Mahua Moitra

সাজানো ছকে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া

জাতীয়

মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলায় অবশেষে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। শুক্রবার লোকসভায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে শাসক দলের ধ্বনি ভোটে তাঁর বহিষ্কার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা। মৈত্র আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলায় ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলে বিজেপি’র। লোকসভার এথিকস কমিটি বিজেপি’র সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে রিপোর্ট পেশ করে। এদিন সংসদে রিপোর্ট পেশের পর তা নিয়ে সংসদে বাদানুবাদের মধ্যে মন্ত্রী যোশীর বহিষ্কারের প্রস্তাব পেশ হয়, চরম হট্টগোলেই তা ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে যাকে বহিষ্কার করা নিয়ে বিজেপি’র এত তোড়জোর সেই সাংসদ মৈত্রকে তাঁর স্বপক্ষে কোনও বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ কোনও আলোচনা ছাড়াই এক রকম শাসকের ফতোয়ায় বিরোধী সাংসদের সদস্য পদ বাতিল হয়ে গেল সংসদে। যদিও এথিকস কমিটি সুপারিশ মতো মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া নিয়ে সিবিআই তদন্তে এফআইআর দায়ের করেছে কেন্দ্র।

মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির আর্থিক বেনিয়ম নিয়ে দেশে বহু অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে বহু রিপোর্টও প্রকাশ হয়েছে, এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত চলছে। সংসদে আদানির বেনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া মৈত্র। বিজেপি’র আদানির ব্রিগেড বলে পরিচিতরা এতে শোরগোল শুরু করে। এতে মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন বলে অভিযোগ তোলেন  বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান এথিকস কমিটিকে। কমিটিতে বিজেপি’র সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মৈত্রকে বহিষ্কার সুপারিশ করায় তা গৃহীত হয়। গত ৯ নভেম্বর এথিকস কমিটি লোকসভা অধ্যক্ষকে তার রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে তাকে বহিষ্কার এবং তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ায় ফের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। প্রসঙ্গত অধিবেশনের শুরুতে এথিকস কমিটির রিপোর্টে সংসদে পেশ ও তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কার্যসূচিতে রাখা হয়। সংসদে সপ্তাহের শেষ দিনে তা পেশ হয়।

এদিন লোকসভায় মৈত্র নিয়ে এথিকস কমিটির ৪৯৫ পাতার রিপোর্ট বেলা বারোটা নাগাদ পেশ হয়। সংসদে তা পেশ হলেও সেই রিপোর্ট সকল সাংসদের কাছেও পৌঁছায়নি। বিশাল রিপোর্ট পড়ার ক্ষেত্রে সময় চান বিরোধীরা। সাংসদদের সকলের হাতের কাছে রিপোর্ট নেই, এতে সময় দিতে রাজি নয় সরকার। এনিয়ে বিরোধীরা সরব হয়ে প্রতিবাদ জানালে সভা মুলতুবি করে দেন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। এনিয়ে প্রতিবাদে চার দফায় সভা মুলতুবি হয়ে যায়। বেলা ২টো নাগাদ ফের সভা শুরু হয়। সভায় বিরোধী নেতা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি এনিয়ে রিপোর্ট পড়ে আলোচনার জন্য চার দিন সময় চান। তিনি বলেন ৫০০ পাতার এই রিপোর্টে পড়ে তা নিয়ে আলোচনার জন্য কম করে চারদিন সময় দেওয়া উচিত। তবে অধ্যক্ষ চার দিন দূরে থাক চার ঘণ্টাও এতে আলোচনার সময় দিতে চাননি। তিনি সোজা জানিয়ে দেন এনিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা সেরে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন যার বিরুদ্ধে রিপোর্ট পেশ হয়েছে সেই মহুয়া মৈত্র বক্তব্য রাখতে দেওয়া যাবে না। তুমুল হট্টগোলের মধ্যে চলতে থাকে সভা।

এদিন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা সাংসদ অধীর চৌধুরি বলেন, আজ সংসদের একটা কালো দিন। নতুন সংসদ ভবনে নতুন কালো দিন টেনে আনলো মোদী সরকার। সভায় এথিকস কমিটির অন্যতম সদস্য বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি কমিটির রিপোর্ট সঠিক তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান। তিনি এথিকস কমিটি বৈঠকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দেন। সংসদে সেই রিপোর্ট  নিয়ে আলোচনায় প্রতিবাদ জানিয়ে সভায় ওয়াক আউট করেন। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, এই রিপোর্ট  যথেষ্ট নয়। এতে অভিযোগ নিয়ে যথেষ্ট তথ্য নেই। তিনি আরও বলেন, যে ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত হচ্ছে সেই ব্যবসায়ী হিরানন্দানিকেও কোনও জেরা করা হয়নি। তা সত্যি মিথ্যা তা যাচাই করা হয়নি। অথচ তাতে সাংসদকে  দোষী সাব্যস্ত করে তার বহিষ্কার সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। একই অভিযোগ করেছেন শিবসেনা (ইউবিটি)সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী তিনিও বলেন, সেই ব্যবসায়ী হিরানন্দানি ডাকা হলো না। জানা হলো না তার অভিযোগ সত্যি কিনা। ধরেই নেওয়া হলো ব্যবসায়ী হিরানন্দানি অভিযোগে যা বলছেন সব সত্য ‌আর মৈত্র যা বলছেন তার সব মিথ্যা। এভাবে কোনও তদন্ত হয় নাকি? এদিন তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্র আদানির বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখায় তাঁকে বহিষ্কার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

এদিকে আলোচনার মধ্যে বারে বারে সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। হট্টগোলের মধ্যে বক্তব্য চলার সময় পেরিয়ে গেছে বুঝিয়ে সংসদীয় মন্ত্রীকে যোশী মৈত্রকে বহিষ্কারের প্রস্তাব পেশ করার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ। প্রস্তাবে মৈত্রকে বহিষ্কারের প্রস্তাব দেন যোশী। এতে প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন বিরোধীরা। তার মধ্যে ধ্বনি ভোটেই পাশ হয়ে যায় বহিষ্কারের প্রস্তাব। এদিন যোশী মৈত্রের সংসদে বক্তব্য রাখার বিরোধিতা করে জানান, এথিকস কমিটির রিপোর্টের উপর অভিযুক্তের সাংসদের কোনও বক্তব্য রাখার অধিকার নেই। তিনি ২০০৫ সালে ১০ জন সাংসদ ঘুষ নেওয়া অভিযোগে বহিষ্কার হওয়ার সময় তাদের কোনও বক্তব্য রাখতে দেওয়া হয়নি বলে জানান। এদিন সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদব মৈত্রকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত বিরোধিতা করেন।

Comments :0

Login to leave a comment