NCERT

এনসিইআরটি’র ছাঁটাইয়ের কোপে পর্যায় সারণি থেকে পরিবেশ

জাতীয়

NCERT

বিবর্তনবাদের মতো বৈজ্ঞানিক ধারণা বাতিলের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে বিদায় দেওয়া হচ্ছে পর্যায় সারণির মতো মৌল জ্ঞানকেও। বিজ্ঞান থেকে ইতিহাস, সাহিত্য থেকে সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচিতে দেদার ছাঁটাই করছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং(এনসিইআরটি)। নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশে পরিবর্তনের বিশদ তালিকা প্রকাশ করেছে তারা। এই পরিবর্তনকে ‘পুনর্বিন্যাস’ নামে অভিহিত করে শিক্ষার্থীর বোঝা কমানোর যুক্তি পেশ করছে তারা। 
বিজ্ঞানে বিবর্তনবাদ বাদ দেওয়াকে যেমন ‘বায়োলজিকে বাদ দিয়ে বায়োলজি পড়ানো’ বলে অভিহিত করেছিলেন বিজ্ঞানী মহল, তেমনই পর্যায় সারণি বা পিরিয়ডিক টেবল বাদ দেওয়ায় তাঁরা বিস্মিত। মৌলগুলির ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের আলোচনায় অত্যন্ত জরুরি এই সারণি রসায়নে অন্যতম সেরা অবদান। এই সারণি না পড়লে ভিন্নধর্মী বস্তু কী করে একসঙ্গে কাজ করছে তা বোঝা কঠিন। এ সংক্রান্ত অধ্যায় বই থেকে সম্পূর্ণই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও চৌম্বকশক্তি নিয়ে মাইকেল ফ্যারাডের অবদানও বাদ।

খুবই বিস্ময়কর ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে শক্তির উৎস ও তার ব্যবহার সংক্রান্ত যাবতীয় পরিচ্ছেদ। ফসিল জ্বালানি থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত অধ্যায় সব শ্রেণিতেই বাদ। এমন সময়ে এইসব বাদ যাচ্ছে যখন সমগ্র বিশ্বেই তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশাল সায়েন্সের অধ্যাপক মৈথিলী রামচাঁদ বলেছেন, জল, বায়ু দূষণ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা বাদ দিয়ে দেওয়া হলো। জল সংরক্ষণ, বায়ুদূষণ এই সময়ে বাদ দেওয়া বিস্ময়কর। বস্তুত ‘জলবায়ু’ ও ‘পরিবেশ’ সংক্রান্ত প্রায় সব অধ্যায়ই বাদ পড়েছে। 
ইতিহাসের ক্ষেত্রে মোঘল সাম্রাজ্যের অংশ পুরোই বাদ পড়েছে। এনসিইআরটি’র চলতি বিয়ে ৩০ পৃষ্ঠা এই বিশাল পর্বের জন্য বরাদ্দ ছিল। তা বাদ পড়ল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে জনচরিত্রের আন্দোলন যা ‘পপুলার মুভমেন্টস’ বলে পরিচিত, তা ছাঁটাই করা হয়েছে। ঠান্ডা যুদ্ধের পর্ব বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্যের অধ্যায় ছাঁটাই হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে ‘গণতন্ত্র ও বৈচিত্র্য’ অধ্যায়টি। ভারতীয় সমাজের গঠন বুঝতে যা খুবই প্রয়োজনীয়। রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত অধ্যায়ও আর পড়ানো হবে না।


এনসিইআরটি প্রথমে কোভিড মহামারিতে বোঝা কমানোর যুক্তি দেখিয়েছিল। এখন তাদের বিবৃতিতে এই যুক্তি পালটে গিয়ে হয়েছে ‘বোঝা কমানো’। শিক্ষার্থীরা যা পরে পড়ার সুযোগ পাবে, তা এখনই না পড়ালেও চলে-এই বিচিত্র যুক্তি নিয়েই এগিয়েছে তারা। যার ফলে পূর্ণ অধ্যায় ছাড়াও অসংখ্য কাটছাঁট হয়েছে গণিত, ভৌতবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্যে। যুক্তিবিন্যাস করাই অসম্ভব হয়ে উঠবে, এমন ভাবে বাদ দিয়েছে অঙ্কের বহু বিষয়। ভারতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক, তার পরে নয়। স্কুল ছাত্রদের যে বিজ্ঞান শেখানো হচ্ছে, তা যদি অর্ধ-বিকৃত চেহারায় থাকে তাহলে তার পরিণতি খারাপ হতে চলেছে বলেই বিশিষ্টরা মত দিয়েছেন। 
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা সুচেতা মহাজন বলেছেন, যুক্তিবাদী চিন্তা, জ্ঞানদীপ্তি, পশ্চিমে শুরু হওয়া ভাবধারা থেকে সরিয়েনেওয়া হচ্ছে শিক্ষাকে। আসল লক্ষ্য ইতিহাস বিকৃতি। শিকার হচ্ছে বিজ্ঞানও।

Comments :0

Login to leave a comment