Satya pal Malik

যে পুলওয়ামা হামলা করাতে পারে, সে রাম মন্দিরে বিস্ফোরণও করাতে পারে

জাতীয়

রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ঘোষণা করলেন এবারের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বীর শহীদদের বলিদানের স্মৃতিতে দেশজুড়ে ‘মেরি মাটি মেরি দেশ’ অভিযান হবে। শহদীদের স্মরণে হবে ‘অমৃত কলস যাত্রা’। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ৭৫০০ কলসিতে মাটি ভরে এবং গাছের চারা নিয়ে আসা হবে দিল্লিতে। ‘ওয়ার মেমরিয়াল’র পাশে হবে ‘অমৃত বাটিকা’ সেখানে সেই মাটিতে গাছের চারা রোপন করা হবে। গ্রামে গ্রামে শহীদদের স্মৃতিতে বিশেষ শিলালেখ বসানো হবে। 
আগামী লোকসভা ভোটের আগে শেষ স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে ‘শহীদ’দের সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আবেগে থর থর ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর ভণ্ডামির মুখোশ খুলে দিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর একটি সাক্ষাতকারের ভিডিও পোস্ট করে মালিক লিখেছেন, ‘ক্ষমতার জন্য এরা রাম মন্দিরে হামলা করাতে পারে, বিজেপি’র কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হত্যা করাতে পারে। যে পুলওয়ামা হামলা করাতে পারে, সে সবকিছু করাতে পারে’। 
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটের কিছুদিন আগেই জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধাসামরিক বাহিনীর কনভয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় নিহত হয়েছিলেন সিআরপিএফ’র ৪০ জন জওয়ান। সম্প্রতি তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক বিস্ফোরক অভিযোগ করে জানিয়ে ছিলেন, মোদী সেই দিন জিম করবেটে ফোটো শ্যুট করছিলেন। বহু কষ্টে তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করে মালিক জানিয়ে ছিলেন, আমাদের গাফিলতিতেই এত বড় ক্ষতি হলো জওয়ানদের। কারণ, আগেই জওয়ানদের জম্মু থেকে কাশ্মীরে পাঠানোর জন্য বিমান চেয়েছিলেন মালিক। মোদী সেই সময়ে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ বন্ধ রাখতে। তারপর নিহত জওয়ানদের জন্য দেশবাসীর আবেগ, ক্ষোভকে ব্যবহার করে ফের জয় পেয়েছিলেন লোকসভায়। 
রবিবার প্রধানমন্ত্রী জওয়ানদের নিয়ে ফের আবেগ ছড়ানোর কৌশল নিতেই পুলওয়ামার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন সত্যপাল মালিক। শুধু পুলওয়ামা নয়, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবারে নির্বাচনে জয়ের জন্য নির্মীয়মাণ রাম মন্দিরে হামলা বা বিজেপি’র কোনও বড় নেতাকে হত্যা করিয়ে সেই আবেগকে কাজে লাগাতে পারেন মোদী। ৪২ সেকেন্ডের ভিডিও’তে সত্যপাল মালিক বলেছেন, ‘আমার আশঙ্কা রাম মন্দিরে বিস্ফোরণ করিয়ে দিতে পারে। বিজেপি’র কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হত্যা করাতে পারে। সেই ক্ষমতা ওঁর আছে। যে পুলওয়ামা করাতে পারে, সে সবকিছুই করাতে পারে’। ওই ভিডিও’তে তিনি বলেন, ‘সংসদের কোনও পরোয়া মোদী করে না। তবে মোদী ভুল পথে চলছেন। আরও এক কদম এগিয়ে মালিক বলেছেন, ‘মোদী যদি এখনই ছেড়ে দেন, সেটাই ওঁর জন্য ভালো হবে। হেরে গেলে সম্মানটা কোথায় থাকবে? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি ২০২৪-এর ভোটে এরা জিতবে না।’ সত্যপাল মালিকের সাক্ষাৎকারের ভিডিও’টি কবের তা স্পষ্ট নয়। তবে মোদীর এদিনের কর্মসূচি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই যে তিনি তা পোস্ট করেছেন, সেটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হচ্ছে না। 
সত্যপাল মালিকের এই পোস্টের পরে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, কত ভয়ঙ্কর কথা বলে দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। আজ পর্যন্ত পুলওয়ামা হামলার ঘটনার জন্য দায়ী কারা, তা নির্দিষ্ট করা যায়নি। হামলা হয়েছিল, নাকি হামলা করানো হয়েছিল। উল্লেখ্য, মোদী-শাহ সহ বিজেপি’র তাবড় নেতারা সত্যপাল মালিকের এদিনের গুরুতর মন্তব্যের পরেও কোনও কথা বলেননি। যারা যে কোনও বিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন, সত্যপাল মালিক পুলওয়ামা হামলার প্রসঙ্গ তুলতেই মুখে কুলুপ এঁটে থাকছেন। এটা একটা বিস্ময়কর বিষয়। কিছুদিন আগে যখন সত্যপাল মালিক সরাসরি মোদীর বিরুদ্ধে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন পুলওয়ামা হামলা নিয়ে, তখনও মোদী-শাহ মুখ খোলেননি। এত গুরুতর অভিযোগ আনার পরেও সত্যপাল মালিকের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেননি। আরএসএস-বিজেপি’র বড় নেতা রাম মাধবের নাম করে কাশ্মীরে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ মালিক করেন। রাম মাধব প্রথমে ফোঁস করলেও পরে আশ্চর্যজনকভাবে নিজেকে গুটিয়ে নেন। 
সব মিলিয়ে আবারও গুরুতর প্রশ্ন উঠল পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে। কেন বিমানে করে জওয়ানদের কাশ্মীরে পাঠানোর প্রস্তাব চার মাস ধরে কেন্দ্রের সরকারের কাছে পড়ে রইল? কিভাবে একশো কেজি বিস্ফোরক বোঝাই করে একটি গাড়ি অবাধে কাশ্মীরের পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ালো, কেউ সেটাকে ধরল না। কিভাবে সেই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি অবলীলায় এসে সিআরপিএফ’র কনভয়ে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিল? কারা এই অপদার্থতার জন্য দায়ী? এসব কোনও প্রশ্নের জবাব আজ প্রায় ৫ বছর পরেও নেই। ভোটের আগের শেষ স্বাধীনতা দিবসের আগে প্রধানমন্ত্রী শোনাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে শহীদদের জন্য শিলালেখের কথা।

Comments :0

Login to leave a comment