মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য শীর্ষস্থানে উঠেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। দু’দিন পর সেই জায়গা ফের পুনঃরুদ্ধার করল মুম্বাই সিটি এফসি। নিজেদের ঘরের মাঠে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রথম স্থানে মুম্বাই (১৯ ম্যাচে (৩৯)। একইসঙ্গে বড় ব্যবধানে জিতে গোলপার্থক্য (১৭) বাড়িয়ে নিল মুম্বাই। বুধবার কেরালা ব্ল্যাস্টার্সের মুখোমুখি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। মুম্বাইয়ের জয়ে সবুজ মেরুনের উপর চাপ একপ্রকার বাড়ল, সেটা বলাই যায়। গোল পার্থক্য বাড়িয়ে, শীর্ষস্থান দখল করার চাপ। কেরালার ঘরের মাঠে জেতা সহজ হবে না মোহনবাগানের। তাঁরা যতই পাঁচ নম্বরে থাকুক না কেন! এবার প্রথম পর্বের খেলায় মোহনবাগানকে হারিয়েছে কেরালা।
সাপ-লুডোর লিগ। শেষ ল্যাপে রয়েছে লিগ। এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ তাঁদের কাছে। যারা খেতাবের দৌড়ে রয়েছে। পয়েন্ট নষ্ট হলেই, অন্য দল এগিয়ে যাবে। মোহনবাগান যদি পয়েন্ট নষ্ট করে, তাঁরা কিন্তু মুম্বাইয়ের থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়বে। কলকাতা ছাড়ার আগে হাবাস বলে গিয়েছেন, ‘শীর্ষস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে আমাদের উপর কোনও চাপ নেই। ধাপে ধাপে এগানোর কথা ভাবছি। আপাতত আমার দলের কেরালা ম্যাচ জেতাই একমাত্র লক্ষ্য।’ ক্লান্তিও একটা ফ্যাক্টর হতে চলেছে মোহনবাগানের জন্য। বড় ম্যাচ খেলার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে মোহনবাগানের। তাঁদের ফুটবলাররা রিকভারির কোনও সুযোগ পায়নি। যা চিন্তায় রাখছে হাবাসকে। আইএসএলের সূচিকে এদিন তুলোধনা করলেন হাবাস। বললেন,‘ দু’দিন পর ফের আরও একটি ম্যাচ আমাদের খেলতে হচ্ছে। এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না আমি। আমরা সবাই পেশাদার। আমাদের নিয়ম মেনেই মাঠে নামতে হবে। তবে নিয়ম সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত।’
ময়দানের একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, ডার্বির পরের ম্যাচে সবসময় কঠিন হয়ে পড়ে। ২০২১ সালে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে জিতেছিল হাবাসের এটিকে মোহনবাগান। পরের ম্যাচেই মুম্বাই সিটির এফসির কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিল হাবাসের দল। ফলে বাড়তি সতর্ক থাকবে বাগান। যদিও সেবারের পরিস্থিতি এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। হাবাসের হাত পড়ে মোহনবাগান দলটাই পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। দুর্ধর্ষ ছন্দে রয়েছে। একটানা সাত ম্যাচে অপরাজিত। চারটে জয়, তিনটি ড্র। শেষ তিন ম্যাচে গোল খেয়েছে মাত্র একটা। দলের আক্রমনভাগের ফুটবলাররা তুখোড় ছন্দে। গোলের মধ্যে আছেন দিমিত্রি পেত্রাটোস, জেসন কামিন্স। লিস্টন কোলাসোরা। ভালো খেলছেন মনবীর, কাউকো, সাহাল আব্দুল সামাদরা। তাই, যে কোনও দলের পক্ষেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলা কঠিন। গতবার কেরালার বিরুদ্ধে মোহনবাগানের জার্সি গায়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেত্রাটোস। এরপর থেকে তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দলের প্রধান ম্যাচ উইনারের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। যা ধারাবাহিকতা তিনি দেখাচ্ছেন মোহনবাগানের জার্সি গায়ে, একসময় যা দেখাতেন জোসে রামিরেজ ব্যারেটো, ওডাফা, সনি নর্ডি ও রয় কৃষ্ণারা। ময়দানে গেলে একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়, মোহনবাগানে বিদেশি ফুটবলাররা দাঁড়িয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে পেত্রাটোসের চেয়ে বড় উদাহরণ কেউ নেই। দিমিত্রির নির্দিষ্ট কোনও পজিশন নেই। পুরো মাঠ জুড়েই তাঁকে খেলতে যাচ্ছে। দলকে সবরকম ভাবে সাহায্য করছেন তিনি। কাউকো আসায় আরও সুবিধা হচ্ছে মোহনবাগানের। তবে তাঁর দমের অভাব হচ্ছে। ৬০ মিনিটের পর খেলার মতো জায়গায় থাকছেন না তিনি। কেরালা ম্যাচ জিততে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে দিমিত্রি, কাউকোকেই। এই ম্যাচে ফিরছেন দীপক টাংরি ,সুমিত রাঠিরা। ফলে হাবাসের হাতে আরও বিকল্প বাড়ল।
কেরালাকে সমীহ করছেন হাবাস। কেরালার মাঠ সবসময় দর্শকপূর্ণ থাকে। একপ্রকার ডার্বির মতো আবহ থাকে। কেরালার গিয়ে নিজেদের সমর্থকদের সমর্থন পাবে না মোহনবাগান। এমন পরিবেশে খেলাটা একটু কঠিন। হাবাসের কথায়, ‘আইএসএলে কেউ সহজ প্রতিপক্ষ নয়। প্রত্যেক দলের বিরুদ্ধে নামার আগে তাঁদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আমাদের কৌশলী হতে হবে। ম্যাচ বের করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ অন্যদিকে, কেরালা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তাঁদের পক্ষে লিগ শিল্ড জেতা কার্যত অসম্ভব। শেষ কয়েকটি ম্যাচে তাঁদের খেলায় ধারাবাহিকতায় অভাব দেখা গিয়েছে। বেঙ্গালুরু এফসির কাছে হেরেছে। তবে ঘরের মাঠে তাঁরা মোহনবাগানকে হারিয়ে জয়ের ফিরতে মরিয়া কেরালা।
মোহনবাগান: কেরালা
(ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা)
Isl
মোহনবাগানের চিন্তা ক্লান্তি
×
Comments :0