Shitalkuchi

ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে শামিল হন: সেলিম

জেলা

বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতারক, লুটেরাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হবার আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বৃহস্পতিবার কোচবিহারের শিতলকুচিতে এক সমাবেশে সেলিম বলেন, কাশ্মীর আর জম্মুকে আলাদা করে কিংবা আসামকে ভেঙে আলাদা রাজ্য করে সেখানকার মানুষের কোনও সমস্যার সমাধান হয়নি। বেকারেরা কাজ পায়নি, কৃষক তার ফসলের দাম পায়নি। রাজ্য ভেঙে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে যারা সমস্যা সমাধানের স্বপ্ন দেখাতে চাইছে তারা আসলে আরএসএস’র ভাবনাকেই বাস্তবায়িত করতে চাইছে। আরএসএস’র চাল তৃণমূল বাস্তবায়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। দেশভাগের পর দুই দেশের গরিব মানুষের কোনও লাভ হয়নি, লুটেরারাই শুধু লুটে খেয়েছে।
সেলিম বলেন, পঞ্চায়েতের ভোটের দিন এগিয়ে আসতেই বিজেপি ও তৃণমূল সন্ত্রাস আর ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করছে। বিজেপি ফের সিএএ এবং এনআরসি’র জুজু দেখাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মুখে বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু ওঁর সরকারি কর্মচারীদের দিয়েই তো নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে! তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কী দায়িত্ব পালন করলেন? আসলে বিজেপি ও তৃণমূল দুটো দলই মুসলমানের বিরুদ্ধে হিন্দুকে আর হিন্দুর বিরুদ্ধে মুসলমানকে লড়িয়ে দিতে চাইছে। এর ফাঁকে মোদী-অমিত শাহ জুটি আদানি আম্বানির কাছে দেশের সম্পদ জলের দরে তুলে দিচ্ছে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো আর তার ভাইয়েরা রাজ্যে লুটের রাজত্ব চালাচ্ছে।


মহম্মদ সেলিম বলেন, মমতা ব্যানার্জির অভ্যাসে গড়া নেই, আছে শুধু ভাঙা। উনি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙেছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙেছেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ভেঙেছেন। এরাজ্যের শিল্প, সংস্কৃতি সব কিছুকে ভেঙে তছনছ করে ফেলেছেন এই ১২বছরে। শুধু বামফ্রন্ট সরকারের উন্নয়নের কাজগুলির ওপর নীল-সাদা রং করেছেন। ফের রাজ্যকে গড়ে তুলতে হলে বিজেপি-তৃণমূল দুটিকেই সরাতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকার মিলেই উত্তরবঙ্গের তিস্তা প্রকল্পকে গুটিয়ে নিয়েছে। রায়গঞ্জে এইমস হতে দেয়নি মোদী-মমতা। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে রাজ্যের মানুষ দেখেছেন শিক্ষার জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য, ফসলের দামের জন্য, শিল্প ও কর্মসংস্থানের জন্য লাল ঝান্ডা হাতে লড়াই সংগ্রাম। আর গত ১২ বছরে দেখছেন জাতের নামে লড়াই, হিন্দু মুসলমানে ভাগাভাগির লড়াই চলছে তৃণমূল আর বিজেপি’র মাধ্যমে। তৃণমূল দলটার আদতে কোনও নীতি নেই। ওরা শুধু লুটে খেতে জানে। আর এরাজ্যে যিনি এখন বিরোধী দলনেতা তিনি তৃণমূলে থাকার সময় উত্তরবঙ্গে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। বেসরকারিকরণের রাস্তা করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। কলকাতায় ট্রাম তুলে দিয়ে টাকা কামিয়ে এখন বিজেপিতে গিয়ে সাধু সাজছেন। এই লুটেরাদের সাম্রাজ্য টলিয়ে দিতে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে পদযাত্রা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের সাধারণ সমর্থক যারা দুর্নীতির সাথে যুক্ত নয় তাঁদের লাল ঝান্ডার নিচে এনে লড়াইয়ের বৃত্তকে আরও বড় করতে হবে।
শিতলকুচিতে সিপিআই(এম)’র জনসভা বানচাল করতে হামলাকারী তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের রেহাই দিয়ে বামপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানোয় পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। শিতলকুচির পঞ্চারহাটে বুধবার বিকেলে সমাবেশের প্রচার গাড়ি ভাঙচুর করে ৫ জন ছাত্র-যুবকে গুরুতর আহত করে, মাইক লুট করে তৃণমূলের লেঠেলবাহিনী। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ তাদের একজনকেও গ্রেপ্তার করেনি। উলটে সিপিআই(এম)’র প্রচার গাড়িতে ‘লাঠি ছিল’ বলে মিথ্যে মামলা সাজিয়েছে এবং পুলিশ গাড়িটি সিজ করে রেখেছে।
এসব করেও বৃহস্পতিবার কোচবিহারের শিতলকুচির বাস টার্মিনাস কমপ্লেক্সে সিপিআই(এম)’র ডাকা সমাবেশকে বানচাল করতে পারেনি তৃণমূল এবং পুলিশ। বরং এই সমাবেশে ভাষণ দিয়েই মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আর ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করা হবে। পুলিশ মিথ্যা সাজানো মামলা প্রত্যাহার করে প্রকৃত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকদের হাইকোর্ট অবধি টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করা হবে না। 


