Cpim challenged bjp in Tripura

সাহস থাকলে ত্রিপুরায় নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয়

ত্রিপুরায় গণতন্ত্রের কেমন নমুনা চলছে জি-২০ দেশের নেতাদের দেখিয়ে নিয়ে যান। ত্রিপুরা সফর করে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে এই পরামর্শ দিয়েছেন বৃন্দা কারাত। নরেন্দ্র মোদীর দলের প্রদেশ সভাপতির নেতৃত্বে সিপিআই(এম) অফিসে হামলা হয়, এটা কেমন গণতন্ত্রের মডেল? প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তিনি। সোমবার আগরতলায় এক মহিলা সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কথা বলেন বৃন্দা কারাত। ওই সভাতেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে রাজ্যে নৈরাজ্যের অবসান ঘটাতে মহিলাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান মানিক সরকার। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সাহস থাকলে ত্রিপুরায় নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিন। 
ত্রিপুরায় বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে বিরোধী দলের উপর রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরাম নেই। গত ৩০ নভেম্বর চড়িলামে সিপিআই (এম)’র ডাকে ব্লক ডেপুটেশনে শাসক দলের দুর্বৃত্তরা চড়াও হয় এবং ৭৬ বছরের বৃদ্ধ বাম সমর্থককে পিটিয়ে খুন করে। খুনের ক’দিন পর স্থানীয় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত ও পুলিশের ভাষায় ‘ফেরার’ আসামী মন্ত্রীদের সঙ্গে মঞ্চে ‘সম্মানিত অতিথি’র আসনে বসার আমন্ত্রণ পায়। বামপন্থী কর্মীদের উপর শারীরিক আক্রমণ যেমন হচ্ছে তেমনি তাদের জীবিকা, বসত ঘর-ভিটির উপরও আক্রমণ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের হাজারো ঘটনার ক্ষত ত্রিপুরার প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। শাসক দলের সন্ত্রাস ভেদ করে সোমবার আগরতলায় রবীন্দ্র ভবনের সামনে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির দৃপ্ত জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে গত পাঁচ বছরে শাসক দলের হিংস্রতা মনে করিয়ে দেন বৃন্দা কারাত।
বৃন্দা কারাত বলেন, বিজেপি সরকার মুখে বলছে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে। আসলে অমৃতের নামে ছড়াচ্ছে বিষ। এদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি স্বাধীনতা আন্দোলনেরই ফসল। সংবিধান থেকে এই ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটাই ছেঁটে ফেলতে সবরকমের চেষ্টা চলছে। ত্রিপুরা সফরে এসে উপজাতিদের নিয়ে মায়াকান্না করে গেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এই প্রসঙ্গে বৃন্দা কারাত বলেন, যে সপ্তাহে দৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হলেন সেই সপ্তাহেই বনাধিকার আইনে সংশোধন করে গ্রামসভার অধিকার শেষ করেছে মোদী সরকার। দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে সম্মান করি কিন্তু তাকে সামনে রেখে কবজের মতো তার পদকে ব্যবহার করতে চাইছে বিজেপি। আদিবাসীদের বনের উপর অধিকারে সবচেয়ে বড় আক্রমণ করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এসব নিয়ে রাজ্যে বিজেপি’র জোট শরিক আইপিএফটি চুপ কেন? বিজেপি শাসনে রাজ্যে মহিলাদের অবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, অক্টোবর মাসে ১০ দিনে ৫টি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৪ জন নাবালিকা। অভিযুক্তদের মধ্যে কোথাও বিজেপি দলের পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির নেতা, কোথাও মন্ত্রীর ছেলের নাম জড়িয়ে আছে। গত ২বছরে ৪০০ মহিলার ধর্ষণ, ২হাজারের বেশি মহিলাদের উপর অপরাধ হয়েছে। 
সমাবেশে মানিক সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী রবিবার ভাষণে যে সাফল্যের ফিরিস্তি শুনিয়ে গেছেন, তা শুনে ত্রিপুরার মানুষ সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবেন ভাবলে ভুল করছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার দল। ঘরে ঘরে মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের জবাব দিতে। মহিলাদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে মানিক সরকার বলেন, সামনের লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। গণতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরে নতুন ত্রিপুরা গড়ে তুলুন। প্রধানমন্ত্রী রবিবারের সভা থেকে অভিযোগ করেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ত্রিপুরার রেশন ব্যবস্থা ভালো ছিল না, এখন উন্নত হয়েছে। মহিলাদের কাছেই প্রশ্ন রেখে মানিক সরকার বলেন, বামফ্রন্ট সরকার ভরতুকি দিয়ে রেশনের মাধ্যমে সস্তায় তেল, ডাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। এখন আপনাদের কী অভিজ্ঞতা? মা-বোনেরাই সবথেকে ভালো বলতে পারবেন। মানিক সরকার বলেন, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের গরিব মানুষের ঘরের জন্য যে আবাস যোজনা তৈরি করা হয়েছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার আসার পরেই তা বন্ধ করে রাখা হয়। মানিক সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি জানেন রাজ্যে মা-বোনদের উপর অপরাধ কিভাবে বেড়ে চলেছে? প্রায় প্রতিদিন রাস্তায় লাশ মিলছে। তিনি মহিলাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করুন। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে বড় লড়াইয়ের ময়দানে টেনে আনুন। 
 

Comments :0

Login to leave a comment