গুণগত মানের কাজ হয় না। এর আগে ৬ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এবারে শোনা যাচ্ছে ২০০ মিটার বাঁধ মেরামতের জন্য ৭ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। কাজ সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক ভাবে করা হচ্ছে না। এদিন স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভের জেরে বাঁধ নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরাও কাজ করতে নারাজ হন। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগে বহুবার বাঁধ মেরামতের কাজ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। অথচ কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাস্তু ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা কার্যত লুট হয়। বাঁধে মাটি ফেলা হয়। কোটালের জলে ধসে আবার বাঁধ ভাঙে। ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। ফসলের ক্ষতি হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী মহিলারাও এদিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাঁধ মেরামতের জন্য কোন জমি দেব না। কাজ ঠিক মতো না হলে আবার বিক্ষোভ দেখাবো। তাঁরা বলেন, সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দপ্তর হচ্ছে রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তর। চোখ থাকতেও যেনো সব অন্ধ সেজে থাকে দপ্তরের কর্মী থেকে একদম উপরতলার আধিকারিকরা। কোটি কোটি টাকার কি কাজ করা হয় কেউ যেনো দেখবার নেই। নির্বিচারে বাঁধ মেরামতের নামে চুরি, দুর্নীতি চলছে। টেন্ডার গোপন করে কাজ করা হয়। ঠিকাদাররাও কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। মন্ত্রীকে জানিয়েও কোন লাভ হয় না। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, টেন্ডারের বরাদ্দ টাকার চার আনা টাকারও যদি কাজ ঠিকমতো করা হোত তাহলে সুন্দরবনের মানুষদের আতঙ্ক আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাতে হোত না। তাঁরা কংক্রীটের বাঁধ তৈরির দাবি জানিয়ে বলেছেন, কত টাকার টেন্ডার, কি কাজ, কোন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছে সবটাই প্রকাশ্যে মানুষকে জানানো প্রয়োজন। তারপর মানুষ সেই ঠিকাদারের থেকে কাজ বুঝে নেবে। তাহলে বাঁধ মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকালুট বন্ধ হবে। 
এদিন স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনায় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক। এই এলাকার কোন জন প্রতিনিধিআসেনি। আমি প্রথম এসেছি। মানুষের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে। আমি তাঁদের হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেছি। একটু সময় চেয়েছি। তিনি বলেন, নামখানার নারায়ণগঞ্জে নদী ভাঙন মেরামতে সরকারি কাজ চলছিল। ঠিকাদারের জেসিবি মেশিন নদীগর্ভে চলে যায়। চালক কোনরকমে প্রাণে বেঁচেছেন। সেচ দপ্তরের মৌশুনি ডিভিশনের এসডিওকে বলেছি। এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার ঘটনাস্থলে আসেন। এখানকার নদী ভাঙনের সমস্যার বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হচ্ছে।  

Comments :0

Login to leave a comment