CPI-M State Conference

রাজ্যে গণ ও শ্রেণিসংগ্রামে অগ্রগতি, আরজি কর লড়াইকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন কারাত

রাজ্য

শনিবার ডানকুনিতে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করছেন প্রকাশ কারাত।

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিলেন প্রকাশ কারাত। গত তিন বছরে এ রাজ্যে শ্রেণি ও গণসংগ্রামে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রগতিকে চিহ্নিত করেছেন তিনি। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানান এ রাজ্যের বামপন্থী শক্তিকে। 
শনিবার ডানকুনিতে সিপিআই(এম) ২৭ তম রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পার্টি পলিট ব্যুরোর কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত। কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নগর এবং মরেড সীতারাম ইয়েচুরি মঞ্চে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের কমিউনিস্ট ও বাম আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সবসময়েই সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখনকার পরিস্থিতিতে এরাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল দুয়ের বিরুদ্ধেই বামপন্থীদের লড়াই করতে হচ্ছে, কারণ এরাজ্যে দুর্নীতি–দুষ্কৃতী শাসন চলছে। বামপন্থী কর্মীরা হিংসাত্মক আক্রমণের মুখে পড়ছে। তার মধ্যেও বিগত তিন বছরে এরাজ্যে সিপিআই(এম) শ্রেণি ও গণসংগ্রাম সংগঠিত করতে অগ্রগতি ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, আর জি কর আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকার জন্য অভিনন্দন। 
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরিপ্রেক্ষিত উল্লেখ করে প্রকাশ কারাত বলেছেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে ফের বসেই ট্রাম্প এমন সব সিদ্ধান্ত ঘোষণা শুরু করেছেন যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে টালমাটাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যে স্তিমিত দ্বন্দ্ব নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে, বিশ্বে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলির দ্বন্দ্ব এবং সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে। গাজায় মানুষকে উৎখাত করে দখলের মন্তব্য করে কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের পক্ষে জাতিস্বাভিমানি ঘোষণায় সেদেশে সব সাহায্য বন্ধের ঘোষণা বুঝিয়ে দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। অন্যদিকে চীনের বিরুদ্ধে টারিফ এবং ট্রেড ওয়ারের হুমকি দিয়ে সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সংঘাত তীব্র করার ইঙ্গিতও দিচ্ছে। এটাই বিশ্ব রাজনীতিতে ‘ট্রাম্পইজম’এর প্রভাব। 
নয়া উদারনীতির সঙ্কটে কীভাবে নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশ কারাত। তিনি বলেছেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোথাও গত শতাব্দীর তিরিশের দশকের ফ্যাসিবাদের উত্তরসুরী হিসাবে, আবার কোথাও অন্য রূপে নয়া ফ্যাসিবাদ মাথা তুলছে। তবে এর মানে এই নয় যে বামপন্থীরা পরাস্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, মেক্সিকো এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কাতে বামপন্থীরা সরকারে আসীন হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদী মদতে দক্ষিণপন্থী ইসলামিক মৌলবাদীরা ক্ষমতায় বসেছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ধারণাকে আক্রমণ করছে। 
কারাত বলেছেন, ভারতে বিজেপি আরএসএস বাংলাদেশের ঘটনা ঘিরে যে প্রচার করছে তা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাঁচাতে নয়, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের আক্রমণ করতে। 
ভারতের মোদী সরকারকে বিশ্বব্যাপী চরম দক্ষিণপন্থীদের অংশ হিসাবে চিহ্নিত করে প্রকাশ কারাত বলেছেন, তৃতীয় দফায় সরকারে আসীন হয়ে মোদী সরকার ভারত রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ব কায়েম করার কাজে এতটুকুও ক্ষান্তি দেয়নি। নয়া উদারনীতি রূপায়নেও তারা যে তীব্রভাবে এগোতে চায় তাও এবারের বাজেটে স্পষ্ট। ট্রাম্প যেভাবে এলন মাস্ককে সরকারি ক্ষমতায় ভাগীদার করে তুলেছেন, সেভাবেই মোদীও তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের লুটের খোলা বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন। তাছাড়া স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে দখলদারি করছেন, বিরোধীদের জেলে পুরছেন, টাকার ব্যবহার ও মিডিয়া এবং নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচনেও জিতছেন। নয়া ফ্যাসিবাদীরা এভাবেই সংসদীয় ব্যবস্থাকে খাতায় কলমে জিইয়ে রেখেই ক্ষমতা দখল করে। ভারতে সেই নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে, এখনই সতর্ক হয়ে তাকে থামাতে হবে। 
কারাত বলেছেন, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ গঠনের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করে বিজেপি’র সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন ঠেকানো গেছে। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির বৃহত্তর ঐক্য এর জন্যই জরুরি। কিন্তু সিপিআই(এম)’র স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি ও বামপন্থীদের শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। আরএসএস’এর সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ এখন দেশের নানা প্রান্তে জনভিত্তি পেয়েছে। এই আদর্শের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে সিপিআই(এম)’র স্বাধীন শক্তি ও বামপন্থীদের শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

Comments :0

Login to leave a comment