IT rules censorship

অনলাইনে সেন্সরশিপ

জাতীয়

IT rules censorship

সোশ্যাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটের কোনো মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা কার্যত নিষিদ্ধ হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক নোটিস দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০২১-এর সংশোধন করেছে। সেই সংশোধনী অনুযায়ী সরকার একটি সংস্থা (বা, কমিটি) তৈরি করবে যারা সরকার সম্পর্কিত অনলাইনের সংবাদে কোনটি ভুয়ো, অসত্য, বিভ্রান্তিকর তা স্থির করবে। সেই তথ্য তুলে নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও ইন্টারনেট পরিষেবা দেয় এমন সংস্থাও এই আইনে সরকারের চোখে আপত্তিকর পোস্ট তুলে নিতে বাধ্য থাকবে। 
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে খানিকটা চুপিসারেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি আইনে রদবদল করতে হলে সংসদে আলোচনার প্রয়োজন হয়, সংসদের অনুমোদন লাগে। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বৃহস্পতিবার জারি করা এক নোটিসে বেশির ভাগ অংশই অনলাইন গেমিং সংক্রান্ত। তারপরেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে দুটি ধারা। বলা হয়েছে, কোনো ‘ইন্টারমিডিয়ারি’ কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে কোনো ভুয়ো, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না, তাদের মাধ্যমে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করতে দিতে পারবে না। এমন কোনো তথ্য শেয়ারও করা যাবে না। এইসঙ্গেই বলা হয়েছে, কোন তথ্য ভুয়ো, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তা স্থির করার জন্য সরকার ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে একটি সংস্থা বানাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্যাক্ট চেক ইউনিট তৈরি হবে।

সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর বলেছেন, এই ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সরকার সম্পর্কিত সমস্ত অনলাইন তথ্য পরীক্ষা করবে। তারা ঠিক করবে কোনটি ভুয়ো বা অসত্য। মন্ত্রী বলেছেন, গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো ইন্টারনেট সংস্থা যদি সরকারের চিহ্নিত ওই কনটেন্ট সরিয়ে না দেয় তাহলে তারা ‘সুরক্ষা’ পাবে না। এক্ষেত্রে সুরক্ষা বলতে তৃতীয় কোনো পক্ষের অভিযোগ থেকে সুরক্ষার যে বিধি রয়েছে, তার উল্লেখই করা হয়েছে।
এই পরীক্ষক সংস্থা কী হবে, তা এখনও বিশদে জানানো হয়নি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, সংস্থার রূপরেখা নিশ্চয়ই জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো (পিআইবি) নিজেও সেই সংস্থা হতে পারে। 
শুধু গুগলের মতো ইন্টারনেট সংস্থার কথা মন্ত্রী উল্লেখ করলেও ‘ইন্টারমিডিয়ারি’ পরিধির মধ্যে পড়বে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। যেমন, জিও বা ভোডাফোন আইডিয়ার মতো সংস্থা যারা মোবাইলে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয় তারাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। নিষেধাজ্ঞার চাদরে ঢাকবে এইসব সংস্থাও।

সরকারের তরফেই যদি কোনটা ‘ভুয়ো’ খবর তা ঠিক করে দেওয়া হয় তাহলে কার্যত সরকারের পক্ষে অস্বস্তিকর কোনো সংবাদই আর অনলাইনে দিনের আলো দেখবে না। ‘বিভ্রাম্তিকর’ শব্দটি আরো বেশি বিপজ্জনক। কেননা সরকার যে কোনো খবরকেই বিভ্রান্তিকর বলে চিহ্নিত করতে পারে এবং তা আর অনলাইনে প্রকাশযোগ্য থাকবে না। এমন সময়ে এই নিষেধাজ্ঞা আনা হচ্ছে যখন অনেকগুলি প্রশ্নে সরকার অস্বস্তির মধ্যেই রয়েছে। যেমন আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে মোদী সরকারের সম্পর্ক। এ সংক্রান্ত বহু তথ্য অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। মোদী সরকারের সময়ে কীভাবে বেকারি, দারিদ্র বাড়ছে তার তথ্যও অনলাইন মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। আবার, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শংসাপত্রের সত্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে।

এই নোটিসকে সেন্সরশিপ বলেই চিহ্নিত করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল, সাংবাদিকদের সংগঠন। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, এই নোটিস ‘সরাসরি সেন্সরশিপের শামিল’। কংগ্রেসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট, ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য এই আইন। যেহেতু এখনও এইসব মাধ্যমে সরকারকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। এডিটর্স গিল্ডও এই সংশোধনীকে দানবীয় সেন্সরশিপ বলে অভিহিত করেছে। 
বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়ার করা একটি মামলায় ২০২১-এর তথ্য প্রযুক্তি আইনের বৈধতাই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। বোম্বে হাইকোর্ট সরাসরি ডিজিটাল মিডিয়ার ওপরে ওই আইনের ধারা প্রয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। কিন্তু নতুন সংশোধনীতে সোশ্যাল মিডিয়া পরিধিতে চলে আসায় কার্যত অনলাইনে সরকারের সমালোচনাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এদিন বলেছে, মতপ্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার ওপরে শিউড়ে ওঠার মতো প্রতিক্রিয়া হতে চলেছে। সংবাদ প্রকাশক, সাংবাদিক, সমাজকর্মীরা এর ফলে বিপদ পড়বেন। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে কোনো অনলাইন কনটেন্ট বন্ধ করে দেবার ক্ষেত্রে যে কঠোর পদ্ধতি চালু করেছিল এই সংশোধনী তাকে খোলাখুলি ভাবে লঙ্ঘন করছে।

১৯৭৫-এ জরুরি অবস্থার সময়ে সংবাদপত্রকে সরকারি কর্তৃপক্ষকে সংবাদ প্রকাশের আগেই দেখিয়ে নিতে হত। তারা যেসব সংবাদ ‘প্রকাশযোগ্য নয়’ বলে মনে করত তা ছাপা যেত না। তখন অনলাইন বা সোশ্যাল মিডিয়ার অস্তিত্ব ছিল না। এখন এই মাধ্যম তথ্য ও সংবাদ প্রকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংবাদমাধ্যম ছাড়াও ব্যক্তি কোনো তথ্য বা মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে পারেন। সরকারের নতুন সংশোধনীতে কোপ পড়বে তাতেও।

Comments :0

Login to leave a comment