MAHESH MOHLI MIGRANT WORKER

বিনা মজুরিতে বন্দি ছ’মাস, যেন দাস শ্রমিক হয়ে ছিলেন মহেশ

জেলা

মহেশ মোহলি।

শঙ্কর ঘোষাল
মহেশ মোহলি। ঝাড়খণ্ডের দুমকার এই যুবক গিয়েছিলেন হায়দরবাদে রোজগারের আশায়। ফিরেছেন ফাঁকা পকেটে, কোনওরকমে পালিয়ে। লরিতে উঠে, হেঁটে পৌঁছেছিলেন মেমারির কাছে দেউলে গ্রামে। 
গ্রামবাসীরাই দিয়েছেন খাবার, টিকিট কেটে দুমকার ট্রেনেও তুলে দিয়েছেন। দাসশ্রমিকের মতো বন্দি হয়ে থাকা এই পরিযায়ী শ্রমিক যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন পাশে দাঁড়ানো গ্রামবাসীদেরই। উঠে আসছে ভারতের ভয়াবহ বাস্তবতার ছবি।
পয়সা নেই কেন? কেনই বা পালাতে হলো?
মোহলি বলছেন, ‘‘হায়দরাবাদে একটা হাসপাতাল হচ্ছিল। গ্রামের থেকে যারা গিয়েছিলাম একসঙ্গে থাকতে দেওয়া হতো না। আলাদা আলাদা জায়গায় রাখা হতো। আর উঁচু দেওয়ালের বাইরে বেরতে দেওয়া হতো না। সপ্তাহ শেষে পঞ্চাশ একশো টাকাও মিলত না।’’
দুমকার রামগড় থানা এলাকায় বাড়ি মোহলির। ‘‘সঙ্গে ছিল আধার কার্ড। পালানো ছাড়া উপায় কী। টানা ছ’মাসেও পকেটে নেই কানাকড়ি’’, বলেছেন এই শ্রমিক। হায়দরাবাদের নির্দিষ্ট জায়গার নাম বলতে পারছেন না।
সঙ্গে ছিলেন আরও দু’জ। তাঁদের একজন ওডিশার, অপরজন এ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসিন্দা। 
পালালেন কিভাবে, মেমারিতে পৌঁছালেন কী করে মহেশ?
তিনিই দেউলের বাসিন্দাদের বলছেন, ‘‘গার্ডদের কয়েকজন খুব ভালো ছিল। সেজন্যই পালাতে পেরেছি। কোনওরকমে একটা লরি ধরি। আধার কার্ড সঙ্গে থাকায় নিতে রাজি হয়। নামি ডানকুনিতে। খুব খিদে পেয়ে গিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে গ্রামে চলে এসেছি।’’ 


দেউলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উসকো খুসকো চেহারায় একজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তাঁরা। তখনই জানতে পারেন অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয়নি। তাঁরাই খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। 
হায়দরাবাদ থেকে ডানকুনির দীর্ঘ পথে খাওয়া মিলল কিভাবে? মহেশ বলছেন, ‘‘লরির ড্রাইভার খুব ভালো ছিল। নিজে যা খেত আমাদেরও খেতে দিত। রাস্তায় খাওয়ার অসুবিধা হয়নি।’’
দুমকা পর্যন্ত ট্রেনের টিকিট কেটে দেওয়া হয়েছে মহেশ মোহালিকে। পৌঁছে যাবেন বাড়িতে। কিন্তু তারপর করবেন কী? ছ’মাস পরিবারের যাঁরা টাকার অপেক্ষা করছেন, কিছু তো দিতে পারবেন না তাঁদের। ফের খুঁজবেন কাজ, মিলবে কিনা জানা নেই। 
গ্রামে কাজ নেই, খুব কম মজুরি। এই এলাকারও বহু বাসিন্দাকে কিছু বাড়তি মজুরির খোঁজে চলে যেতে হচ্ছে অন্য রাজ্যে। তারপর তাঁদের অনেকেই ফিরছেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঠিক ক্রীতদাসের মতো ব্যবহারের মুখে পড়তে হচ্ছে। সূর্য উঠতে না উঠতেই পাঠানো হচ্ছে ধান রুইতে। একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা কাজ। নিজেদের গ্রামে এক একরে ২৫ জন কাজ করেন। সেই কাজ তোলা হচ্ছে ৬ শ্রমিককে দিয়ে। সেই তুলনায় মিলছে সামান্যই মজুরি। 
কিভাবে, কোন যোগাযোগে যাচ্ছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা?
মহেশ বলেছেন, ‘‘ঠিকদার নিয়ে গিয়েছিল। তবে নাম ঠিক জানি না। ‘সমীর’ বলতে শুনেছি। একটা পয়সা দেয়নি।’’ 
করোনা মহামারীর সময় নরেন্দ্র মোদীর আচমকা লকডাউনের ঘোষণা দেখিয়েছিল আসলে কতটা বিপদে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকরা। কোনও সুরক্ষাই নেই, তাঁদের ভালোমন্দ দেখার জন্য কোনও নজরদারিই নেই। তাঁদেরই বিপুল শ্রম থেকে শুষে নেওয়া হচ্ছে মুনাফা। এই বৃত্তান্তই ফের মনে করিয়ে দিলেন মহেশ মোহলি, দেখালেন ‘বিকশিত ভারত’ আসলে কেমন।

Comments :0

Login to leave a comment