তৃণমূল এবং হিন্দুত্ববাদী নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতা আসলে যমজ। দুনিয়া জুড়ে যে দক্ষিণপন্থার উত্থান, ট্রাম্প থেকে মোদী, এর একটি অ্যাপেনডিক্স হলো তৃণমূল। অবশ্যই তার নিজস্ব কিছু চরিত্র আছে। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এটিই আজকের সময়ের রাজনীতি। এই লড়াইয়ে আমাদের নিজস্ব শক্তি বাড়াতে হবে।
শনিবার ডানকুনিতে, সিপিআই(এম)’র ২৭তম রাজ্য সম্মেলনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে এই কথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
আমাদের রাজ্যে আমাদের বৃহত্তর ঐক্য গড়াই আমাদের লক্ষ্য। গত পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়েছিল এই নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য বৃহত্তম ঐক্য তুলতে হবে। আমাদের রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বাড়তি মাত্রা আছে— সম্ভাব্য বৃহত্তর ঐক্য। কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস তার যা ভূমিকা, তার যে শ্রেণি চরিত্র, তার সন্ত্রাস, তার যা দুর্নীতি, তার যা থ্রেট কালচার, তাতে সে ওই বৃহত্তর ঐক্যর অংশ হতে পারে না। আমাদের রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তাও গত পার্টি কংগ্রেসেরই গৃহীত সিদ্ধান্ত। কারণ, তৃণমূল নয়া ফ্যাসিবাদী প্রবণতার টুইন, প্রকাশ কারাত এদিন তা বলেছেন। আমাদের মানুষকে বোঝাতে হবে তৃণমূলের চরিত্র কী। এটি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই নয়। নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের গরিব শ্রমজীবী মানুষকে সংগঠিত করতে হবে।
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জানকবুল লড়াই করেছিল অনেকে। শহীদ হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কত লড়াই করে মনোনয়ন পেশ, ভোট লুট হলো, লুট আটকানোর চেষ্টা হলো। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমরা দেখেছিলাম গরিব মানুষের প্রতিশোধস্পৃহা। তাঁরা সব আমাদের শ্রেণির মানুষ। তৃণমূল-বিজেপি’র দুই মেরু বা বাইনারি কিছুটা ভাঙলো। আমরা কিছুটা অগ্রসর হলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে খেতমজুর, গরিব মানুষ, শ্রমজীবীরা, ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক সভার কর্মীরা গ্রামে গ্রামে পদযাত্রা করলেন। সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় মানুষ বেরিয়ে এলেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে আমরা বলেছিলাম শ্রেণির মানুষকে সংগঠিত করার কথা বলেছিলাম। শ্রেণি আন্দোলন বাড়িয়ে, শ্রেণি সংগঠনকে জোরদার করেই আমাদের এগতে হবে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যের সারের দাম, ধান বিক্রি নিয়ে, আলুর দাম, ফসলের ন্যায্য মূল্য নিয়ে কৃষকদের অনেক সমস্যা। খেতমজুরের বেশিরভাগ সময় কাজ নেই গ্রামে। পরিযায়ী শ্রমিক অনেক। গরিব মানুষ নানা অকৃষিকাজে যুক্ত হতে বাদ্য হচ্ছেন। গ্রাম গ্রামে-শহরে কাজের অভাব, পুরুষরা চলে যাচ্ছে বাইরে। শ্রমজীবী পরিবারগুলির মহিলাদের দুর্দশা বেড়ে চলেছে। তাঁদের উপর চাপ বাড়ছে। রাজ্যে ড্রপ আউট বাড়ছে। ড্রপ আউটের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ দেশে প্রথম স্থানে এখন। এই ছাত্রদের পাশে কী ভাবে আমরা দাঁড়াতে পারি আমাদের বিচার বিবেচনা করতে হবে। মহম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের এই অংশের মানুষের কাছে যেতে হবে। তাঁদের ভাষায় তাঁদের কথা বলতে হবে। বিভিন্ন ঘটনা ঘটলে আমরা ছুটে যাচ্ছি, ভালো। কিন্তু আমাদের শুধু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানালে হবে না। কোথায় কী ঘটছে, কোথায় কী হচ্ছে, তা আগে থেকে উপলব্ধি করে আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। বামদের বিকল্প তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের আন্দোলন সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আরএসএস অনেকটা অলক্ষ্যে তাদের কাজ করছে। তৃণমূল পঞ্চায়েত, পৌরসভা দখল করেছে। তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে তারা ব্যবহার করছে। এই সবের মাধ্যমে তাদের কাজ তারা করছে। আমাদের নেটে গিয়ে, হেঁটে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। শ্রেণি শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন আমরা ঘটাতে পারবো না যদি আমরা শ্রেণি সংগঠনগুলির মাধ্যমে, শ্রেণি আন্দোলনের পথে আমরা নতুনতর শক্তি সমাবেশ করতে পারি।
মহম্মদ সেলিম বলেন, আমরা চাই বিদেশি টাকা কোথা থেকে আসে, কার কাছে যায়, তা প্রকাশিত হোক। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের সময় তা হয়েছিল। কিন্তু এছাড়াও আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের মগজে ঢুকে পড়তে চাইছে উগ্র দক্ষিণপন্থার প্রচার। আমাদের মগজকে রক্ষা করতে হবে। এই শক্তির বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদী চক্রের বিরুদ্ধে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইকে একসূত্রে গাঁথতে হবে। এই লড়াইয়ে আমাদের নিজস্ব শক্তি বাড়াতে হবে। তাহলেই বাম ঐক্য শক্তিশালী হবে। যার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি’র বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে পারবো। আমরা কমিউনিস্টরা অতীতে বন্দি থাকি না। দক্ষিণপন্থীরা তাই করে রাখতে চায়। আমরা সম্মেলনে মিলিত হই অতীতের পর্যালোচনার ভিত্তিতে আগামীদিনের পথ নির্দেশিকা তৈরি করতে।
এদিনই খসড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদনের উপর প্রতিনিধিদের আলোচনা শুরু হয়েছে।
CP-IM STATE CONFERENCE
বৃহত্তর ঐক্য গড়ার সঙ্গেই পার্টির নিজস্ব শক্তি বাড়াতে হবে: সেলিম

×
Comments :0