Kumbh Water Pollution

কেন্দ্রীয় সংস্থা ফের জানালো সঙ্গমের জল দূষিত, যোগীর দাবি স্নান-পানের উপযুক্ত

জাতীয়

কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা বুধবার সকালের তথ্য দিয়েও জানিয়েছে, এলাহাবাদে গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমে জলের দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। অথচ কিছু সময়ের ব্যবধানে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ দাবি করছেন, সঙ্গমের জল স্নান এবং মুখে নেওয়ার ধর্মীয় রীতির জন্য সম্পূর্ণ উপযুক্ত। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি) ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে (এনজিটি) সঙ্গম এবং আশপাশ এলাকার গঙ্গা এবং যমুনার জলের দূষণের মাত্রার যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা সামনে আসার পরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। কোনো বেসরকারি সংস্থা নয়, কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান নয়, জল দূষণের তথ্য হাজির করেছে খোদ কেন্দ্রীয় সংস্থা। কেন্দ্রের সরকার বিজেপি’র, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে আদিত্যনাথ ওই রিপোর্টকে হিন্দু বিরোধী বা দেশবিরোধী বলতে পারেননি কিন্তু কুম্ভমেলাকে ‘বদনাম’ করার জন্য দায়ি করেছেন বিরোধীদের। 
জলে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রায় স্পষ্ট হয়েছে মানুষ ও পশুর মল আছে তাতে। একইভাবে বায়োমেডিক্যাল অক্সিজেন ডিম্যান্ড (বিওডি)-র মাত্রা দেখে বোঝা যাচ্ছে ওই জল স্নানের উপযুক্ত নয়। কুলকুচি করার জন্য মুখে নেওয়া তো আরও বিপজ্জনক। বিওডি দেখে বোঝা যায় যে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের কতটা ব্যাকটেরিয়া গিলে ফেলছে। জলে বিওডি’র মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার বেশি থাকলে বোঝা যায় দূষণের পরিমাণ বেশি। নদীর জল স্নানের উপযুক্ত তখনই মনে করা হয় যখন প্রতি লিটার জলে বিওডি’র মাত্রা হবে ৩ মিলিগ্রামের কম। সিপিসিবি যে রিপোর্ট এনজিটি-তে জমা করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৫টার হিসেবে সঙ্গমের জলে বিওডি’র মাত্রা ৫.০৯ মিলিগ্রাম। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় এর মাত্রা ছিল ৪.৬ মিলিগ্রাম। এদিন সকাল ৮ টায় সঙ্গমে সেই মাত্রা ছিল ৫.২৯ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ নির্ধারিত মাত্রার থেকে প্রায় দ্বিগুন। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই তথ্য মানতে নারাজ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। আদিত্যনাথ সহ হিন্দুত্ববাদী নেতারা আস্থা, ভক্তির নামে কেন্দ্রীয় সরকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যকে খারিজ করার চেষ্টা করছেন। 
এদিকে বুধবার ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে এই নিয়ে শুনানি ছিল। সেখানে উত্তর প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ফের ভর্ৎসনা করে এনজিটি। এনজিটি’র চেয়ারপার্সন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব, বিচারবিভাগীয় সদস্য সুধীর আগরওয়াল এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য এ সেন্থিল ভেলের বেঞ্চ এলাহাবাদে গঙ্গা, যমুনায় নর্দমার জলবাহিত বর্জ্য ফেলার প্রতিরোধ বিষয়ে শুনানি করছিলেন। উত্তর প্রদেশের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল গরিমা প্রসাদ বলেন, সিপিসিবি তাদের রিপোর্টে জানায়নি কোন কোন এলাকা থেকে জলের নমুণা সংগ্রহ করা হয়েছে। এনজিটি’র বেঞ্চ গরিমা প্রসাদকে প্রশ্ন করে, আপনি কি সিপিসিবি’র রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করছেন? নমুণা সংগ্রহের আগে সিপিসিবি কোথা থেকে নমুণা সংগ্রহ করছে, তা জানাতে হবে এমন বিধিবদ্ধ কোনো নিয়ম নেই বলেও এনজিটি জানিয়ে দেয়। উত্তর প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে কড়া সমালোচনা করে বেঞ্চ বলেছে, কোন কোন জায়গা থেকে নমুণা সংগৃহীত হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। নদীর জল দূষিত, সেটাই যথেষ্ট। জবাবে গরিমা প্রসাদ জানান, উত্তর প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ১৮ ফেব্রুয়ারি এই নিয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু এই নিয়ে বেঞ্চ ফের চেপে ধরে উত্তর প্রদেশ সরকারকে। এনজিটি’র বেঞ্চ বলেন, ওই রিপোর্টে পেকল কলিফর্মের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ১২ জানুয়ারির আগের নমুণার ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট। যখন কুম্ভমেলা শুরুই হয়নি। জানা গেছে, প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে যেখানে কলিফর্মের পরিমাণ ২৫০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক মাত্রা, সেখানে এই পরিমাণ দ্বিগুনেরও বেশি। 
উত্তর প্রদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং হিন্দুত্ববাদী নেতারা এদিন কুম্ভমেলায় কোটি কোটি মানুষের মল-মূত্রের দূষিত হলে স্নান করার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নামেন। এই কাজই পরে নিজের হাতে তুলে নেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। তিনি বিধানসভায় বলেন, বিরোধীরা ভুয়ো ভাষ্য তৈরি করে মহাকুম্ভকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। সনাতন ধর্মকে এরা অপমান করছে। এটা বরদাস্ত করা হবে না। বিরোধীরা মিথ্যা প্রোপাগ্যান্ডা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বিরোধীরা মানুষকেও বিভ্রান্ত করছে বলে তাঁর দাবি। আদিত্যনাথ বলেন, সনাতন ধর্ম ভারতের আত্মা। তাই আমাদের দায়িত্ব এর মর্যাদা রক্ষা করা। বিরোধীরা পাল্টা বলেছেন, বিজেপি এবং মোদী-যোগীর সনাতন ধর্মের মর্যাদা রক্ষার পরিণতি কোটি কোটি মানুষকে মল-মূত্র মিশ্রিত জলে স্নান করানো।

Comments :0

Login to leave a comment