Heavy Rain In North Bengal

ভারী বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে

রাজ্য

Heavy Rain In North Bengal


সিকিম ভুটান পাহাড়ে গত কয়েকদিন অবিরাম বৃষ্টির জল সমতলের নদীর জলস্তর বেড়ে যায় সেই সাথে পর পর দু রাত ডুয়ার্সের সর্বত্র অবিশ্রান্ত বৃষ্টির জেরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কৃষি এলাকা সহ চা বাগান বনাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিপদে পরেন লক্ষাধিক মানুষ। বানারহাট বিন্নাগুড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় জলবন্দী হয়ে পরেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সারাদিন বৃষ্টি থাকলেও বৃষ্টির গতিবেগ বেশি না থাকায় এবং পাহাড়ের জল সমতলের নদীতে না আসায় নদীগুলির জলের স্তর কমতে দেখা যায়। নদীর জল কমার সাথে সাথে  শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ রাস্তা সাঁকো সেতুর। বানারহাট বিন্নাগুড়ি এলাকার চা বাগান গুলিতে পাহাড়ি মাটির পলির আস্তরণ পড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে চা গাছের। অনেক চা গাছ জলের তোরে ভেসে গেছে। ঝার আলতা দুই নং গ্রামপঞ্চায়েতের নোনাই নদীর সেতুর মুখের রাস্তার মাটি ভেসে গিয়ে গ্রামের সাথে তিনটি বনবস্তির  যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন  হয়ে যায়। এদিন সকালে গ্রামের মানুষ নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করে নেন। ঝার আলতা ১ নং গ্রামপঞ্চায়েতের পূর্ব ডাউকিমারি গ্রামের গিলান্ডি নদীর উপর বাঁশের বিশাল সেতু ভেসে গিয়ে বিপদে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। গত পনের বছর ধরে এই গিলান্ডী নদীর উপর ব্রীজ নির্মানের দাবি করে আসছেন গ্রামের মানুষ। প্রতি বছর চাঁদা তুলে নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়ে ব্যবহার করছেন।
 


প্রবল বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে কোচবিহার জেলা জুড়ে। রীতিমতো ফুঁসছে মানসাই, তোর্ষা, রায়ডাক, কালজানি, গদাধর, সুটুঙ্গা সহ বেশ কিছু নদী। বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা কয়েক সহস্রাধিক।
এই মুহূর্তে ভয়াবহ সংকটের মুখে কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমার বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের চর বালাভূত, দক্ষিণ বালাভূত, ঝাউ কুঠি, নয়ারচর মধ্য চর প্রভৃতি এলাকা প্লাবিত। সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রায় ৫০০টি পরিবার। এলাকার মানুষেরা আশ্রয় নিতে ছুটছেন নিরাপদ স্থানে।
লাগাতার বর্ষণের জেরে নাজেহাল কোচবিহারবাসী। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নিজেদের বসতভিটে ছেড়ে দিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের। কোচবিহার শহরের ১৮নং ওয়ার্ডে তোর্ষা চর সংলগ্ন এলাকাগুলি কার্যত জলের নিচে। রাতারাতি বাড়িঘর ছেড়ে এই সমস্ত মানুষের আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ওপর। কোনক্রমে ত্রিপল টানিয়ে দিন রাত্রি যাপন করছেন তারা। ক্রমান্বয়ে জল বাড়ছে এই তোর্ষা নদীর, আর তাতেই ঘুম উড়েছে নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। জল কমলে ভাঙনের সমস্যা জর্জরিত হবে হতে হবে তাদের, এই আতঙ্কও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটানা বৃষ্টির ফলে জলমগ্ন দিনহাটা শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। শহরতলী এবং দিনহাটা ১নং ব্লকের গীতালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের সহ পাঁচটি গ্রাম ডুবে রয়েছে জলের তলায়। বাড়িঘর ছেড়ে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় বিদ্যালয় এবং নিরাপদ স্থানে।
মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের কোদালধোয়া ও সোনাতলি, খাটেরবাড়ি, হিন্দুস্তান মোড় সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত রাতের লাগাতার বর্ষণে এলাকায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। লাগাতার বৃষ্টিতে শাক সব্জি চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সব্জি চাষীরা। লাগাতার বৃষ্টিতে হাটবাজারে ক্রেতা বিক্রেতার তেমন দেখা মেলেনি।।সবমিলিয়ে বৃষ্টির জের জনজীবন বিপর্যস্ত। এব্যাপারে ব্লকের বিডিও উজ্জ্বল সর্দার জানান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

