Fake ballot

বাধ্য হয়েই ভুয়ো ব্যালট নিয়ে নির্দেশিকা কমিশনের

রাজ্য

ভুয়ো ব্যালটের অভিযোগের পর শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হলো রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে সব জেলা শাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে নির্দেশকা। তাতেই ভুয়ো ব্যালট ঠেকাতে কমিশন বেশ কিছু নির্দেশের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে জেলা আধিকারিকদের।
এদিন কমিশনের তরফে জেলা শাসকদের কাছে লিখিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চিহ্ন করতে হবে ছাপানোর সমস্ত বিষয়কে। একইসঙ্গে কোনও ব্যালট পেপার ভুল ছাপানো হলে তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। এরপর আইন অনুযায়ী যে বাড়তি ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা, তা ছাপার পর তা খামে মুড়ে সিল করা ট্রাঙ্কে রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহকুমা শাসকদের। বাড়তি ব্যালট পেপার নষ্ট করার আগে পর্যন্ত এই দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে এসডিও’দের ওপর রাখা হয়েছে। 
বৃহস্পতিবার গণশক্তি পত্রিকাতেই ভুয়ো ব্যালট পেপার ছাপানো সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এমনকি এইরকম ব্যালট ছাপানোর দায়িত্ব অস্বীকার করায় পুরুলিয়া জেলার দুই আধিকারিককে জেলা থেকে বদলি করে নবান্নে আনা হয়। খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এদিন তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে জেলা শাসকদের  রিটার্নিং অফিসারদের জন্য যে হ্যান্ডবুক কমিশনের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে তার ৩০ পাতার ১০৫ নং প্যারা উল্লেখ করে এই ব্যালট পেপার সংরক্ষণ নিয়ে আধিকারিকরা যাতে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করেন তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিশনের তরফে এই নির্দেশিকা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। 
এদিকে যত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই ৮ জুলাই ভোট গ্রহণের পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফায় ২২ কোম্পানি ও পরবর্তী পর্যায়ে ৩১৫ কোম্পানি, এই ৩৩৭ কোম্পানি বাহিনী পাওয়া যাবে ধরেই ভোটের পথে এগচ্ছে কমিশন। বাকি ৪৮৫ কোম্পানি বাহিনী আর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। ৩৩৭ কোম্পানি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছাড়পত্র পাওয়ার পর হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আরও ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন্দ্রের কাছে চেয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই নিয়ে চার-পাঁচবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠিও দেয় কমিশন। কিন্তু ওই ৪৮৫ কোম্পানি নিয়ে এদিন পর্যন্ত কোনও উচ্চবাচ্য করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যেহেতু ভোটের আর এক সপ্তাহ বাকি, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচারও শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে ওই সংখ্যক বাহিনী আর পাওয়া যাবে না। তাই যা পাওয়া যাচ্ছে অর্থাৎ ৩৩৭ কোম্পানি, সেটা নিয়েই হিসাব নিকাশ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং বাহিনীর নোডাল এজেন্সি বিএসএফ।
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং ২২ জেলায় স্পর্শকাতর এলাকাগুলি নিয়ে এদিন কমিশনে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন বিএসএফ-এর আইজি এস সি বুদাকুটি, রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার সশস্ত্র বাহিনীর আইজি রাজেশ যাদব এবং ডিআইজি (আইন-শৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিন্‌হা এবং কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শান্ডিল্য ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের নির্দেশ, এই মুহূর্তে বাহিনীর মূল কাজ হবে নাকা চেকিং, এরিয়া ডমিনেশন, ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক এবং আন্তঃরাজ্য চেকিং পয়েন্টগুলিতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
এখনও পর্যন্ত বাহিনী মোতায়েনের যে রূপরেখা তৈরি হয়েছে তাতে মুর্শিদাবাদে ৫৪৩৮টি বুথের জন্য সবচেয়ে বেশি বাহিনী দেওয়া হয়েছে। ওই জেলায় মোতায়েন করা হচ্ছে ২৬ কোম্পানি। রাজ্যের সবচেয়ে বড় জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলায় বুথ সংখ্যা ৬২২৬টি। এই জেলার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১৮ কোম্পানি। ডায়মন্ডহারবার, ক্যানিং, ভাঙড়ের মতো অতি স্পর্শকাতর এলাকা এই জেলাতেই রয়েছে। বুথের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলায় ৪৫৩২টি বুথ। এখানে ২২ কোম্পানি দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, জেলায় বুথ রয়েছে ৪১২৮টি। এই জেলায় দেওয়া হয়েছে ১৮ কোম্পানি বাহিনী। বুথের সংখ্যার হিসাবে নবম স্থানে রয়েছে বাঁকুড়া। ৩১০০ বুথ রয়েছে বাঁকুড়তে। বাহিনী দেওয়া হয়েছে ২৪ কোম্পানি। এ পর্যন্ত যা বাহিনী পাওয়া গেছে এবং তার ভিত্তিতে ২২ জেলায় বাহিনী মোতায়েনের যে তালিকা প্রস্তুত করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাতে কোনোভাবেই বুথে বুথে বাহিনী রেখে নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে বুথে নিরাপত্তার দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে রাজ্য পুলিশের হাতেই যাচ্ছে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
এদিকে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাত জেলায় ১৫৬৬টি বুথকে ‘পিঙ্ক বুথ’ ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কেবলমাত্র মহিলারা এই বুথগুলিতে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন। সবচেয়ে বেশি পিঙ্কবুথ থাকছে মুর্শিদাবাদে, ৫৪০টি। হুগলীতে থাকছে ২১০টি, পূর্ব বর্ধমানে থাকবে ২১৬টি, নদীয়াতে ১৫৪টি, বীরভূমে ১৯০টি, মালদহে ১২৩টি এবং আলিপুরদুয়ারে ১২৬টি পিঙ্কবুথ থাকছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment