Salim in icds workers rally

মানুষের ক্ষোভের পারদ চড়ছে বলেই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে

রাজ্য

পরিস্থিতির বদল চাইছেন মানুষ। তাই দিকে দিকে তাঁরা লালঝান্ডা নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন। লুটে খাওয়াদের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়াদের লড়াই তীব্র হচ্ছে। এই লড়াই তৃণমূল–বিজেপিকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। তাই বামপন্থীদের আন্দোলন সংগ্রামে হামলা করা হচ্ছে। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে মানুষের ঐক্য ভাঙার চক্রান্তও চলছে। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্য ও লড়াইকে আরও তীব্র করে রাজ্যের অরাজক পরিস্থিতি বদলাতে হবে। বুধবার আইসিডিএস কর্মীদের এক সমাবেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
এদিন এসএন ব্যানার্জি রোডে, কলকাতা কর্পোরেশনের পাশে এই সভা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতি এই সমাবেশের আয়োজক ছিল। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সভানেত্রী রত্না দত্ত। আইসিডিএস কর্মীদের দাবিগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির সম্পাদিকা শীলা মণ্ডল প্রমুখ। 
মহম্মদ সেলিম সমাবেশে বলেন, তৃণমূলের চুরি, লুট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে ময়দানে লড়াই লড়ছেন বামপন্থীরাই। সে লড়াইকে একদিকে হামলা আক্রমণের মধ্যদিয়ে দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে দল দাসে পরিণত হওয়া পুলিশ। অন্যদিকে মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে কৌশলে আড়াল করে চলেছে কিছু মিডিয়া। তারা অহরহ তৃণমূল-বিজেপির বোঝাপড়ার ভিত্তিতে লোক দেখানো কাজিয়াকে তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এই বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেলিম।  
পুলিশের উদ্দেশে সেলিম বলেন, দাঙ্গা, হাঙ্গামা, সন্ত্রাস, সীমাহীন চুরি, লুট, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ‌আছড়ে পড়ছে দিকে দিকে। মানুষের সেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ আড়াল করতে শাসকদলের তাঁবেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না। সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষের মেজাজের পারদ ক্রমশ চড়ছে। সেটা অনুধাবন করে মানুষের ক্ষোভ লড়াইয়ের দিকগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরুন। মানুষের কথা শুনুন। না হলে এই অপচেষ্টার ভাগীদার হিসাবে মানুষের কাছে কড়া জবাবদিহি করতে হবে। 
সমাবেশ থেকে আইসিডিএস প্রকল্পে কর্মরতরা দাবি তুলেছেন এই প্রকল্পে স্থায়ী নিয়োগ চালু করার। কারণ বর্তমানে ৬৫ বছর বয়স হলে এই প্রকল্পে অবসর বাধ্যতামূলক করা হলেও স্থায়ী নিয়োগ চালু হয়নি। একজন কর্মীকে দু-তিনটি সেন্টারের কাজ করতে হচ্ছে। নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে সব কেন্দ্রের তথ্য পাঠাতে হয় রাজ্য সরকারের কাছে। তার জন্য যে স্মার্ট ফোনের দরকার হয় তা দেওয়া হচ্ছে না। কর্মীদের অভিযোগ ৮২৫০ টাকার বেতন থেকে নিজেদের খরচে ন্যূনতম দশ বারো হাজার টাকার ফোন কেনা সম্ভব নয়। ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে অবসরান্তে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দাবির আদায় পূরণ হলেও এখনও পেনশন প্রকল্প চালু হয়নি। শিশু ও মায়ের পুষ্টিকর খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রে যে টাকা সেন্টারগুলিকে দেওয়া হয় এই দুর্মূল্যের বাজারে ওই টাকায় পুষ্টিকর খাবার দেওয়া অসম্ভব বলেই জানাচ্ছেন প্রকল্পে যুক্ত কর্মীরা।
