নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ‘প্যান্ডোরা বক্স’র মত, কেউটের ঝাঁপি। যত খোলা হচ্ছে ততই নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র পাশাপাশি আরও অনেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বুধবার আদালতকে জানালো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে আরও একপ্রস্থ রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই, ইডি— দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল। এদিন এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিচারপতি সিনহা সিবিআই’র কাছে জানতে চান তদন্ত কবে শেষ হবে। তদন্তের গতি না বাড়ালে কোনও কিছুই শেষ করা যাবে না। এই সময় ইডি’র তরফে আদালতকে জানানো হয় ‘আমরা আরও বহু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছি। বেশ কিছু নতুন নাম মামলায় যুক্ত হয়েছে। এই নামগুলি এখনই আমরা আদালতকে জানাচ্ছি না।’ এই সময়েই বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানতে চান ‘আপনারা কি টাকার সোর্স পেয়েছেন?’
সিবিআই’র তরফে আদালতকে জানানো হয়, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের খোঁজ করতে গিয়েই পৌরসভায় নিয়োগের দুর্নীতির খোঁজ পাওয়া যায়। এই পৌর নিয়োগ দুর্নীতির খোঁজে গিয়ে রেশন দুর্নীতি সামনে চলে আসে। ফলে এই গোটা দুর্নীতির মধ্যে অনেক নতুন নাম এসেছে। আরও অনেক অনেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই সময়ই বিচারপতি সিনহা বলেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর নমুনার রিপোর্ট পেয়েছেন? দু’মাস হয়ে গেল কণ্ঠস্বরের রিপোর্ট কোথায়? সিবিআই জানিয়েছে, ওই রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র ৮টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তির পরিমাণ সাড়ে সাত কোটি টাকা। সরকারি মদতেই সাজানো হয়েছিল দুর্নীতির নকশা, প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল পর্ষদ। আর সেই দুর্নীতির টাকা খেটেছিল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস!
ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি এখনও এই কোম্পানির সিইও। যদিও গত আট বছর ধরে সেই তথ্য চেপে রেখেই দু-দুটি লোকসভার ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। এই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’র আগের ঠিকানাও ছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিকানা অর্থাৎ ৩০/বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে কোম্পানির প্রথম ডিরেক্টর হিসাবে অভিষেক ব্যানার্জি, তাঁর মা লতা ব্যানার্জি এমনকি পরবর্তীতে রজিরা নারুলা ব্যানার্জিও এই ৩০/বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঠিকানাই উল্লেখ করেছিলেন। তবে নতুন কী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে তা ইডি জানালেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরে ওই সংস্থার নির্দিষ্ট একটি সম্পত্তি যা আসলে অভিষেক ব্যানার্জির অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তা বাজেয়াপ্তের তালিকা বাইরে রয়েছে বলেই জানা গেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও অভিষেক ব্যানার্জির সম্পত্তির যে তালিকা আদালত জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল, সেই তালিকায় ইডি তাঁর কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যই উল্লেখ করতে পারেনি! সেই অসম্পূর্ণ রিপোর্টে ক্ষুব্ধ হয় আদালত। আদালত প্রশ্ন তোলে, মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস কীসের ব্যবসা করে? সংস্থার আয় হয় কোথা থেকে? নির্দিষ্ট ভাবে কীসের ব্যবসা? আদালতের নির্দেশ ঠেকাতে বিস্তর আইনি লড়াই চালিয়েছেন অভিষেক ব্যানার্জি। যদিও তদন্তের আওতা থেকে বেরোতে পারেননি তিনি। ডিসেম্বরে অভিষেক ব্যানার্জি ৫ হাজার ৫০০ পাতার নথি ইডি’র কাছে জমা দেন।
Recruitment scam case
নিয়োগ দুর্নীতিতে আরও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডি’র
×
Comments :0