অনিন্দিতা দত্ত (শিলিগুড়ি) ও দীপশুভ্র সান্যাল (জলপাইগুড়ি)
শিলিগুড়িতে ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’-কে অভিনন্দন জানালেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের এই কর্মসূচিতে যোগ দেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, ছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দও।
রাহুল বললেন, ‘‘ঘৃণার বিরুদ্ধে, সম্প্রীতির পক্ষে লড়াই করতে হবে আপনাদের। ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে হবে। ভারতকে জুড়ে রাখার গুরুদায়িত্ব রয়েছে আপনাদের ওপরেই। আমি নিশ্চিত এই দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে দেখাবেন বাংলার মানুষ।’’ এই কর্মসূচি ঘিরে শিলিগুড়িতে কেবল কংগ্রেস কর্মীরাই নন। দেখা গিয়েছে বিভিন্ন অংশের মানুষকে।
রাজ্যে প্রবেশ করার সময় থেকে বারবার বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কংগ্রেসের এই কর্মসূচিকে। শিলিগুড়িতে সভা বাতিল করেছে প্রশাসন। সকালে জলপাইগুড়িতেও ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টার, কাটআউট। পুলিশ প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ে তীব্র ক্ষোভ জানান অধীর চৌধুরী। বস্তুত, রাহুলের যাত্রা ঘিরে বারবারই বিরূপ মন্তব্য করেছে তৃণমূল। তবে রমেশ এই প্রসঙ্গকে হালকা করার চেষ্টা করেছেন।
জলপাইগুড়িতে মিছিলে রাহুলের সঙ্গে অধীর চৌধুরী সহ কংগ্রেস কর্মীরা। ছবি: প্রবীর দাশগুপ্ত
রাহুলের সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, দলের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার প্রমুখ। শিলিগুড়ি শহরের সফদর হাসমিচকে দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রাকে সম্বর্ধনা জানানো হয়। ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, আরএসপি’র তাপস গোস্বামী, বিকাশ সেন রায় প্রমুখ। জীবেশ সরকার পদযাত্রীদের সাথে পা-ও মিলিয়েছেন।
এয়ারভিউ মোড়ে গাড়িতে বসেই বক্তব্য রাখেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘‘জাত পাত ধর্মের নামে ভারতে যে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে একসাথে লড়াই করতে হবে। ঘৃণা ও হিংসায় কোন দিক থেকেই দেশের অগ্রগতি হয় না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ধীরে ধীরে সম্প্রতি ভালোবাসার ভারতবর্ষে হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে।’’
নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিশানা করে রাহুল বলেছেন, ‘‘পড়াশোনা শেষ করে যে কোন যুবক যুবতীরা কর্মসংস্থান রোজগারের আশা করেন। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হতে চান। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। বাস্তব হলো, দেশে যুবদের হাতে কাজ নেই। যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভ, রাগ, হিংসার সৃষ্টি হচ্ছে। যুব সমাজ বিপথে পরিচালিত হচ্ছে।’’
রাহুলের খেদ, ‘‘বিমানবন্দর, খনি, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সমস্ত লাভজনক সংস্থাগুলি কয়েকজন বড় পুঁজিপতিদের হাতে কুক্ষিগত। গরিব মানুষের স্বার্থে কোনও কাজ করছে না দেশের সরকার।’’
সামাজিক ন্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘‘সমাজের পিছিয়ে পড়া আদিবাসী, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য দেশের সরকার দরজা বন্ধ করে রেখেছে।’’ দেশের সরকারের ‘অগ্নিবীর যোজনার’ তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
পোস্টার ছেঁড়া প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পিনাকি সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রাহুলজী দেখুন রাজ্যের তথা জলপাইগুড়ির কী অবস্থা। এরকম ছেঁড়া ব্যানারই থাকবে।’’ তবে এই ঘটনাকে বিশেষ আমল দিতে চাননি কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রমেশ বলেন, ‘‘ ‘ইন্ডিয়া’-তে আমরা সকলকে নিয়ে চলতে চাই। বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। এ ধরনের ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
রাজ্য ভিত্তিক বাস্তবতার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘‘কেরালায় বামপন্থীদের সঙ্গে আমাদের লড়াই রয়েছে। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’-র অন্যতম প্রধান কান্ডারী বামপন্থীরা।’’
Comments :0