পরিবারের ইচ্ছার বিপক্ষে বিয়ের কারণে হত্যার প্রসঙ্গে মুখ খুললেন দেশের প্রধান বিচারপতি। নৈতিকতা এবং আইন প্রসঙ্গে এই বিষয়টির উল্লেখ করেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, পরিবারের ইচ্ছার বিপক্ষে অন্য জাতে ভালোবাসার সম্পর্ক এবং বিয়ে করার জন্য শত শত মানুষকে হত্যা করা হয় ভারতে।
আমেরিকান টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ১৯৯১ সালে উত্তর প্রদেশে ‘সম্ভ্রম হত্যা’-র একটি ঘটনার উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি এই মন্তব্য করেছেন।
প্রতিবেদনটিতে একটি ১৫ বছর বয়সী মেয়ের অভিজ্ঞতা জানানো হয়েছে। মেয়েটি একটি নিম্নবর্ণের ২০ বছরের ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে গ্রামের উচ্চবর্ণের লোকেরা তাদের হত্যা করে। বিচারপতি বলেন, এমন জঘন্য কাজকে ন্যায়সঙ্গত মনে করা হয়। ধরা হয় যে সামাজিক পরম্পরা এবং আচরণবিধি অনুযায়ী তা করা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন যে আইন কেবলমাত্র আমাদের বাইরের সম্পর্কগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু নৈতিকতা আমাদের অন্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের জীবনের দিশা নিয়ন্ত্রণ করে। নৈতিকতা আমাদের বিবেকের কাছে আবেদন করে এবং প্রায়শই আমাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। এি প্রসঙ্গেই তিনি বলেন যে আইনে অনেকসময়েই আধিপত্যকামী গোষ্ঠীগুলির নৈতিকতা প্রাধান্য পেয়ে যায়।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীগুলি, দুর্বল গোষ্ঠীগুলির নিজস্ব রীতিগুলির উপর আক্রমণ করে, প্রায়শই তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করতে বাধা দেয়।
তিনি উল্লেখ করেন যে আমাদের গণতন্ত্রের সংসদীয় ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে আইন পাশ হয়। অতএব, সংখ্যাগরিষ্ঠের নৈতিকতার ধারণা প্রভাব ফেলে আইনে। তিনি প্রশ্ন তোলেন কোনও একটি গোষ্ঠীর পক্ষে যা নৈতিক অন্যান্য গোষ্ঠীর পক্ষেও কি তা একইরকম নৈতিকতা বহন করে? এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্বারা প্রণীত আইনে নৈতিকতা জনিত পক্ষপাত প্রায়শই ঢুকে থাকে। তিনি বলেন সংবিধান প্রণীত হওয়ার পরও আধিপত্যকামী গোষ্ঠীগুলির নৈতিকতা প্রভাব ফেলে আইনে। সেই কারণে সাংবিধানিক মূল্যবোধ নিয়ে নিরন্তর মতবিনিময় হওয়া উচিত।
তাঁর মতে, একটি প্রগতিশীল সংবিধানের মূল্যবোধগুলি আমাদের বোঝা দরকার। ব্যক্তিগত নৈতিকতার ঊর্ধ্বে জায়গা দেওয়া উচিত সাংবিধানিক নৈতিকতাকে।
Comments :0