অনন্ত সাঁতরা ও শুভ্রজ্যোতি মজুমদার: সিঙ্গুর মোদী মমতা ব্যানার্জির প্রচারের জলুস নয়, নিজেদের জীবনের দুর্দশার দিকে তাকিয়ে লোকসভা নির্বাচনে রায় দিতে মানুষের কাছে আবেদন করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার হুগলী জেলার সিঙ্গুর এবং চন্দননগরে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়ে তিনি বলেছেন, আকাশের হেলিকপ্টারের দিকে তাকাবেন না, নিজেদের পরিবারের সমস্যা আর দুর্দশার দিকে তাকান। মোদী এবং মমতা ব্যানার্জির আগের গ্যারান্টি বুজরুকিতে পরিণত হয়েছে। এখন আবার গ্যারান্টি দিচ্ছে। ওই বুজরুকিতে ভরসা রাখবেন না।
বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুর্দশার কথা উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, ‘‘দেশকে বাঁচাতে কংগ্রেসের এবং সিপিআই(এম)’র ইশ্তেহারের দিকে তাকান, মানুষের সমস্যার কথা ওখানেই বলা হয়েছে। আমরা বামপন্থীরা বাংলার মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করিনি। লাঙল যার জমি তার বলেছিলাম। সরকারে এসেই ভূমি সংস্কার করেছিলাম। কৃষির উন্নতিকে মজবুত করে শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করেছিলাম। আর মমতা ব্যানার্জি সরকারে আসতেই এলাকায় এলাকায় মুক্তাঞ্চল করে সন্দেশখালির মতো জমি ভেড়ি দখল করেছে তৃণমূল। মোদী লাভজনক কারখানা থেকে নদী জঙ্গল জমি বেচে দিচ্ছে কর্পোরেট বন্ধুদের। আমরা রাজ্যে স্কুল করেছিলাম, এখন বিজেপি-তৃণমূলের নীতিতে স্কুল বন্ধ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই। শিক্ষার প্রসার নয়, ধ্বংস করছে। সব উলটো দিকে হাঁটছে। এর জন্যই ওরা কংগ্রেস-মুক্ত ভারত আর কমিউনিস্ট-মুক্ত বাংলার কথা বলেছিল।’’
সেলিম বলেছেন, মানুষের অধিকার ফিরে পেতে হবে। লোকসভা নির্বাচন মানে সরকারের নীতি পরিবর্তনের লড়াই। লোকসভায় মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত করতে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের প্রার্থীদের পাঠাতে হবে। তিন দফার ভোটে বিজেপি-তৃণমূলের দফারফা হয়ে গিয়েছে। পায়ের তলা থেকে তৃণমূলের মাটি সরে গিয়েছে, তাই আবোলতাবোল বকছে। পুলিশ প্রশাসনের দলীয় ব্যবহার আর অনুব্রতদের বাহিনী ছাড়া তৃণমূল চলতে পারে না। তবুও মুর্শিদাবাদে শান্তিতে ভোট হয়েছে, মস্তানরা ডানা ঝাপটাতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জি জেনে রাখুন, বাজপাখি উঁচুতে থাকে, শিকার ধরতেও জানে। রাজ্যের অন্য জায়গাতেও ওদের মস্তানদের ডানা ঝাপটাতে দেবেন না, নিজের ভোট নিজে দেবেন। টিভির প্রচারে কান দেবেন না, ভোটের আগে পর্যন্ত ট্রেনে, বাসে, বাজারে, চায়ের দোকানে মানুষের সঙ্গে নিজেরা কথা বলুন। চোরকে চোর বলায় সাহস দিন।
রবিবার হুগলী লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী মনোদীপ ঘোষের সমর্থনে সিঙ্গুরে মহামিছিলে অংশ নেন মহম্মদ সেলিম সহ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ ও বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক, মহিলা সর্বস্তরের মানুষ শামিল হন এতে। সুসজ্জিত মহামিছিল সিঙ্গুর দুর্লভপাড়া মোড় থেকে শুরু হয়ে সিঙ্গুর বাজার বুড়ো শান্তির রেলগেট পার হয়ে রতনপুর আলুর মোড়ে শেষ হয়। উদ্দীপ্ত এই মিছিল দেখতে সিঙ্গুর বাজারে বিপুল মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। দোকান বাজার থেকে উৎসুক মানুষ, পথ চলতি মানুষ মোবাইল ফোনে মিছিলের দৃশ্য ধরে রাখেন। মিছিলে ছিলেন মহম্মদ সেলিম, অভিনেতা বিমল চক্রবর্তী, কবি মন্দক্রান্তা সেন, চিত্র পরিচালক অরুনাভ গাঙ্গুলি সহ বিশিষ্ট সমাজ কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ সহ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ। মিছিল রতনপুর আলুর মোড়ে পৌঁছালে সংক্ষিপ্ত সভায় ভাষণ দেন মহম্মদ সেলিম, প্রার্থী মনোদীপ ঘোষ, মন্দাক্রান্তা সেন প্রমুখ।
চন্দননগরে সার্কাস মাঠে জনসভায় সেলিম বলেন, বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে দশ বছর সময় কাটিয়ে মোদী এখন নতুন করে গ্যারান্টি দেওয়ার ভান করছেন। কালো টাকা আনার বদলে নোটবন্দি করে মানুষের সর্বনাশ করেছেন উনি। আর মমতা ব্যানার্জির দল সব ক্ষেত্রে অবাধে চুরি করে মানুষের সর্বনাশ করেছে, চাকরি প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন। দিল্লিতে চৌকিদার বসে থাকায় অবাধে দুর্নীতি চালিয়েছে তৃণমূল, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি দুর্নীতির শিকড়ে হাত দেয়নি। দুই দল মিলে ধর্মকে বর্ম করে লুট দুর্নীতি চালিয়েছে, আর মানুষকে ধর্ম, ভাষা, জাতের নামে ভাগাভাগি করেছে। ওদের কাছে উন্নয়ন মানে কেবল মোদী এবং মমতার ছবি লাগিয়ে প্রচার করা। এবার এসবের জবাব দেওয়ার পালা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম)’র হুগলী জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। এ ছাড়াও ভাষণ দেন সিপিআই নেতা তিমিরবরণ ভট্টাচার্য, আরএসপি নেতা মৃন্ময় ভট্টাচার্য, মহিলা নেত্রী মঞ্জুশ্রী গুহ, কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরি। সভায় সভাপতিত্ব করেন পিনাকী চক্রবর্তী। এদিন সকালেই শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের সমর্থনে কোন্নগর বাটা থেকে ক্রাইপার রোড, নৈটী রোড হয়ে বাঁশাই কলোনি পর্যন্ত মিছিল হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহম্মদ সেলিম, কৃষক আন্দোলনের সর্বভারতীয় নেতা বিজু কৃষ্ণন সহ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।
Md Salim Hoogly
কপ্টার দেখে নয়, নিজেরর সমস্যার দিকে তাকিয়ে ভোট দিন: সেলিম
×
Comments :0