দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
টর্নেডোর তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যাওয়া বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে এখন খাবার, পানীয় জলের হাহাকার। রবিবারের কয়েক মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির বার্নিশ সহ একাধিক এলাকা। ঝড়ের ধাক্কায় ক্ষয়ক্ষতির যন্ত্রণা আর হাহাকার বেরিয়ে এসেছে সব হারানো মানুষের মুখ থেকে। ঝড়ে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা পাঁচ বলা হলেও বেসরকারি মতে মৃত্যু আরও বেশি।
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, এসেছিলেন রাজ্যপালও। মানুষের ঝড়ের কবলে পড়া সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা কমেনি এক ফোঁটাও। গ্রামগুলিতে খাবার-জল নেই, বিদ্যুৎ নেই, ঘরের ওপর গাছ পরে আছে। ফসলের দফারফা হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে সেদিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দিলীপ সেন, নিত্তেন রায়-রা। তাঁরা এখনো কিছুই সামলে উঠতে পারেননি। সোমবার প্রশাসন থেকে ত্রিপল দেওয়ার কথা বলে গেলেও এখনো সেই সাহায্য আসেনি।
ওদিকে নিকট পরিজনদেরকেই ঠেল নিয়ে যেতে হচ্ছে ঝড়ে নিহতদের মৃতদেহ চাপানো ট্রলি। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি হাসপাতালে। চত্বরে। এদিন ময়নাতদন্ত শুরুই হয় প্রায় ২২ ঘণ্টা পর। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল যা এখন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের আওতাধীন, সেখানে ময়নাতদন্তের সময় দেখা গেল চরম অব্যবস্থা। এদিন ময়নাতদন্তের কাজ শুরু হলো বেলা ১ টা নাগাদ। ঝড়ের ধাক্কায় আহতের সংখ্যা অন্তত ২০০। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসারত অনেকে। ৩৯ জন জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে সোমবার জলপাইগুড়ি শহরে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কর্মসূচি স্থগিত রাখেন সিপিআই(এম) সহ বাম ও জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ। সোমবার সকালে শহরের ডিবিসি রোড এলাকায় পদযাত্রা ও বিকালে মাদ্রাসা মাঠ থেকে বাম -কংগ্রেসের যৌথ মিছিল স্থগিত রাখা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতদের প্রতি সম্মান ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে। আহতদের উন্নতমানের চিকিৎসার দাবি করেছে সিপিআই(এম)। যাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গিয়েছে তাঁদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে জেলা শাসকের সাথে যোগাযোগ করে দাবি জানান সিপিআই(এম) এর জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সম্পাদক সলিল আচার্য। সোমবার সকালে ময়নাগুড়ির বার্ণিশের ঝড় বিধ্বস্ত এলাকার শতাধিক পরিবারে সকাল থেকে শুকনো খাবার,জল, শিশু খাদ্য বন্টন করে স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা কর্মীরা।
ঝড়ের পর রবিবার রাতে থেকেই পথে নেমে পড়েন সিপিআই(এম) নেতৃত্ব ও কর্মীরা। আহতদের দেখতে হাসপাতালে পৌঁছে যান পার্টি নেতৃত্ব। বিপন্ন মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেন তাঁরা। রবিবার রাতে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম, সিপিআই(এম) নেতা জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ, পীযুশ মিশ্র, কৌশিক ভট্টাচার্য, এসএফআই সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, যুব নেতা অর্পন পাল, দেবব্রত ভৌমিক সহ ছাত্রযুব নেতৃত্ব ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। সাহায্যের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করার কাজে নেমেছে সিআইটিইউ সহ অন্যান্য গণসংগঠনগুলিও। সোমবার সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি শহরের প্রত্যেকটি নির্বাচনী দপ্তরের সামনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস কর্মীরা নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। ঝড় বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের পাশে থেকে সমস্ত রকম সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন তাঁরা।
শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের তরফে এক প্রেস বিবৃতিতে সংগঠনের সম্পাদক জ্যোতির্ময় পাল ও সভাপতি রূপক দে সরকার জানিয়েছেন, বিধ্বংসী টর্নেডোয় ধুলিসাৎ হয়েছে ময়নাগুড়ির দক্ষিণ বার্নিশ অঞ্চলের কয়েক শত বসতবাড়ি ও মাঠভরা ফসল। দুই শতাধিক মানুষ আহত। অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারী ত্রাণ একেবারেই অপ্রতুল। সোমবার সকালে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি রিলিফ টিম চিঁড়ে, মুড়ি, মোমবাতি, দেশলাই, বিস্কুট, পানীয় জলের সম্ভার নিয়ে গিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত সর্দারপাড়া, উত্তর পুঁটিমারি, পয়েরবাড়ি প্রভৃতি গ্রামে চরম ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বন্টন করেছে। এরপর ওষুধ সামগ্রী নিয়েও তাঁরা এলাকায় দ্রুত যাবেন বলে জানানো হয়েছে।
Comments :0