Krishak Sabha Land Loot

ভূমি দপ্তরেই গোপনে বদলাচ্ছে মালিকানা, রাজভবনেও প্রতিবাদ জানাবে কৃষকসভা

রাজ্য

রসিদ সত্ত্বেও নেই স্বত্ব। প্রতিবাদে ডেবরার কৃষকরা। বৃহস্পতিবার রাতে তোলা ছবি।

জমির মালিকানা বদলে যাচ্ছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরে। পাট্টাদার বর্গাদারদের জমি অন্যকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডেবরায় আন্দোলন চলছে। সারা রাজ্যেই এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে। আন্দোলনও চলবে। 
শুক্রবার কলকাতায় শ্রমিক ভবনে এই লক্ষ্য জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সভাপতি বিপ্লব মজুমদার। তিনি জানিয়েছে, রাজভবনের সামনে ২৬-২৮ নভেম্বর বিক্ষোভেও বর্গাদার এবং পাট্টাদারদের জমির স্বত্ব দেওয়ার দাবি উঠবে। 
মজুমদার বলেছেন, ‘‘কেবল গ্রাম নয়, শহরের মানুষও সুরক্ষিত নন এই দালাল এবং জমি মাফিয়া চক্রের হাতে। যে কারও জমির মালিকানা অজান্তে বদলে যেতে পারে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্যের তৃণমূল সরকারের মদতে চলছে জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর কেবল নয়, নবান্ন থেকে নথি এবং তথ্য ঘিরে অস্বচ্ছতা তৈরি করা হচ্ছে।’’
৭ হাজার ৩৭৪ বর্গাদার এবং পাট্টাদারের জমির দাগ স্বত্বের দাবিতে কৃষকসভা এবং খেতমজুর সংগঠনের অবস্থান বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে ডেবরায়। গোপনে ৪৭৬ জন বর্গাদার ও পাট্টাদারের জমির ভুয়ো দলিল বানিয়ে অন্যের হাতে দেওয়া হয়েছে। ব্লক ভূমি দপ্তরেই কারসাজির তথ্য দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। সরকারের ঘরে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ থাকলেও কাগজপত্র মেলেনি। 
সারা ভারত কৃষকসভা ও খেতমজুর ইউনিয়ন ডেবরা ব্লক  কমিটির ডাকে জমির স্বত্ব সহ খাস জমি বন্টনের দাবিতে অবস্থান শুরু হয়। গত বছরের ২৩ মে ৭ হাজারের বেশি পরিবারের জমির সত্ত্ব চেয়ে পাঁচদিন এই ভূমি দপ্তরে ক্যাম্প করে আবেদন পত্র জমা দেয় কৃষক ও খেতমজুর আন্দোলন। ভূমি দপ্তরের পক্ষে বলা হয়েছিল, দু’মাস পরে ক্যাম্প করে প্রতিদিন ৪০০ জন করে সেই জমির কাগজ তুলে দেওয়া হবে। 
কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি মতো কাজ হয়নি। উলটে গরিব মানুষের জমি বেহাত করা হচ্ছে ভুয়ো দলিল বানিয়ে। দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে যে সব দরখাস্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলি বস্তাবন্দি হয়ে ব্লক দপ্তরের ছাদে জল বৃষ্টিতে নষ্ট করা হয়েছে। শুধু শাসক দল তৃণমূল নয়, সঙ্গে রয়েছে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক এবং সরকারি দপ্তরের একাংশও।
বিপ্লব মজুমদার জানিয়েছেন, জমির মালিকানা বেহাতের একই ঘটনা দেখা গিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। পুরুলিয়ার বিভিন্ন ব্লক, বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির মতো বহু জায়গায় কৃষকসভা এবং খেতমজুর ইউনিয়ন প্রতিবাদ চালিয়েছে। নদীয়ায় দু’টি মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এমন রাজ্যের প্রায় সব জেলায় দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘এ রাজ্যে জমির পাট্টা এবং খাস জমি সংক্রান্ত আইন রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী ভূমি আধিকারিকদের সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে খতিয়ে দেখার নিয়ম রয়েছে। যে জমি সংক্রান্ত আবেদন, তার বসবাসকারী তো বটেই, এমনকি পাশের জমির কৃষকদের সঙ্গেও কথা বলার নিয়ম রয়েছে। অথচ কাউকে না জানিয়ে স্বত্ত্ব হাত বদল হয়ে যাচ্ছে। এসব চলছে আইন ভেঙে।’’
মজুমদার বলছেন, ‘‘জমির স্বত্ত্ব সংক্রান্ত দু’টি ওয়েবসাইট চালু হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষস্তরে, নবান্ন থেকে। অথচ সাধারণ মানুষ এই ওয়েবসাইট খুলে দেখতে পারেন না। এই অস্বচ্ছতা তৈরি করা হয়েছে জমি লুটের জন্য। তৃণমূল সরকার তার জন্য সরাসরি দায়ী। জমি মাফিয়াদের পক্ষ নিচ্ছে সরকার।’’
২৬-২৮ নভেম্বর সারা দেশের মতো এ রাজ্যেও যৌথ কর্মসূচি নিয়েছে কৃষক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি। পুলিশ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। শুক্রবার শ্রমিক ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ যদিও জানিয়েছেন কর্মসূচি হবেই। ২৮ নভেম্বরও রাজভবন অভিযান হবে। মজুমদার বলেছেন, ‘‘রাজ্যে কৃষকের জমি লুটের বিরুদ্ধেও উঠবে স্লোগান।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment