Parakala Prabhakar

একনায়কের পতন হাতকড়া, কফিনে, ফের বোমা প্রভাকরের

জাতীয়

 ‘একনায়কের পতন ঘটে হাতকড়ায় কিংবা কফিনে।’ ভোটের ফল বেরনোর পর নরেন্দ্র মোদীর কী হাল হবে প্রশ্নের জবাবে কোনও নাম মুখে না এনে গোটা বিশ্বের ইতিহাসের পরম্পরা উল্লেখ করে একথাই বললেন অর্থনীতিবিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক পারাকালা প্রভাকর। তিনি এও জানিয়ে দিলেন, ২০২৪ সালে খুব বেশি করে ধরলে বিজেপি জোট ২৫৫-র আশেপাশে আসন পেতে পারে।
বেশ কয়েকদিন যাবৎ সাক্ষাৎকার, লেখায় কিংবা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসাবে বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী পারাকালা প্রভাকর কেন্দ্রের মোদী সরকারকে নানা প্রশ্নে তুলোধনা করে চলেছেন। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে বোমা ফাটানোর পর তিনি কোনও রাখঢাক না রেখেই আগে বলেছিলেন, ‘ভোটে জিতে নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হলে দেশে আর নির্বাচনই  হবে না। সংবিধান বদলে দেওয়া হবে।’ এবার নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়ার’-এ করণ থাপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জোর গলায় বলে দিলেন, ‘জুন মাসে দেশবাসী অ-বিজেপি, অ-এনডিএ সরকার দেখবে। এবারের ভোটে মানুষের কাছে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে মোদী সরকার।’ রাজ্য ধরে ধরে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কোথায় কটা আসন এবার হারাতে চলেছে বিজেপি। এমনকি বিজেপি’র পক্ষে ভোটের হারও এক ধাক্কায় ১৩-১৪ শতাংশ নেমে যাবে বলে জানান প্রভাকর।
তবে মোদী সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে সর্বত্র। দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র মোদী বিরোধী হিসাবে পরিচিত প্রভাকর ‘বিজেপি হারলে মোদীর কী হবে’ প্রশ্নের জবাবে সরাসরি নাম না নিয়েই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন, ‘‘অত্যন্ত জটিল একটা প্রশ্ন। তবে বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, একনায়কদের পতন ঘটে হাতকড়ায় কিংবা কফিনে।’’ নিজের বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি হিসাবে তিনি স্বৈরাচারি প্রশাসনের বিপদের ওপরেই জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে, একই সঙ্গে বিরোধী স্বর বা ভাষ্যকে দমিয়ে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের কৌশল মোটেই টেকসই হয় না।’’
বিজেপি কিংবা এনডিএ কত আসন পাবে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রাথমিকভাবে যে তথ্য দেন তার সঙ্গে রাজ্যওয়াড়ি বিশ্লেষণের ফারাক রয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি একভাবে ২২০, খুব বেশি হলে ২৩০ আসন পেতে পারে। ২২০-র কমও হতে পারে। আর শরিকরা বড়জোর ৩৫ আসন পাবে।’’ তাঁর হিসাবে দাঁড়াচ্ছে, এনডিএ’র আসন সংখ্যা ২৫৫ কিংবা খুব বেশি ২৬৫ হতে পারে। তবে যখন তিনি উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত ধরে হিসাব দিতে থাকেন তখন দেখা যায় বিজেপি’র ঝুলিতে ২০১-২০২ আসন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে শরিকদের আসন ধরলেও এনডিএ’র ২৩৬-২৩৭ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। অর্থাৎ ‘ম্যাজিক সংখ্যা’ ২৭২-র তুলনায় অনেকটাই কম। একারণেই প্রভাকর জোর গলায় জানিয়ে দিলেন, জুনে নতুন সরকারই দেখবে ভারতবাসী।
মোদী সরকারের কী কারণে পতন ঘটবে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বহু বিষয় টেনে আনেন প্রভাকর। তিনি জানান, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থ মোদী সরকার। অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্বের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক মেরুকরণের চেষ্টা ঘটানো হয়েছে। এপ্রসঙ্গে তিনি সমাজের বিভিন্ন অংশের অসন্তোষ, ক্ষোভের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কৃষক, যুব সম্প্রদায়, মহিলা এবং অবশ্যই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষোভ বেড়েছে। এই ক্ষোভ, অসন্তোষ শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আছড়ে পড়ার ইঙ্গিত বহন করছে।’’ তাঁর বক্তব্য ‘‘উলটে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের নীতির ওপরেই বেশি ভরসা করেছে। স্বল্প মেয়াদে ভোটের এর লভ্যাংশ পাওয়া গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের ক্ষতি করে দেয়।’’ গণতান্ত্রিক রীতি এবং প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত অবক্ষয় ঘটানোর ফল এবারের ভোটে পেতে পারে বিজেপি বলে মনে করছেন প্রভাকর।
ভোট শতাংশের হিসাব তুলে ধরে প্রভাকর বলেন, ‘‘আগে জনসঙ্ঘ সর্বাধিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে একসময়। জনসঙ্ঘেরই উত্তরসুরী বিজেপি ২০১৪ সালে ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল শুধুমাত্র উগ্র হিন্দুত্ব নয়, দুর্নীতি বা বেকারত্বের মতো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে। ২০১৯ সালে বালাকোট, পুলওয়ামার জেরে সেই ভোট বাড়িয়ে নিয়ে যায় ৩৭ শতাংশে।’’ এবার সেই ভোট কমে ২৩ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে যাবে মনে করছেন প্রভাকর। এই অনুপাতে আসন সংখ্যাও কমে ক্ষমতা হারাবে বিজেপি বলে জোর গলায় জানিয়ে দিলেন তিনি। কারণ বহু আশা করলেও বিজেপি-কে রামমন্দির লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ এবং উগ্র হিন্দুত্বের উসকানির উলটো পরিণতি ঘটছে বলে তাঁর ধারণা। এরই সঙ্গে তিনি মনে করেন, বিজেপি’র শরিকরা কোনওভাবেই মতাদর্শগতভাবে ওদের সঙ্গে নেই। বস্তুগতভাবে রয়েছে। ফলে বিজেপি গরিষ্ঠতা না পেলে শরিকরা কতটা থাকবে সঙ্গে থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন প্রভাকর।
 

Comments :0

Login to leave a comment