Himachal

প্রচার শেষ হিমাচলে, রাজ্যবাসীর ক্ষোভের ওপরেই ভরসা কংগ্রসের

জাতীয়

ভোটের প্রচার বৃহস্পতিবার শেষ হলো হিমাচল প্রদেশে। দুই বিবাদমান দল বিজেপি এবং কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে রাজ্যবাসীর জন্য কী কী কাজ করবে, সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেদার। বিজেপি উগ্র হিন্দুত্বের রাস্তাতেই ফের ক্ষমতায় ফেরার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে হাজারও ব্যর্থতা ঢাকতে। অন্যদিকে, কংগ্রেস পাঁচ বছর সিমলার তখতে ফেরার লক্ষ্যে পুরানো পেনশন প্রকল্প চালু করার কথা বলেছে ভোটের প্রচারে। এরই মাঝে কম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সিপিআই(এম) ক্ষমতা থেকে বিজেপি হটানোর আহ্বান জানিয়েছে সরাসরি। বলেছে, ভোটের ফলাফলে ত্রিশঙ্কু অবস্থা তৈরি হলে বামপন্থীরা অ-বিজেপি শক্তির পক্ষেই থাকবে।
রাজ্যের ৬৮টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিজেপি। রাজ্যের জয়রাম ঠাকুর সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভ চরম আকার নিয়েছে। বেকারত্ব, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, আপেল চাষের সঙ্কট, সরকারের বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা—সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া এবার জোরদার হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। তাছাড়া রাজ্য সরকার নয়া পেনশন প্রকল্প চালু করায় মানুষের ক্ষোভকে বহু গুণ উসকে দিয়েছে। সেটা আঁচ করেই বিজেপি সেই পুরানো তাস, উগ্র হিন্দুত্বের জিগির তুলেই মানুষের মন ভোলাতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’বার প্রচারে এসেছেন রাজ্যে। ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরলে গুজরাটে যেমন বলা হচ্ছে তেমনই হিমাচলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা হবে বলে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিজেপি’র শীর্ষ নেতারা। পাঁচ বছরে করতে না পারলেও এবার ক্ষমতায় এলে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে রাজ্যে বলেও গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতারা। এদিন ভোট প্রচারের শেষ বেলায় দলের হয়ে সমর্থনের ঝড় তুলতে জনসভা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। প্রধানমন্ত্রী মোদী আবার দলের হয়ে কে কোথায় দাঁড়িয়েছেন সেদিকে লক্ষ্য না করে ‘পদ্ম’ চিহ্ন দেখলেই ছাপ দেওয়ার কার্যত নির্দেশ দিয়েছেন জনসভায়। তাঁর দাবি, ‘আপনারা যেখানেই পদ্ম চিহ্ন দেখবেন, মনে করবেন বিজেপি এবং মোদীজী হাজির আছেন আপনার সামনে।’
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় ব্যস্ত থাকায় হিমাচলে প্রচারে শামিল হননি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে সম্প্রতি জনসভা করে গিয়েছেন দলে সদ্য নির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জ্জুন খারগে। তবে কংগ্রেসের হয়ে একের পর এক সভা করেছেন প্রিবাঙ্কা গান্ধী। এদিনও তিনি ভোট প্রচারের একেবারে শেষ মুহূর্তে সিরমৌরে জনসভায় বক্তৃতা দেন। রাজ্যবাসী কংগ্রেসকে পাঁচ বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরলে বেকারদের হাতে কাজ দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলের নেতারা। একই সঙ্গ এবারের ভোটে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়, সেই পেনশন প্রকল্প নিয়েও কংগ্রেস পুরানো ধাঁচ ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে রাজ্যবাসী মন পেতে। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কা এদিন বলেছেন, ‘রাজ্যে ৩০ লক্ষ যুবকের মধ্যে ১৫ লক্ষই বেকার। উলটোদিকে, হাজার হাজার সরকারি পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে।
এদিকে বুধবার সিমলায় সিপিআই(এম) প্রার্থী টিকেন্দর পানওয়ারের সমর্থনে জনসভায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিনের বুলি ফেঁসে গিয়েছে। সেই বিজেপি-কে হটানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ কিংবা কর্ণাটকে ডবল ইঞ্জিন থাকলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। দেখা গিয়েছে, দুটো ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিপরীত মুখে দৌড়াচ্ছে। পুরানো পেনশন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সংসদে যখন বিল পেশ করা হয় তখন একমাত্র বামপন্থীরাই ওই আইন প্রণয়ণ চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। তিনি হিমাচল বিধানসভায় বেশি সংখ্যক সিপিআই(এম) প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা এঁদের যত বেশি সংখ্যায় জয়ী করবেন তত এঁদের বিধানসভায় মানুষের স্বার্থবাহী কথা বলার সুযোগ বাড়বে। দেশের চরম বেকারত্বের জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, সিরিয়া, ইরাকের থেকেও ভারতে বেকারের সংখ্যা বেশি।
জনসভার আগের দিন মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি বেকারত্বের প্রসঙ্গে বলেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে দেশে আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হতো। নয়া পেনশন প্রকল্প চালু করার জন্যও তিনি বিজেপি সরকারকে শূলে চড়ান। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর মূল লক্ষ্যই হলো দেশ তথা হিমাচল প্রদেশের সমাজে মেরুকরণের চেষ্টা বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরিশেষে তিনি বলেন, ভোটের পর ত্রিশঙ্কু অবস্থা তৈরি হলে সিপিআই(এম) অ-বিজেপি দলকেই সমর্থন জানাবে।
উল্লেখ্য, রাজ্যে ৬৮টি আসনে ভোট শনিবার। ফলাফল অবশ্য গুজরাটের সঙ্গে সেই ৮ ডিসেম্বর। গতবার বিজেপি ৪৩ আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। তবে ১৯৮২ সাল থেকে হিমাচল প্রদেশে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কখনও বিজেপি আবার কখনও কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment