জানা অজানা | নতুনপাতা
শরীরসংস্থানবিদ্যার জনক
তপন কুমার বৈরাগ্য
শরীরসংস্থানবিদ্যার জনক ছিলেন আন্দ্রেঁ ভেসালিয়াস।
তিনি ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ডিসেম্বর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে
জন্মগ্রহণ করেন।তিনি প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন।
তাই তাঁকে ১৫৪২খ্রিস্টাব্দে শরীরসংস্থানবিদ্যার জনক
হিসাবে ঘোষণা করা হয়।তখন তাঁর বয়েস মাত্র ২৮বছর।
মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ না করলে আমরা মানব শরীরের খুঁটিনাটি
কোনো বিষয়ই জানতে পারবো না। তিনিই এই বিষয়ে
প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। ১৫৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্পেনের
রাজা পঞ্চম চার্লসের গৃহশিক্ষক হয়েছিলেন। অ্যানাটমি
বিদ্যার জনক আন্দ্রেঁ ভেসালিয়াসের মৃত্যু আমাদের জীবনে
এক প্রশ্ন চিহ্ন রেখে গেছে। এই কাহিনী যেন এক রহস্যের
সন্ধান দেয়।
সালটা ১৫৬৪ । তখন তাঁর বয়েস৫০বছর।স্পেনের রাজার
চাকরী ছেড়ে জাহাজে করে বাড়ি ফিরছেন।অনেকদিন
ধরে মাতৃভূমি ব্রাসেলসকে তিনি দেখেন নি।জন্মভূমির জন্য
তাঁর মন উতলা।সেখানেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান।
মনে কতো স্বপ্ন।জাহাজ স্পেন থেকে এগিয়ে চলেছে
ইতালির দিকে।ভূমধ্যসাগর দিয়ে জাহাজ চলছে ।চারিদিকে শুধু জল আর জল।কয়েকদিন ধরে আকাশটা ঘন মেঘে ঢেকেছিলো। দিনচারেক পর শুরু হল প্রলয়ঙ্কর ঝড়।
ঝড় যেন থামতে চায় না।কিছুক্ষণ পর ঝড়ে জাহাজটা
তছনছ হয়ে গেল।জাহাজে যাত্রীসংখ্যা খুব কম ছিল।
তাই সেদিন অল্প লোকেরই মৃত্যু হয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে
ভেসালিয়াস বেঁচে যান।তিনি দেখতে পেলেন জাহাজ থেকে
ছিন্ন হওয়া একটা বড় ভাঙা কাঠ।শুরু করলেন তাঁর দুঃসাহসিক
অভিযান। স্থলভাগে পৌঁছানোর আপ্রাণ চেষ্টা।
তাঁকে বাঁচতেই হবে।কিন্তু কি করে বাঁচবেন? চারিদিকে জল আর
জল। প্রচন্ড ঠান্ডা জল।শরীর যেন তাঁর ঠান্ডায় জমে যেতে লাগল।
রাতদিন শুধু জলে।চোখে ঘুম নেই।খাদ্য নেই।তবু বাঁচার এক
দূরন্ত সংগ্রাম।
ভাসমান কাঠকে আঁকড়ে ধরে সাতদিন পর
অক্লান্ত সংগ্রাম করে গ্রিসের আয়োনীয় সাগরের দ্বীপ জাকিনথোসে এসে পৌঁছলেন।একেই অনাহার তার উপর এই অক্লান্ত সংগ্রাম তাঁকে জীবনের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।তিনি আস্তে আস্তে এই দ্বীপে উঠলেন।তারিখটা ছিলো ১৩ই অক্টোবর।
এই নিঃসঙ্গ দ্বীপে কেউ কোথাও নেই। শুধু উপরে খোলা আকাশ।
তিনি আশা করেছিলেন কেউ হয়তো তাঁকে উদ্ধার করবেন।
কিন্তু সব আশা নিরাশায় পরিণত হলো।এর দুদিন পর
অর্থাৎ ১৫৬৪খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর শরীরসংস্থানবিদ্যার
জনক আন্দ্রেঁ ভেসালিয়াস এই নির্জন দ্বীপে অকালে শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তখন তাঁর বয়েস মাত্র পঞ্চাশ বছর।
এই মৃত্যু আমাদের কাছে খুবই দুঃখজনক।আমরা কিন্তু আজও তাঁকে ভুলিনি। যার বাঁচার জন্য দূরন্ত সংগ্রাম আমাদের বুকে
চিরদিন সোনার আখরে লেখা থাকবে।
Comments :0