ধীমান রক্ষিত
ব্যস্ততার জীবনে অনেকের মতো সেও হয়তো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবু কলকাতার সঙ্গে তার সম্পর্ক বহু পুরনো, গভীর। আজও মহানগরের ঐতিহ্য বয়ে চলেছে ট্রাম। আর এবার সেই ট্রামেরই ১৫০ বছর পূর্তি।
পুজোর মরশুমে শহরে চলবে বিশেষ তিনটি ট্রাম। যদিও এই ট্রামগুলিকে সাজানো, রঙ করাচ্ছে একটি বহুজাতিক রঙ সংস্থা। একটি পয়সা খরচও সরকার করছে না। টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ রুটে ট্রামগুলি চলবে।
বামফ্রন্ট সরকার এই ট্রাম কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করলেও বর্তমানে এই কোম্পানিকে শুকিয়ে মারা চেষ্টা হচ্ছে। বেচে দেওয়া হচ্ছে ট্রাম কোম্পানির জমি, চালু বাস রুট ও বেশ কয়েকটি বাস।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ১৯টি চালু বাস রুট এবং ৪০টি বাস বিক্রির জন্য টেন্ডার ডেকেছিল। এখনও পর্যন্ত সেই টেন্ডারে কোনও সংস্থা অংশ নেয়নি। অংশ না নেওয়ার পেছনে সিআইটিইউ অনুমোদিত কলকাতা ট্রামওয়েজ এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের বড় ভূমিকা ছিল। তাদের ধারাবাহিক লড়াই, আন্দোলনের চাপে কোনও বেসরকারি সংস্থা টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি।
১৯৯১ সালে কর্পোরেশন হওয়ার পর ৪০টি বাস দিয়ে পরিষেবা চালু করে ট্রাম কোম্পানি। বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দিকে সেই বাসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫০টি। দৈনিক ১৫-১৮ লক্ষ টাকা সরকারি আয় হতো সেখান থেকে। বর্তমানে মাত্র ৩৯০টি বাস এবং দৈনিক আয়ও নেমে এসেছে গড়ে ৩ লক্ষ টাকায়।
শতক পুরনো ট্রামওয়েজ কোম্পানি ছিল ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন। এমনকি স্বাধীনতার পরেও সেটি ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীনেই থেকে গেছিল। রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৭৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে সরকার এটির দায়িত্ব নেয়। গঠন করা হয় হয় ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি, ১৯৭৮ লিমিটেড। ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির সরকারি উদ্যোগেই আধুনিকীকরণ হয় তখন।
১৯৯১ সালে ৪০টি বাস দিয়ে পরিষেবা চালু করে। ইতিমধ্যে ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির নাম পাল্টে নামকরণ করা হয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন।
২০১১ সালে কর্পোরেশনের অধীন ৩৭টি রুটে ট্রাম চললেও আজ চলছে মাত্র ৩টিতে। ২০১৪-'১৬’র মধ্যে ৫টি ডিপোর মোট ৩৫০ কাঠা সরকারি জমি বিক্রি করেছে সরকারি সংস্থাটি। জমি বিক্রি বাবদ ২৩০ কোটি টাকা কোথায় গেছে, তারও কোনো স্পষ্ট জবাব মেলেনি এতদিনে। অথচ শ্রমিক, কর্মচারীদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের ২২০ কোটি টাকা বকেয়া।
কলকাতার কোন্ রুটে প্রথম ট্রাম চলা শুরু করলো? ট্রাম চালানোর দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল ১৮৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এর চারদিন পরে কলকাতার রাজপথে গড়ালো ট্রামের চাকা। প্রথম ট্রাম রুটের যাত্রা পথ ছিল ৩.৯ কিলোমিটার। শিয়ালদহ থেকে তৎকালীন সার্কুলার রোড ধরে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে একেবারে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতার কাজ শেষ হল। সে পথেই প্রথম ট্রাম চলে বলে জানা যায়। প্রথমে খরচ ধরা হয়েছিল লাখখানেক টাকা। কিন্তু কাজে নেমে তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন জাস্টিস অব পিস। প্রথম ট্রাম ঘোড়ায় টেনেছিল। অস্ট্রেলিয়া থেকে সব তেজি ঘোড়া নিয়ে আসা হয়। মূলত পণ্য পরিবহণের জন্য চলবে ট্রাম, তেমনটাই ঠিক ছিল। কিন্তু ততদিনে ট্রামকে ঘিরে বাঙালির মধ্যে উদ্দীপনা চরমে উঠেছে।
Comments :0