 ক্যাপশান- পূর্ব ডাউকিমারি গ্রামে গিলান্ডী নদীর সাঁকো ভেসে গেছে। ছবি সঞ্জিত দে 
 

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দার্জিলিঙ জেলাতেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে ভাসছে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল। দার্জিলিঙ, কালিম্পঙ, সিকিমেও একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে পার্বত্য জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শুক্রবার সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টিতে দার্জিলিঙের চৌরাস্তা একেবার জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। 
রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বহু এলাকা। একাধিক ওয়ার্ড এলাকায় বাড়ি ঘরে জল ঢুকে পড়েছে। শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনে ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫, ৪১, ২৩, ৪ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা অশোকনগর, মিলনপল্লী, হায়দারপাড়া, শক্তিগড়, গঙ্গানগর, সন্তোষীনগর, ডাবগ্রাম ও ফুলবাড়ির বিস্তুীর্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট সবই জলের তলায়। এইরকম জলবন্দী অবস্থায় মানুষের বাড়ি ঘরে রান্না খাওয়া সবই বন্ধ হয়ে রয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমার কৃষিক্ষেত্র ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এক হাঁটু জলের তলায় কৃষিজমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া এলাকায় বর্ষার শাক সবজি মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে দার্জিলিঙ, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় একপ্রকার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি মহানন্দা, তিস্তা, তোর্ষা, রায়ডাক, জলঢাকা নদীগুলো ফুঁসছে। অবিরাম বৃষ্টিতে ফুলবাড়ি মহানন্দা ব্যারেজে প্রবল জলচ্ছ্বাস ঘটেছে। হু হু করে জল বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ফুলবাড়ি মহানন্দা নদীর পাঁচ নম্বর লকগেট খুলে দেওয়া হয়। সেচ দপ্তরের কর্মীরা পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানান, শনিবার থেকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি চললেও বৃষ্টির তীব্রতা অনেকটাই কমার সম্ভাবনা রয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে এক দুই জায়গায় ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা থাকবে। 

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভুটানে ভারী বৃষ্টির ফলে ভারত ভুটান সীমান্তের জয়গাঁও অঞ্চলের মংলা বাড়িতে প্লাবিত হল বহু ঘরবাড়ি। পাশাপাশি ভারত ভুটান সংলগ্ন ফুনসলিং এর ধামদাড়া ও কারবেটার এলাকা সম্পূর্ণ ভাবে প্লাবিত হয়েছে রাস্তায় পড়ে থাকা গাড়ি জলে ভাসতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। 
ভুটান পাহাড়ে অনবরত বৃষ্টির জল আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাও অঞ্চলে প্রবেশ করার পর মংলা বাড়ি অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত করে নিয়ে গেছে। মংলাবাড়ি অঞ্চলের কাছে ঝর্ণা বস্তি থেকে বছর ৫০ এর স্মাইল মিয়া কে ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেছে এই বন্যার জলে গ্রামের সূত্রের এই খবর পাওয়া গেছে। 

পানা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে সাঁওতালি চা বাগান সহ মেচ বস্তি এবং পাশাপাশি বহু চা বাগান এখনও জলের তলায় রয়েছে। অপরদিকে দলসিংপাড়া যাওয়ার রাস্তায় বি-বারি সেতুর কাছে রাস্তা পুরোপুরি জলের স্রোতে উড়িয়ে নিয়ে চলে গেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে মেচ বস্তির মানুষগুলোকে উদ্ধার করার জন্য এনডিআরএফ সহ বিন্নাগুড়ি সেনা ছাউনির সেনাবাহিনী এবং হাসিমারার এয়ার ফোর্সের সৈনিকরা উদ্ধারের কাজে যুক্ত হয়ে জলমগ্ন গ্রামবাসীদের উদ্ধার করে।  মৌসম ভবন সূত্রে খবর, আগামী দুই একদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পাহাড় এবং সমতলে। 

দুদিনের অতি বৃষ্টির জেরে সমস্ত নদীতে জলস্তর বেড়ে যায়। নদীর জল ঢুকে প্লাবিত বকরে বনাঞ্চল। বন্যপ্রানীরাও বিপদে পড়ে। জলের স্রোতে ভেসে আসা জংলি শুয়োরের গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব। শুয়োরের হামলায় আহত হলেন ২ জন। ঘটনা টি ঘটেছে ধূপগুড়ি ব্লকের গধেয়ারকুঠি গ্রামপঞ্চায়েতের কুর্শামারি গ্রামে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের একজনের নাম খগেন্দ্র মন্ডল(৫০)। আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে ধূপগুড়ি হাসপাতালে। খগেন্দ্র মণ্ডলকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হলেও অপরজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে জংলি শুয়োর টি এখনো গ্রামের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের। তাই আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। খবর দেওয়া হয়েছে বিন্নাগুরি বন্যপ্রাণী স্কোয়াডের কর্মীদের। 
প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে জলঢাকা নদীর জলের স্রোতে সম্ভবত শুয়োর টি ভেসে এসেছে। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে গোটা গ্রামে।

 

Comments :0

Login to leave a comment