EDITORIAL BHAGWAT

ভাগবত গোয়েন্দা

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

মণিপুরে অশান্তি বন্ধে ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতার দায় এড়াতে প্রধানমন্ত্রী যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটবাজারে তাঁকে রক্ষা করতে আসরে নেমেছেন স্বয়ং আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। গত প্রায় ছ’মাস ধরে চলতে থাকা গোষ্ঠী সংঘর্ষ তথা জাতি দাঙ্গায় রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত গোটা মণিপুর। ইতিমধ্যে নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক। আহতের সংখ্যার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। ভিটেমাটি হারিয়ে শরণার্থী হয়েছেন প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি। অথচ এহেন মণিপুর নিয়ে বিস্ময়করভাবে নীরব প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের প্রবল চাপের মুখে একবার পাঁচ মিনিটের জন্য দু’-চার কথা বলতে বাধ্য হলেও মণিপুরে না যাবার ধনুভঙ্গ পণ করে আজও বসে আছেন। গোড়ায় তিনদিনের সফরে মণিপুরে গিয়ে অমিত শাহ সমাধানের পথ বাতলে এসেছেন। তারপর আর মণিপুর মুখো হননি। তার দেওয়া সমাধানসূত্রে অশ্বডিম্ব ছাড়া কিছুই মেলেনি।
প্রধানমন্ত্রীর অতিপ্রিয় ডাবল ইঞ্জিনের সরকার রয়েছে মণিপুরে। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। অথচ সংঘর্ষ বন্ধ করে শান্তি ফেরানোর ন্যূনতম যোগ্যতা বা সামর্থ্য নেই এই সরকারের। ডাবল ইঞ্জিন হোক বা সিঙ্গল, এমন অপদার্থ সরকার দে‍‌শের ইতিহাসে বিরল। বিবদমান দুই গোষ্ঠী সহ রাজ্যের মানুষ এবং দেশের বিরোধী শক্তি বারবার বলে আসছে এমন অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রীকে এখনই বরখাস্ত করা হোক। কিন্তু মোদী-শাহরা বীরেনের প্রতি এতটাই অনুরক্ত যে বীরেনকে বাদ দিয়ে মণিপুরে কোনও সরকারের কথা তারা ভাবতেই পারেন না। অমিত শাহ সংসদে জানিয়ে দিয়েছেন বীরেন যেহেতু কেন্দ্রের নির্দেশ মতো কাজ করছেন তাই তাঁকে অপসারণের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। অর্থাৎ এক অপদার্থ সরকারের জমানায় মণিপুর যেমন চলছে তেমনই চলবে। জাতি দাঙ্গা চলছে চলুক।
তাহলে ধরে নেওয়া যায় শাহ স্বীকার করে নিচ্ছেন বীরেনের অপদার্থতার দায় আসলে মোদী-শাহর। কারণ তাদের নির্দেশেই বীরেন ওঠেন আর বসেন। মণিপুরে বীরেনকে সামনে রেখে মোদী-শাহর ব্যর্থতার এই আবহে ভোট হতে চলেছে পাঁচ রাজ্যে। তার কয়েক মাস পরই লোকসভা ভোট। মণিপুরের এই ব্যর্থতার আঁচ যাতে আসন্ন ভোটে না পড়ে তাই হাওয়া ঘোরাতে আসরে নেমেছেন ভাগবত। মণিপুরে যাবতীয় ব্যর্থতা-অপদার্থতার দায় মোদী-শাহর ঘাড় থেকে সরিয়ে তিনি তাক করেছেন বিদেশি শক্তির দিকে। বিদেশি শক্তিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুবই সহজ। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। ডাবল ইঞ্জিনের প্রধান মুখ মোদীকে যেমন বাঁচানো যাবে তেমনি জাতীয়তাবাদের আবেগ ছড়ানো যাবে। কিন্তু ভাগবত এটা ভেবে দেখেননি বিদে‍‌শি শক্তিকে টার্গেট করতে গিয়ে সেটা মোদী সরকারের দিকেই বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে। ছ’মাস ধরে যেখানে অশান্তির আগুন জ্বলছে সেখানে বিদেশি শক্তির হাত প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা খুঁজে পেলেন না কেন? ভাগবত কীভাবে  জানলেন? ভাগবত জানেন, সরকার জানে না ব্যাপারটা ছেলে ভোলানো গল্প মনে হচ্ছে না? রাজ্য সরকারের পুলিশ, গোয়েন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা, প্রতিরক্ষা দপ্তরের গোয়েন্দারা কি ছ’মাস ধরে ঘোড়ার ঘাস কাটছিলেন। তারা কিছুই জানতে পারেননি অথচ ভাগবত সব জেনে বসে আছেন। যদি ভাগবতের কথা সত্য হয় তাহলে তো এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment