মনোজ আচার্য
রুবিনা জানেই না ‘কন্যাশ্রী’ মানে কী!
‘স্কুলে যাও? স্কুলে কি মিড-ডে মিল খাও?’ কথাগুলো শুনেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুবিনা।
আসলে স্কুল ব্যপারটা কেমন, মিড-ডে মিল কী, এসব কথাগুলোই রুবিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। রুবিনা স্কুলেই যায় না। যায়ওনি কোনও দিন। তার ছোট্ট ভাই সাহিলও স্কুল যায় না। ফুটপাত আঁকড়ে বেঁচে থাকার অভাবী জীবনে স্কুল, মিড ডে মিল কথাগুলো নতুন শুনতে লাগে।
মহানগরের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অনেক রুবিনা-সাহিলরা আছে, যারা কোনদিনই স্কুলমুখো হয়নি। স্কুলে পাঠানোর কোনও ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’র প্রক্রিয়াও তাদের কাছে পৌঁছায়নি।
খাস কলকাতার ধর্মতলায় সদর স্ট্রিটের পাশেই বইমেলার পেল্লাই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাসিমুখের ছবি জ্বলজ্বল করছে। জেল্লার এই চমকিত বিজ্ঞাপনকে যেন প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রুবিনারা, আমাদের হাতে বই নেই কেন? আমাদের মিড-ডে মিল কোথায়?
মহানগরের ফুটপাতে দিনদিন বেড়ে চলেছে এমন অসংখ্য সাহিল-রুবিনাদের সংখ্যা। রাজ্যজুড়ে বেড়ে চলা অভাবী, বুভুক্ষু জীবনের এমন অজস্র যন্ত্রণার দৃশ্য আপনি মহানগরের ফুটপাতে ফুটপাতে দেখতে পাবেন।
আপনার মাথায় আসবে মমতা ব্যানার্জির বহুল প্রচারিত অ্যাত্তো অ্যাত্তো প্রকল্প, এই ‘শ্রী’, সেই ‘শ্রী’র পরেও এই দৃশ্যগুলো দেখতে হচ্ছে! উত্তর পেয়ে যাবেন-রুবিনার মা থেকে শুরু করে সিআর অ্যাভিনিউর রাখি, বাদল ও মিয়াদের মুখে।
‘ওসব প্রকল্প আমাদের জোটে না। ওসব তো বড়লোকদের জন্য।’ আপনি হয়তো খানিকটা ধন্দে পড়ে যেতে পারেন। ভাবতে পারেন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতো মূলত পিছিয়ে পড়া, অভাবী মানুষ ও তাঁদের পরিবারকে সুরাহা দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা যে হচ্ছে না তা সিআর অ্যাভিনিউ’র রাখী, বাদলদের অভাব অভিযোগের কথাতেই স্পষ্ট।
মমতা ব্যানার্জির ভোট রাজনীতির স্বার্থে আমদানি করা প্রকল্পগুলো নিয়ে এমনই অভাব অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে দিকে দিকে। পাড়ার তৃণমূলের নেতার কাছের লোক যদি আপনি হন, তবেই আপনার মিলতে পারে কিছু সুযোগ সুবিধা। না হলে মিলবে না। একটু খোঁজখবর করলেই আপনি জানতে পারবেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিজ্ঞাপনী বহরের দামামা বাজানো প্রকল্পের সুবিধা না পাওয়ার তালিকায় রাখী, বাদল থেকে শুরু করে আছে আরো অনেকেই।
রাখী দাস, বাদল দাস সেই লকডাউনের সময় থেকে সিআর অ্যাভিনিউ’র ফুটপাতে সংসার পেতেছেন। আগে শোভাবাজরের কেবলকৃষ্ণ রোডে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। গেঞ্জি কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন।
লকডাউনের সময় থেকে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এদিক-সেদিক অনেক চেষ্টা করেও যখন বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারেননি, তখন বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে ফুটপাতবাসী হয়েছেন।
এখন স্বামী, স্ত্রী দুজনে কাগজ কুড়ান। রাখী দাসের জোটেনি লক্ষীর ভান্ডার। বাদলের মেলেনি সামাজিক প্রকল্পের কোনও সুবিধা। সদর স্ট্রিটের রুবিনার মা’ও পায়নি লক্ষীর ভান্ডার। তবে পাচ্ছে কারা?
Comments :0