Md Salim

ইডি-সিবিআই’র ‘মুষিক প্রসব’ আসলে রাজ্যবাসীকে অপমান

রাজ্য

  দুর্নীতির মামলায় বারেবারে ইডি-সিবিআই’র ‘মুষিক প্রসব’ রাজ্যের মানুষের প্রতি অবমাননা। বুধবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই অভিযোগ করে বলেছেন, আইনকে বেলাইন করার বিরুদ্ধে আগামী ৫ অক্টোবর সিবিআই’র দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্সে অভিযান করবে সিপিআই(এম)। আমাদের লক্ষ্য স্থির, দল, রঙ না দেখে আইনকে আইনের পথে চলতে দিতে হবে, দুর্নীতির মাথাদের গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। 
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দু’দিনের অধিবেশন এদিনই বিকালে শেষ হয়েছে। তারপরে সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন আমরা করছি, পূর্বঘোষণা মতো তার কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আগেই বলেছিলাম, পুজোর আগে দুর্নীতির মাথাদের হেপাজতে নিয়ে তদন্ত সম্পন্ন করে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে সিবিআই-ইডি’কেও আমরা ছেড়ে কথা বলব না। কলকাতা হাইকোর্টও ইডি-সিবিআই’কে প্রশ্ন করছে, চার্জশিট হচ্ছে না কেন? রাজ্যপাল রাত বারোটায় কী ঘটাবেন বলে অনেক প্রচার হলো, তারপরে পর্বতের মুষিক প্রসবও হলো না! ইডি-সিবিআই ডাকছে, কিন্তু কিছুই করছে না! রাজ্যের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি চায়, এটা তাঁদের প্রতি অবমাননা। 
কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের যোগসাজশেই অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, তৃণমূল আর বিজেপি এমন প্রচার করে যেন তাদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। আর যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাজ্যের প্রকল্প রূপায়ণের জন্য দিল্লিতে যান না, পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে যান না, কিন্তু তিনিই ডিনার খেতে দিল্লি চলে গেলেন! কেমন আশ্রয় ও প্রশ্রয় সেখান থেকে পেলেন যে নিশ্চিন্তে বিদেশ সফরে চলে গেলেন! আমরা জনতার আদালতে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির দাবি করছি, কে কার সঙ্গে ডিনার খেলো, কোন দুর্নীতিগ্রস্ত দল বদলে পদ্মফুলে চলে গেল, এসব দেখে ইডি-সিবিআই তদন্তের লাইন ঠিক করলে চলবে না। আইনকে আইনের পথে চলতে দিতে হবে। তার জন্যই ৫ অক্টোবর সিবিআই দপ্তরে অভিযান হবে। আইনকে বেলাইন করতে দেওয়া যাবে না। 
তিনি বলেছেন, তার আগে সিপিআই(এম) কর্মীরা সারা রাজ্যে মানুষের কাছে যাবেন। স্থানীয় দাবি, মানুষের জীবনযন্ত্রণা ও সমস্যার কথা জেনে আন্দোলন সংগ্রামে তা তুলে ধরা হবে। বামফ্রন্ট সরকার পরিকল্পনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলেছিল, এখন আবার লোডশেডিং হচ্ছে। সেগুলিকে ‘লোকাল ফল্ট’ বলে ভুল বুঝিয়ে মানুষকে খেপিয়ে তোলা হচ্ছে বিদ্যুৎকর্মীদের বিরুদ্ধে। একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রের বারোটা বাজিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মানুষকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি, গণবণ্টন থেকে গণপরিবহণ সব ক্ষেত্রে সর্বনাশ ঘটানো হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণসংগঠন আন্দোলন করছে। সিপিআই(এম) তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে এবং তাঁদের সবার দাবিগুলিকে একত্রিত করে জোরদার করার চেষ্টা করছে। 
ইডি’র ডাক সত্ত্বেও তৃণমূল নেতারা অভিষেক ব্যানার্জিকে ‘ভীত নয়’, তিনি ‘বাঘের বাচ্চা’ বলে প্রচার করছে। সাংবাদিকদের এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, কোনও বাঘের ছানাকে বাঁচার জন্য কোটি কোটি টাকার উকিল দাঁড় করাতে হয় বলে আমার জানা নেই। অপরাধ যদি নাই করে থাকে তাহলে এত রক্ষাকবচের কী দরকার? অভিষেক ব্যানার্জি ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’ কোম্পানির সিইও, হলফনামায় তিনি মিথ্যা বলেছেন। একটা শেল কোম্পানির যার নিজস্ব কোন পণ্য নেই, বিক্রি নেই, তার বিপুল মুনাফা হয় কীভাবে? কেবল তোলাবাজি আর ঘুষের টাকা সরিয়ে। টেন্ডারের কমিশন থেকে নিয়োগের ঘুষ নিয়ে সেই টাকা আদানিদের মতো মরিশাস দুবাই রুটে পাচার করে আবার সেই কালো টাকা সাদা করে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ বলে ঘুরিয়ে আনার জন্যই কি বিদেশ সফর ? সেই টাকায় মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট করে ইমেজ তৈরির প্রচার? 
ইন্ডিয়া’র কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে অভিষেক ব্যানার্জির ‘চেয়ার ফাঁকা রাখা’ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, ফাঁকা চেয়ার রাখুক, আর পাদুকা রাখুক, আইনকে আইনের পথে চলতে দিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য স্থির, দুর্নীতিগ্রস্তদের মাথাদের আইনানুগ শাস্তি দিতে হবে। অপরাধীদের চেয়ার দেখিয়ে অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় কেবল তৃণমূল এবং বিজেপি’রই লাভ। মোদী জমানায় সংসদ ভবনের জলুস বাড়ছে, কিন্তু সংসদে ধর্ষক, দুষ্কৃতী, দুর্নীতিগ্রস্তদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, গরিবের সমস্যার কথা চাপা পড়ে যাচ্ছে। 
এদিকে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল বিরোধিতার জন্য নিচুতলার বামপন্থী কর্মীদের বিজেপি’তে যোগদানের যে আহবান জানিয়েছেন তার জবাবে সেলিম বলেছেন, উনি যখন তৃণমূলে ছিলেন তখন মাওবাদীদের সঙ্গে নিয়ে সিপিআই(এম) কর্মীদের খুন করিয়েছিলেন। এখন প্রীতি দেখাচ্ছেন? শুভেন্দু অধিকারী নিজের দল সামলাক। আমরা বলেছি, ‘চোর ধরো জেলে ভরো।’ বিজেপি বলেছে, ‘দলে ভরো’। মাতব্বর নয়, বিজেপি’র নিচুতলার এমন অনেক কর্মী সমর্থক এখন এগুলি বুঝে লালঝান্ডাকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সেলিম জানিয়েছেন, গত দেড় মাসের কাজের পর্যালোচনার পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর্যালোচনা চূড়ান্ত করা হয়েছে বৈঠকে। পার্টিতে যে ধারাবাহিক ত্রুটি সংশোধনের অভিযান চলছে তাতে বিভিন্ন কমিটিতে আত্মপর্যালোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে মতাদর্শ ও রাজনৈতিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমাদের পার্টি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের পার্টি, তাই ব্যক্তিজীবনও তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকছে কিনা স্বেচ্ছামূলকভাবে তার মূল্যায়ন করা হয়। রাজ্য কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর সঙ্গে পার্টিতে সহকর্মীরাও আচার ও জীবনযাপন সম্পর্কে মতামত দেবেন, নির্মোহ মতামত আমরা গ্রহণ করতে চাই।

 

Comments :0

Login to leave a comment