Senior Education Center

বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে গুসকরা শহরে

জেলা

Senior Education Center ক্যাপশন - গুসকরা শহরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে মহিলাদের পড়াশোনা। ছবি - জলেশ্বর পাত্র


হৈ হৈ করে চলছে গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বজরাপুকুর পাড়ে বিনয় খাঁয়ের বাড়িতে বিদ্যাসাগর বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র। আর তাতেই ঘুম উড়ে গেছে তৃণমূলীদের। পড়ুয়াদের কথায় - ওরা ভেবেছে, আমরা আবার একজোট হয়েছি, ভুল ঠিক বুঝে নিচ্ছি। এটাই ওদের মাথা ব্যথা।
মাঝে করোনা মহামারী সময়ে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও পাড়ার বয়স্করা, নানা কাজে যুক্ত মহিলারা প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় জড়ো হচ্ছেন বিনয়ের বাড়িতে। কেউ গৃহবধূ তো কেউ পরিচারিকা আবার কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি দুধ বেচে দুধের ব্যবসা করে। টেলারিং এর কাজে যুক্ত আবার কেউ কেউ।


গৃহবধূ সীমা মাঝি বই পড়তে পড়তে জানালেন, আমরা এই কেন্দ্রে এসে অনেক উপকার পাই। ছেলে পিলে কে কিভাবে লেখাপড়া শেখাতে হবে, শরীর স্বাস্থ্য যত্ন নিতে হবে সব আলোচনা করি আমরা। বয়স্ক মহিলা সতী মাজি, গায়ত্রী মাঝি, পিংকি মাঝিও এই কথার সায় দিলেন। বাড়ি বাড়ি কাজ করে ক্ষান্ত খা জানালেন, সন্ধ্যে হলেই হাতটা নিশফিস করে কয়েকটা লাইন লেখার জন্য। কারণ সারাদিন লোকের বাড়িতে বাসন ধুয়ে হাতগুলো তো অন্য কাজই করতে চায় না। কিন্তু এইখানে আসার জন্য শুধু হাতগুলো নয় আঙুলগুলো খুসখুস করে লেখার জন্য। তাই এই ভালো লাগায় কাউকে ডরাই না।


দুই মেয়েকে নিয়ে বিধবা মহিলা জয়া গড়াই কে বই দেখে পড়তে বলায় খুব খুশি হয়ে গরগর করে পড়ে দিলেন। খুশিতে উজ্জ্বল মুখ। তিনি বলেন, আমরা এখানে এসে পড়া পড়া ছাড়াও রান্নাবান্না শরীর স্বাস্থ্য দেশের নেতা মন্ত্রীদের কাজ কারবার নিয়েও আলোচনা করি। ছোটবেলায় জানতাম না খেতে পেয়ে মানুষ চুরি করে। লেখাপড়া না শিখে মানুষ খারাপ কাজ করে। আর এখন যেসব খবর দেখছি আর চোখ কপালে উঠে যাচ্ছে খুব বিরক্ত হয়ে জানালেন, ময়না মাঝি, তাপসী মাঝিরা। বছর ৪০ এর বিপ্রা মাঝি জানালেন, লোকের বাড়ি দুধ দিয়ে সংসার আর ছেলেপুলে মানুষ করতে করতে যেটুকু লেখাপড়া বিয়ের আগে শিখেছিলাম - সে তো নষ্টই হয়ে গেছিল। কিন্তু পাড়ার এই বিনয় দার বাড়িতে যেদিন থেকে আমরা লেখাপড়া করছি,,আমাদের অভাব অনটন কষ্ট সব মাথা থেকে উড়ে গেছে। এখন এটাই আমরা জেনে গেছি- আমরা পারব। আর আমরা পারলে আমাদের ছেলেপেলেরাও মানুষ হবে। বুঝতে শিখবে - কে ঠকাচ্ছে। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্য তৈরি থাকার চেষ্টা করবে।


পেশায় কাঠমিস্ত্রি বিনয় জানালেন- বহু কষ্ট করে লোকের কাছে কাজ করতে করতে, যেটুকু মানুষ হয়েছি। তাতে এটা বুঝেছি আলো থাকলে অন্ধকার পালাবে। লেখাপড়া শিখলে, ভুল ঠিক বুঝে নেওয়া যাবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment