শঙ্কর ঘোষাল-দেওয়ানদিঘি
দেওয়ানদিঘির মোড়ে সাত শহীদের স্মৃতিতে গড়া বেদীতে মালা দিয়ে শুক্রবার শুরু হয়েছে ডিওয়াইএফআই’র ইনসাফ যাত্রা।
২০১২ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি এই দেওয়ানদিঘিতেই খুন করা হয় প্রাক্তন যুব নেতা ও গণআন্দোলনের নেতা কমরেড প্রদীপ তা এবং কমল গায়েনকে। পুলিশের সামনেই সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাঁদের। সেই হত্যাকান্ডের ইনসাফ মেলেনি এখনও। খুনীরা তৃণমূলের দুষ্কৃতী। তাই শাসকদল ও পুলিশের বদান্যতায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
সেই হত্যাকাণ্ডের ইনসাফ যেমন চাইছে এই পদযাত্রা তেমনই এই অঞ্চলেই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে জমি, মজুরির লড়াই ও শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির জন্য শাসকের হাতে খুন হন আরও ৫ জন। তাঁরা হলেন কমরেড স্বদেশ সামন্ত, স্বাধীন সামন্ত, ভক্তি পোড়েল, জিতেন হাজরা ও যশ মাল। এই সাত শহীদের লড়াই আন্দোলনকে স্যালুট জানিয়ে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান দুই প্রাক্তন যুবনেতা, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চোধুরী। শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) নেতা অমল হালদার, পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন, অরিন্দম কোঙার, সুদীপ সেনগুপ্ত, অপূর্ব চ্যাটার্জি সহ নেতৃবৃন্দ।
শ্রদ্ধা জানান ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সভাপতি ধ্রুব জ্যোতি সাহা প্রমুখ। এদিন শহীদ কমরেড প্রদীপ তা’র বাড়িতেও যান প্রাক্তন মহম্মদ সেলিম, আভাস রায়চৌধুরী সহ নেতৃবৃন্দ। শহীদের স্ত্রী চিত্রলেখা তা ইনসাফ যাত্রা সাফল্য কামনা করে তাঁদের হাতে ৫ হাজার টাকা চেক তুলে দেন। ছিলেন শহীদকন্যা পৃথা তাও।
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, ‘‘ ইডি, সিবিআই হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েকটি চোরকে ধরেছে। তাতেই মুখ্যমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখনও কালীঘাটে ঢোকেনি, পিসি-ভাইপোকে ধরেনি। গোটা পরিবারের সব সম্পত্তির হিসাব চাইছেন মানুষ।’’
সেলিম বলেন, ‘‘সিপিআই(এম)’র নামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কমিশন তৈরি করেছিলেন। ফল হয়নি। কোনও ইডি সিবিআই চমকাতে পারেনি। সত্যের পথে থাকলে এটাই পুরস্কার।’’
শুক্রবার ভাতার থেকেই পদযাত্রীরা মিলিত হন পালিতপুর মোড়ে। সেখানে সভায় সেলিম বলেছেন, ‘‘মুখে বদলা নয়, বদলের ডাক দিয়ে ক্ষমতায় এসে তৃণমূল খুন করে কমরেড প্রদীপ তা ও কমরেড কমল গায়েনকে। শিল্প, জমির আন্দোলন, মজুরি আন্দোলন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের আন্দোলন গড়ে তুললেই খুন করেছে তৃণমূল। ওরা চাইছে বাংলাকে ধ্বংস করতে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘কলকাতার রাস্তায় চাকরির জন্য লড়াই করছেন যোগ্য চাকরীপ্রার্থীরা। চাকরি পিসি, ভাইপো নিলাম করেছে। রেশনের চাল, আটা, আইসিডিএস’র ছেলে-মেয়েদের পুষ্টিও লুট হয়েছে। গোটা রাজ্যকে লুটে খাচ্ছে এই বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ইনসাফ চেয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে রাজ্যের মানুষ।’’
সেলিম বলেছেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই মানুষকে ভাগ করে মোদী, দিদি লুট করতে চায়। নদী, খনি, ব্যাঙ্ক, বিক্রি করছে মোদী। আর দিদি বালি, লোহা, পাথর বিক্রি করছে। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত থেকেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মন্দির, মসজিদ করা সরকারের কাজ নয়। সরকারকে রাস্তা, শিল্প, স্কুল, কলেজ, খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক উসকানি শুধু মন্দির, মসজিদ নিয়ে হচ্ছে না। মণিপুর, উত্তরবঙ্গে জাতিস্বত্বার নামেও মানুষকে ভাগ করছে শাসকদল। রামমন্দির করছেন মোদী। আর দিদি দীঘা মায়াপুরে মন্দির বানাচ্ছেন!’’
Comments :0