Lalan Sekh

হেপাজতে মৃত্যু বগটুইয়ের মূল চক্রী লালন শেখের, প্রশ্নের মুখে সিবিআই

রাজ্য

আদালতে তোলার এক দিন আগেই সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হলো বগটুই গণহত্যার মূল চক্রী বড় লালন সেখের! 
সোমবার দুপুরের পরে রামপুরহাটের কাছে সিবিআই’র অস্থায়ী শিবিরের বাথরুম থেকে উদ্ধার হয়েছে বড় লালনের ঝুলন্ত দেহ। সিবিআই’র একটি সূত্রের দাবি, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে এই অভিযুক্ত। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনা ঘিরে ছড়িয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। ঘটনা জানাজানি হতেই ফের যাতে উত্তেজনা না ছড়ায়, তার জন্য বগটুই গ্রামে বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে জেলা পুলিশের তরফ থেকে। তবে নতুন করে উত্তেজনার আভাস পাওয়া গিয়েছে বগটুইয়ে। লালন-অনুগামী তৃণমূলবাহিনী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ শুরু করেছে। গোটা ঘটনাকে হাতিয়ার করে বগটুই গণহত্যার ক্ষত ধামাচাপা দিতে ময়দানে নেমে পড়েছে তৃণমূল। 
বগটুই গণহত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত বড় লালন সেখের দিদি সামসুন্নাহার বিবি দাবি করেছেন, ‘‘সিবিআই লালনের উপর অত্যাচার করেছে। তাতেই ওর মৃত্যু হয়েছে।’’ রাতের দিকে সিবিআই ক্যাম্প থেকে মৃতদেহ বের করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। রামপুরহাটের অস্থায়ী শিবির থেকে সিবিআই’র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে এদিন সন্ধ্যার পর সিবিআই’র অস্থায়ী শিবিরে যান বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ স্থানীয় থানায় সিবিআই’র তরফে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। বিকেল পাঁচটা নাগাদ আমাকে ফোন মারফত জানানো হয়েছে, লালন সেখকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ক্যাম্পের ভেতরে। সে আত্মঘাতী হয়েছে, ইউডি কেস। এরপর সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার সিবিআই নেবে বলে জানিয়েছে।’’
স্বাভাবিকভাবেই গোটা ঘটনা নিয়ে রহস্যও তৈরি হয়েছে। সিবিআই’র তরফে সরকারিভাবে কোনও কিছু জানানো হয়নি। নিজেদের হেপাজতেই বগটুই গণহত্যার মূল চক্রীর এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুতে যথেষ্ট বেকায়দায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। তাঁদের হেপাজতেই এই মৃত্যুর ঘটনার পরে দিল্লিতে অবস্থিত সিবিআই সদর দপ্তর থেকেও রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। 
গত ২ ডিসেম্বর যখন ভাদু খুনে অন্যতম মূল অভিযুক্ত সাফিকুল সেখকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়েছিল, তখন এই অভিযুক্তকে হেপাজতের স্বপক্ষে সিবিআই’র আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘‘গোটা ঘটনার  পেছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। তা খোলসা করতে অভিযুক্তদের হেপাজতে নেওয়া প্রয়োজন।’’ ভাদু খুনের বদলায় যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছিল, তার মূল চক্রী ভাদুর ডান হাত বলে পরিচিত দীর্ঘ দিন ফেরার থাকা বড় লালন সেখের নাগাল পায় সিবিআই তার ঠিক এক দিন পরেই। গ্রেপ্তার করে দুই দফায় মোট ন’দিন বড় লালনকে নিজেদের হেপাজতে নিয়েছিল সিবিআই। তা শেষ হয়ে মঙ্গলবার ফের বড় লালনকে আদালতে তোলার দিন ধার্য ছিল। তার এক দিন আগেই বগটুই গণহত্যার মূল চক্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই কাঠগড়ায় তুলেছে সিবিআই-কে। কারণ যে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’র তত্ত্ব সিবিআই খোলসা করতে চাইছে, তার ভরকেন্দ্রেই ছিল বড় লালন।
সেই তথ্য সন্ধা‍‌নে বড় লালনের মৃত্যুর প্রভাব পড়বে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। বালি, কয়লা, গোরু, পাথর থেকে আদায় হওয়া তোলার যে বাঁটোয়ারা ঘিরে বিবাদের পরিণতিতে বগটুই গণহত্যা ঘটেছিল, তার হালহকিকৎ ভাদু সেখের ছায়াসঙ্গী বড় লালনের থেকে ভাল কেউ জানত না। ঘটনায় অনুব্রত সহ তৃণমূলের তাবড় নেতাদের নাম জড়িয়েছিল। কারণ, তৃণমূলের এই গোষ্ঠীবিবাদে কোনও না কোনও গোষ্ঠীর মাথায় কোনও না কোনও তৃণমূল নেতার হাত ছিল। ফলে এই মৃত্যুর ঘটনায় তৃণমূল নজর ঘুরিয়ে দিতে পুরোদমে মাঠে নেমে পড়েছে। 
বগটুই গণহত্যা মামলায় সিবিআই তদন্ত এই বড় লালন সেখকেই মূল চক্রী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বড় লালন সেখ বগটুইয়ের নৃশংস হত্যালীলা সংগঠিত করেছিল বলেই সিবিআই তার তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল। কিন্তু ঘটনার পরই সে পালিয়ে যায়। সিবিআই হুলিয়া জারি করে। অবশেষে গ্রেপ্তারের পর রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক প্রথম দফায় ছয় দিন এবং পরবর্তীতে আরও তিন দিনের জন্য লালনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই হেপাজত শেষে মঙ্গলবারই আদালতে বড় লালনকে পেশ করার দিন ধার্য ছিল।

Comments :0

Login to leave a comment