DEAD PENGUIN URUGUAY

মেলেনি খাদ্য, উরুগুয়ের তটে মৃত পেঙ্গুইনের সারি

আন্তর্জাতিক

DEAD PENGUIN URUGUAY ছবি সোশাল মিডিয়া থেকে।

আটলান্টিকের তটে মিলছে মৃত পেঙ্গুইনের সারি। গত দশ দিনে অন্তত ২ হাজার পেঙ্গুইন মৃত অবস্থায় ভেসে এসেছে উরুগুয়ের তটে। রাজধানী মন্টেভিডিও’তে দেশের পরিবেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, মৃত পেঙ্গুইনের বেশিরভাগই কমবয়সী। 

গত বছর ব্রাজিলে এমন ছবি দেখা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শীতের মুখে উষ্ণ জল এবং খাদ্যের জন্য দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তরের তটে যাওয়ার চেষ্টা করে এই ম্যাজেলেনিক পেঙ্গুইন। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের তটে গিয়ে ওঠে। 

কেন মৃত্যু সারি সারি পেঙ্গুইনের?

উরুগুয়ের পরিবেশ মন্ত্রকের জলসম্পদ বিভাগের প্রধান কারমেন লেইজাগোয়েন যা বলেছেন, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে পরিবেশবিদদের। লেইজাগোয়েন জানিয়েছেন, ‘‘প্রতিটি পেঙ্গুইনের পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা পাওয়া যায়নি। যে রোগে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি মারা যেতে পারে। দেখা গিয়েছে পাখিগুলোর শরীরে স্নেহ পদার্থের সঞ্চয় আস্তরণ প্রায় নেই। পাকস্থলী প্রায় শূন্য।’’

উরুগুয়ের পরিবেশ মন্ত্রকের দৃঢ় অনুমান, দীর্ঘ যাত্রাপথে খাবার না পেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পেঙ্গুইন মারা যাচ্ছে। 

পরিবেশ আন্দোলনে জড়িত গোষ্ঠী ‘ফওনা মারিনা’-র পরিবেশবিদ রিচার্ড টেসোর জানাচ্ছেন আটলান্টিকে সঙ্কট দীর্ঘদিনের। তিনি বলেছেন, ‘‘উষ্ণতার খোঁজে ম্যাজেলেনিক পেঙ্গুইনের ঝাঁক আশ্রয় নেয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশে দেশে। গত বছর ব্রাজিলের এসপিরিটো স্যান্টো তটে পাওয়া গিয়েছিল মৃত বহু পেঙ্গুইন। এত পথ সমুদ্রে সাঁতারে আসতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। সমুদ্রপথেই খাবার পাওয়ার কথা।’’

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রে খাবার মিলছে না। অস্বাভাবিক ক্লান্তিতে সমুদ্রেই মরে যাচ্ছে পেঙ্গুইন। সেই কারণেই দেহে স্নেহ পদার্থের স্তর নেই। পেট একেবারে খালি।  না’হলে সমুদ্রযাত্রার ধকলে বেশি বয়সের পেঙ্গুইন মারা যেতে পারে, কিন্তু একসঙ্গে তরতাজা কম বয়সের পেঙ্গুইন মারা যেত না।’’ 

অ্যাটলান্টিকের মতো বিভিন্ন মহাসাগরে গবেষণারত পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। তার অন্যতম কারণ সমুদ্রে, মহাসাগরে চলছে বেপরোয়া মাছ ধরা। আইনি বা বেআইনি, যন্ত্রচালিত নৌকা থেকে বড় জাহাজ, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরছে। এরা অনেকে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করে। পেঙ্গুইনের মতো অনেক প্রাণীই খাবার পাচ্ছে না। 

এই বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে কেবল পেঙ্গুইন ঝাঁকে ঝাঁকে মারা যাচ্ছে তা নয়। কচ্ছপ বা আলবাট্রসের মতো প্রাণী, যারা দীর্ঘ পথ যাত্রা করে সামুদ্রিক খাদ্যের ভরসায়, বড় সংখ্যায় মারা যাচ্ছে তারাও। ব্যবসায়িক মুনাফার লোভে সমুদ্র ফাঁকা। মরছে অগুনতি প্রাণী। 

ভারতে সাধারণ মৎস্যজীবীরা গত কয়েক বছর ধরে এমনই আশঙ্কা জানাচ্ছেন। তাঁদের আশঙ্কা কেন্দ্রের ‘সাগরমালা’ প্রকল্প ঘিরে। তাঁরা বলছেন, একের পর এক বন্দর বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সমুদ্রে কর্পোরেট মাছ চাষ চলছে। ছোট মৎস্যজীবীরা জীবিকা হারাচ্ছেন। শুকিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র। নষ্ট হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র।  

Comments :0

Login to leave a comment