Editorial

স্বেচ্ছাচার ঠেকাতে সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাজ্য বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে রাজ্যপালের স্বাক্ষর সংক্রান্ত প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স মামলায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ যে রায় দিয়েছে তা আদতে যতটা না রায় তার চেয়ে অনেক বেশি পরামর্শমূলক মতামত। তাতে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের কোনও স্পষ্ট নির্দেশ নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই রায় হতাশাব্যঞ্জক ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজ্যপাল বনাম রাজ্য বিধানসভার বিরোধকে কেন্দ্র করে তামিলনাডুতে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার মীমাংসার দায়িত্ব বর্তেছে সর্বোচ্চ আদালতের উপর। কিন্তু সেখানে স্পষ্ট কোনও দিশা মেলেনি।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি’র সরকার। আর তামিলনাডুতে বিরোধী ডিএমকে-র সরকার। রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকার যাদের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করে তারা কখনই নিরপেক্ষ বা অরাজনৈতিক ব্যক্তি নন। বরং বেছে বেছে কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতা বা অনুগত কোনও আমলাকে রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হয় যাতে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। বিশেষ করে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে জাঁদরেল ও কঠোর ব্যক্তিদের রাজ্যপাল করে পাঠানো হয় যাতে বিরোধীদের রাজ্য সরকারকে নাজেহাল করে ছাড়তে পারে। রাজ্যপাল একটি অরাজনৈতিক সাংবিধানিক পদ। তার সাথে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক থাকার কথা নয়। রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকার নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থাকেই শক্তিশালী করবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে রাজ্যপালরা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রতিনিধি হয়ে বিরোধী সরকারকে বেকায়দায় ফেলা ও অপদস্থ করতে ব্যস্ত থাকেন। এমন কি কেন্দ্রীয় শাসক দলের এজেন্ট হিসাবে কাজ করতে গিয়ে সংবিধানের অমর্যাদা করতে পিছ পা হন না। এটা কোনও অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়।
তামিলনাডুতে এমনটাই ঘটেছিল। বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে তাই রাজ্যপাল সেই বিল অনুমোদন না দিয়ে বা ফেরত না পাঠিয়ে মাসের পর মাস ফেলে রেখেছে। অর্থাৎ একটা রাজ্যের নির্বাচিত আইনসভায় পাশ করা বিলকে কেন্দ্র নিযুক্ত রাজ্যপাল অস্বীকার করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর এটা চরম আঘাত। অনির্বাচিত রাজ্যপাল নির্বাচিত সরকারকে তোয়াক্কা করছে না। স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা নিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এরাজ্যের সরকার মোদী সরকারের বিরাগভাজন হবার ভয়ে মামলার পথে যায়নি। কিন্তু তামিলনাডু গেছে। সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতি কোনও বিল অনন্তকাল আটকে রাখতে পারেন না। কিন্তু নির্দিষ্ট করে এমন‍‌ কিছু বলেনি বা নির্দেশ দেয়নি যাতে রাজ্যপালের উপর সাংবিধানিক নিয়ন্ত্রণ বলবৎ হতে পারে, তারা স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন। একটা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত সরকারের উপর মনোনীত রাজ্যপালের স্বেচ্ছাচারী কর্তৃক আর যাই হোক সংসদীয় গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় চলতে পারে না। এটা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে স্বৈরাচারকে বা একদলীয় স্বেচ্ছাচারকে মদত জোগায়। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment