শুভ্রজ্যোতি মজুমদার- পান্ডুয়া
প্রসঙ্গে পথচলতি গরীব মানুষ রফিক শেখের কথা মনে পড়ছে বারবার। ‘বাবা লাল পার্টির এমন বিশাল মিছিল পাণ্ডুয়ায় অনেক দিন পর দেখলাম। শেষ এই মিছিল দেখেছিলাম যখন লাল পার্টির সরকার ছিলো। আমরা তো বারবার বলি বাবা লাল পার্টিই ভালো ছিল’।
পাণ্ডুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ক্ষেতমজুর রবি ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজ ছিল যখন করে খাওয়ার সুযোগ তবু মিলছিল। এখন সেসব বন্ধ হয়েছে। তৃণমূল জব কার্ড কেড়ে নিয়েছে দুর্নীতি করেছে। আর সেই তালে কেন্দ্রের সরকার ১০০ দিনের কাজের বরাদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছে। পাণ্ডুয়ায় চিরকাল সম্প্রীতির বাতাবরণ ছিল তৃণমূল আর বিজেপির জন্য এখনকার সম্প্রীতির পরিবেশ খারাপ হয়েছে। ছেলেমেয়েদের কাজ নেই। তাই আমাদের একটাই দাবি লাল পার্টি জিতুক আমরা ১০০ দিনের কাজ যেন পাই। ছেলে মেয়েরা কাজ পাক। পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ পাক। সম্প্রীতির আবহাওয়া ফিরে আসুক’’।
লাল পতাকায় সুসজ্জিত ক্ষেতমজুর গরীব খেটে খাওয়া মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক প্রান্তিক গরীব মানুষের দৃপ্ত মিছিল বিস্তীর্ণ এলাকা পরিক্রমা করে। পাণ্ডুয়া তিন্না পেট্রোল পাম্প থেকে মিছিল শুরু করে, জিটি রোড ধরে মিছিল এগোতে থাকে। কলবাজার হয়ে মিছিল মেলাতলা পৌঁছায় সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। পাণ্ডুয়ায় মূল সমস্যা পরিযায়ী শ্রমিকের, ক্ষেতমজুরের কাজ সামাজিক সুরক্ষা পর্যাপ্ত মজুরির। লোকসভায় বামপন্থীদের পাঠাতে তাই এবার পথে নেমেছিলেন ক্ষেত মজুর কৃষক ও গরীব মানুষেরা। দুপুর হতেই ট্রাক্টর ভ্যানে করে প্রান্তিক গরীব মানুষ মিছিল শুরুর স্থানে আস্তে শুরু করেন। রাস্তার দুধারে উৎসুক মানুষের ঢল নেমেছিল। ছোট থেকে বালক কিশোর আবাল বৃদ্ধ বনিতার সারি জমতে থাকে রাস্তার দুই ধারে। কেউ কেউ মিছিলের এক ঝলক মুঠোফোনে বন্দী করে রাখতে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন রাস্তায়। এদিন মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন হুগলি জেলার সিপিআই(এম) শীর্ষ নেতৃত্ব সহ বাম ও জাতীয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।
এদিন মেলাতলায় মিছিল পৌঁছালে সংক্ষিপ্ত সভা ও হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য নেতৃত্ব সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআই(এম) প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ, কংগ্রেস নেতা প্রীতম ঘোষ প্রমুখরা।
পার্টির রাজ্য নেতৃত্ব সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীজি আরম্ভ করেছিলেন আবকি বার চারশ পার কিন্তু দেখে নেবেন ৩ তারিখ। মোদীকে সরকারের দায়িত্ব ছাড়তে হবে। ভারতের সংবিধানে বলা আছে আমরা ভারতের জনগণ। সেখানে বলা আছে আমরা কিরকম দেশটা চাই। সেই ধারনাকে ধ্বংস করে সংবিধানকে বদলে দিতে চাইছেন। যে অপরাধ মোদী করেছেন তার বিচার হওয়া উচিত। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি এখন যদি ৩৬ ইঞ্চি না হয় তাহলে দুটো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নির্বাচনের মুখে গ্রেপ্তার করা হয়?
প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ বলেন, আমরা ভারতবর্ষকে যেভাবে চিনি। প্রজাতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ। বিজেপি জিতলে সেই ভারত আর থাকবে না। তাই আমাদের দেশ, সংবিধান, স্বাধীনতা রক্ষার্থে আমাদের বিজেপিকে রুখে দিতে হবে। ভারতবর্ষের মূল সুর বৈচিত্র্য কে রক্ষা করতে হবে। এবারের নির্বাচন শুধু একটা ভোট না আমাদের দেশের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামো ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধান রক্ষার লড়াই। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে একটা নতুন সরকার দিল্লিতে তৈরি করতে হবে। আমরা চেষ্টা করলেই সেটা আমরা পারবো।
কংগ্রেস নেতৃত্ব ও ভারতের সংবিধান সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ইন্ডিয়াকে শক্তিশালী করার কথা বলেন। সভা পরিচালনা করেন সিপিআই(এম) নেতা রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী।
ক্যাপশন - পাণ্ডুয়ায় মনোদীপ ঘোষের সমর্থনে বামফ্রন্ট কংগ্রেসের মহামিছিল (ছবি অভীক ঘোষ)
Comments :0