এদিন শিতলকুচিতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, পুলিশ প্রশাসন এখন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। তারা আইন এবং সংবিধান না মেনে অপরাধীদের পাহারা দিচ্ছে আর প্রতিবাদীদের ধরপাকড় করছে, মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। কোনও মিথ্যা মামলা টিকবে না, কলকাতায় চাকরিপ্রার্থী মহিলা যাকে প্রকাশ্যে পুলিশ কামড়ে দিল তার বিরুদ্ধে পুলিশের করা মিথ্যে মামলাও টিকবে না। ওরা যদি মনে করে কামড়ে দিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, লাঠি গুলি চালিয়ে প্রতিবাদীদের শায়েস্তা করবে, তবে ওরা বাংলার যৌবনকে জানে না। যারা চাকরি থেকে বঞ্চিত তারা তো পথে নেমে লড়াই করছেনই, এছাড়াও যারা যেখানে অন্যায় অবিচারের শিকার সবাই এক সঙ্গে লড়াইতে নামুন। মমতা ব্যানার্জি আগুন নিয়ে খেলছেন, প্রতারকদের না ধরে, ঘুষের টাকা উদ্ধার না করে, যারা অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করে, যোগ্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই সব হামলার জবাব গোটা রাজ্যের মানুষ দেবে।
এদিন শিতলকুচির সমাবেশে সিপিআই(এম)’র কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, আমাদের জেলায় ইডি, সিবিআই যদি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সভাধিপতিদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে তাহলে এদের অনেকেরই ঠাঁই হবে জেলে। ১০০ দিনের কাজ থেকে আবাসন সব কিছুতেই লুটে খেয়েছে তৃণমূলের নেতারা। ওদের পঞ্চায়েত থেকে সরাতে বুথে বুথে জাঠা চলছে, এই লড়াই আরও তীব্র হবে। সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরিশ বর্মণ। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা নেতৃবৃন্দও, সভাপতিত্ব করেন আকবর আলি। 


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভালো করেই জানেন ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে এরাজ্যে অস্ত্র আসে। উনি বিজেপি’র সঙ্গে অনেকদিন ছিলেন। সব রুট ওনার চেনা। উনি পুলিশকে দিয়ে কজনকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন? সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার জন্য কজনকে গ্রেপ্তার করেছেন? উলটে আসানসোলের অশান্তির জন্য দায়ী বিজেপি নেতাকে তৃণমূলে নিয়ে এসে মন্ত্রী করেছেন। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment