মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে যেভাবে এক কংগ্রেস নেতা আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে থানায় তুলে আনা হলো তাকে মগের মুলুক বললেও কম বলা হবে। বরং বলা ভালো রাজ্যে হিটলারের শাসন চালু হয়েছে। যে পুলিশের দায়িত্ব আইনের অনুশাসন সুরক্ষিত রাখা সেই পুলিশই সচেতনভাবে আইনকে পদদলিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। এই রাজ্যের পুলিশ এখন শুধু দলদাসত্বেই আত্মসমর্পিত নয়, রাজ্যের অনুপ্রেরণাদাত্রীর বিরুদ্ধে ন্যূনতম সমালোচনাকেও মুহূর্তে স্তব্ধ করতে এক পায়ে খাড়া। তাই সমালোচনার কথা লোকের কানে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে সমালোচনাকারীকে ধরে বেঁধে থানার লকআপে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের এই অতিতৎপরতা ও অতিসক্রিয়তা মাঠে মারা গেছে আদালতে। এইভাবে কাউকে মাঝরাতে তুলে আনার যুক্তিই খুঁজে পায়নি আদালত। তাই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জামিন মঞ্জুর হয়ে গেল।
বিগত প্রায় বারো বছর ধরে এরাজ্যের প্রশ্নাতীত দলদাসত্বে হিতাহিত জ্ঞান হারানো পুলিশ অনেক নিকৃষ্ঠ বেআইনি কাজ করেছে। প্রতিদিনই বিরোধীদের কণ্ঠ ও সক্রিয়তা বন্ধ করতে মিথ্যা মামলা সাজাচ্ছে। তিলকে তাল বানিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ মামলা সাজিয়ে সমালোচক-বিরোধীদের গ্রেপ্তার করছে। পুলিশ তাদের সাংবিধানিক কর্তব্য ভুলে উর্দির মর্যাদাহানি করে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। তা না হলে কংগ্রেস নেতাকে এভাবে গ্রেপ্তার করার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারত না। কয়েক বছর আগে বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপককে শুধুমাত্র একটা কার্টুন ফরোয়ার্ড করার অপরাধে সারা রাত লক আপে আটকে রেখেছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা একটি বই পড়ার পরামর্শ দেবার অপরাধে গন্ডা গন্ডা ধারা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হলো আইনজীবীকে।
পুলিশ জানে, অন্তত জানার কথা অভিযুক্ত যা করেছে তা কোনও অপরাধই নয়। আইনের চোখে গ্রেপ্তার করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এতদসত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতে পুলিশ অন্যায় কাজ করেছে। অবশ্য সরকারের নির্দেশ বা চাপ ছাড়া পুলিশ এতটা তৎপর হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে পুলিশকে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৃণমূল দলটা যেহেতু নেত্রী নির্ভর। নেত্রীর প্রতি আস্থা বিশ্বাসে চিড় খরলেও দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে বিতকেরর ঊর্ধ্বে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে মরীয়া প্রয়াস। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে তৃণমূলের ভিত দ্রুত আলগা হচ্ছে। পদে পদে মানুষ প্রশ্ন করছেন। দুর্নীতি আর লুটে সিংহদুয়ার খুলে যাবার পর মানুষ আসল তৃণমূল ও তার আসল নেত্রীকে চিনতে শুরু করেছেন। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফলে তার ইঙ্গিত মিলে গেছে। তাই ভয় আর আতঙ্ক গ্রাস করছে নেত্রীকে। ক্ষমতা হারানোর ভয় তাঁকে চেপে ধরছে। এই অবস্থায় তিনি সমালোচনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। প্রতিবাদ বিরোধিতা, সমালোচনা শুনলেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছেন। ভাবছেন পুলিশ লেলিয়ে সব ঠান্ডা করে দেবেন। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে তিনি টের পাচ্ছেন না মানুষের মনে তার দল ও সরকার সম্পর্কে অজস্র প্রশ্ন দানা বাঁধছে। সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। পুলিশ দিয়ে আর তাদের দমানো যাবে না।
কয়েকদিন আগে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতাকে যেভাবে আসাম থেকে পুলিশ পাঠিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোদীর সমালোচনা করা অপরাধে ঠিক একই কায়দায় মমতার সমালোচনা করার জন্য কংগ্রেস নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার পুলিশ। দুই সরকার এবং নেতা-নেত্রীর চরিত্র এক। মানসিকভাবে এরা স্বৈরতান্ত্রিক ও এক নায়কতন্ত্রী। গণতন্ত্রের মুখোশ পরে এরা বিরোধিতা ও সমালোচনাকে ক্ষমতার জোরে দমন করে আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। কিন্তু সেটা আর বেশিদিন সম্ভব নয়। শেষের সেদিন দ্রুত এগিয়ে আসছে।
Comments :0