এদিন আইসিডিএস প্রকল্প ও প্রকল্পে যুক্ত কর্মীদের শোষণ বঞ্চনা উল্লেখ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পকে কার্যত তুলে দিতে চাইছে। বরাদ্দ কমিয়ে দিয়ে, কর্মীদের বেতন, সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে সরকার। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো এই প্রকল্পের টাকা নিয়েও রাজ্যে নয়ছয়  হচ্ছে। চাকরি চুরি, ত্রিপল চুরি, তোলাবাজি এসব তো চলছেই। গরিবের পুষ্টিও চুরি করে নিচ্ছে। এই ঘৃণ্য কাজ চলতে পারে না। এই চোরদের বিরুদ্ধে লড়াই তীব্রতর করতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে কে কোথায় কী খাচ্ছে সেটা নিয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা বাধানো হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা খাচ্ছেন না, দুমুঠো জোগাড় করতে পারছেন না, তাঁদের কথা? বামপন্থীদের লড়াই তাঁদের জন্য যাঁরা অভুক্ত, অপুষ্টিতে ভুগছেন। বিভিন্ন ধারার লড়াইয়ের পাশাপাশি  মানুষের খাদ্যের অধিকার, পুষ্টির অধিকারের লড়াইও সমানে চলছে। 
১৯৪৩-৪৪-র মন্বন্তরের উল্লেখ করে সেলিম বলেন, বর্তমানে যে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে বাংলার মসিহা রূপে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি সেই তিনিই তখন খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? তাঁর সময়েই কালোবাজারি, মুনাফাখোর শব্দগুলির বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছিল। সেই সময় সীমিত শক্তি নিয়েও মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য বামপন্থীদের কাজ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। কেন্দ্রের ও রাজ্য সরকারের ছলচাতুরির বিষয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেছেন, মোদী আচ্ছে দিনের প্রলোভন দেখিয়ে ছিলেন। অন্য দিকে মমতা ব্যানার্জি মানুষকে বলেছিলেন রাজ্যে পরিবর্তন আনলে তিনি নাকি সব করে দেবেন। তা কি হয়েছে? বরং ক্ষমতার মসনদে বসে লুটেরার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে তাদের। মানুষের সর্বস্ব লুট করে নেওয়া হচ্ছে। 
সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী সভায় বলেন, দিকে দিকে শাসকদলের বেলাগাম দুর্নীতি লুট নিয়ে মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। সেই ক্ষোভকে দমানোর যতই চেষ্টা হোক না তা দমানো যাবে না। সমস্যা সঙ্কট, জীবন যন্ত্রণায় দগ্ধ মানুষ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাইছেন। আইসিডিএস প্রকল্পে কর্মরতদের উদ্দেশে চক্রবর্তী বলেন, কেবল নিজেদের দাবি দাবিদাওয়ার লড়াই আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। বিভিন্ন ধারার লড়াইতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে আইসিডিএস প্রকল্পে যুক্তদের। 
সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জিও জীবিকার প্রশ্নে বিভিন্ন দাবি আদায়ের লড়াইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধারার লড়াইতেও শামিল  হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আইসিডিএস কর্মীদের। 
সমাবেশের পরে আইসিডিএস কর্মীদের দাবিগুলি নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে ডেপুটেশন দিতে যাওয়া হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল বৈঠকে থাকায় ডেপুটেশন তাঁর দপ্তরের আধিকারিকের কাছে দেওয়া হয়। রাজভবনে আইসিডিএস কর্মীদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন রত্না দত্ত, ইন্দ্রাণী মুখার্জি, মিতা ঘোষ, মাধুরী ব্যানার্জি, শিবানী ঘোষ। আইসিডিএস কর্মীদের দাবি ই-মেলে জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও। তাছাড়া রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার দপ্তরে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডাইরেক্টরেটেও ডেপুটেশন দেওয়া হয় বলে রত্না দত্ত জানিয়েছেন।

Comments :0

Login to leave a comment