Asia Cup Final

তিলকের ব্যাটে এশিয়ার তাজ

খেলা

রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ‘বিরাট কোহলি’ রূপে ধরা দিলেন তিলক বর্মা। শেষ ওভারে হ্যারিস রউফকে পেল্লাই ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতের জয়ের পথ মসৃণ করেন তিলক। রিঙ্কু সিংয়ের ব্যাটে জয়ের রান। দু’বল বাকি থাকতেই পাঁচ উইকেট জয় ভারতের। কুলদীপের পাশাপাশি জয়ের কারিগর তিলকই। ৫৩ বলে ৬৯ রানের ইনিংসই ভারতকে এশিয়া কাপ জেতালো। 
স্পিনাররা ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর পর, ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলে ভারত। ২০ রানে তিন উইকেট হারিয়ে। রান তুলতে নেমে শুরু থেকেই স্নায়ুর চাপে ভুগল ভারতীয় ব্যাটাররা। পাক বোলারদের পরিকল্পিত বোলিং ভারতীয় শিবিরে ধাক্কা দেয়। পাওয়ার প্লে’তে ভারতের তিন ব্যাটার আউট হলেন স্লো ডেলিভেরিতে। 
চার ওভারের মধ্যে প্যাভিলিয়নে ছন্দে থাকা অভিষেক শর্মা (৫), অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব (১) ও সহঅধিনায়ক শুভমন গিল (১২)। বড় মঞ্চে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ তাঁরা। তিন বছর আগে ফিরে যাওয়া যাক, ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ। মেলবোর্নে ১৬০ তাড়া করতে নেমে ভারতের একরকমই অবস্থা হয়েছিল। সেদিন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভারতকে উদ্ধার করেছিলেন বিরাট কোহলি নামক এক মহীরুহ। ১৮ বলে ৪৮ রান বের করেছিলেন। হ্যারিস রউফ দু’ছক্কা হাঁকিয়ে মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের। কিন্তু বিরাট তো ভারতের টি-২০ দলে অতীত। গ্রুপ ও সুপার ফোরে জোড়া ম্যাচ হারানোর পর, পাকিস্তানের কাছে ফাইনালে হার মানেই লজ্জাজনক ব্যাপার!‌ এই পরিস্থিতিতে ত্রাতার অবতীর্ণ কে হবেন? ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা দোলাচলে ভুগছিলেন।  
সূর্য ফেরার পর ক্রিজে আসেন তিলক বর্মা। তিন উইকেট পড়ার পর, ভারতের জিততে তখনও বাকি ৯৬ বলে ১২৬। হাঁকপাঁক নয় অঙ্ক কষে অনবদ্য ইনিংস খেললেন তিলক। এই বছরের শুরুতেই চেন্নাইতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫৫ বলে ৭২ ইনিংস খেলেই একাই ভারতকে জেতান। সেই দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ম্যাচ আর এশিয়া কাপ ফাইনালের কোনও তুলনাই চলে না। বড় ম্যাচে জ্বলে উঠতে ‘বুকের পাটা’ লাগে। বুকের পাটা ছিল বিরাটের। দুবাইতে এশিয়া কাপের ফাইনালে তিলক দেখালেন, তিনিও বিরাটের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে পারেন। শুধু তিলককে নয় কৃতিত্ব প্রাপ্য সঞ্জু স্যামসন ও শিবম দুবেরও। সঞ্জু-তিলক জুটি পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তান শিবিরে চাপ ফিরিয়ে দেন। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে ৫৭ যোগ করে দলকে ম্যাচ ফেরান। কিন্তু আববারকে ইনসাইড আউট শট খেলতে গিয়ে আউট হন সঞ্জু (২৪)। ফের চাপ বাড়ে ভারতের উপর। দুবের ২২ বলে ৩৩ রানের ইনিংস দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। বাকি কাজটা সারেন তিলক ও রিঙ্কু। 
এদিন, টস জয় ভারতের। প্রথমে ব্যাটিং করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন সূর্যকুমার যাদব। ফাইনালে দুরন্ত শুরু পাক ওপেনারদের। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং জারি রাখেন শাহিবজাদা ফারহান। এদিনও জসপ্রীত বুমরার বিরুদ্ধে সফল তিনি। ১০ বলে ১৮ রান করেন ফারহান। পেশির চোটের কারণে খেলতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর পরিবর্তে বোলিং ওপেন করেন শিবম দুবে। পাওয়ার প্লে’তে বুমরার তুলনায় ভালো বোলিং করেছেন। বুমরা রান খরচ করায়, পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তান বিনা উইকেটে ৪৫। ন’ওভারে ৭৭/০। ওভার পিছু আটের বেশি। ম্যাচ ভারতের থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা  দু’জনের। দশম ওভারে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু দিলেন বরুণ চক্রবর্তী। ছক্কা হাঁকানোর লোভ সামলাতে পেরে, ডিপ মিড উইকেটে তিলক বর্মার হাতে ক্যাচ দেন ফখর। প্রথম উইকেটের পতনের পর আচমকাই ভারতের দিকে ম্যাচ ঘুরে যায়। পাকিস্তানকে কেন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দল বলা হয়! এবারের এশিয়া কাপের ফাইনাল প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 
৮৪ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ব্যাটিং বিপর্যয়ের সুবাদে ১৪৬ অলআউট। ৫৯ রান তুলতে ন’উইকেট হারায় সলমন আঘার দল। অবিশ্বাস্য ঘটনা! যা সচরাচর দেখা যায় না। তবে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনল স্পিন ত্রয়ী। মাঝের ওভারে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারল না পাকিস্তান। তাঁরা তিন জন মিলে নিলেন আট উইকেট। শুরুটা করেন বরুণ। তাঁর ঝুলিতে দুই ওপেনারের উইকেট। ফখরের পর ফারহান। ৩৮ বলে ৫৭ রানে ফেরেন তিনি। এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিং বিভাগ ভাঙলেন কুলদীপ ও অক্ষর জুটি। এই ম্যাচে প্রথম দু’ওভারে ২৩ রান দেওয়ার পর, পরের দু’ওভারে ৭ রান দিয়ে চার উইকেট (আয়ুব, সলমন, শাহিন ও ফাহিম) কুলদীপের ঝুলিতে। নিজের শেষ ওভারেই নিলেন তিন উইকেট। এবারের এশিয়া কাপে সাত ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে সর্বাধিক উইকেট শিকারী তিনি। আন্তর্জাতিক টি-২০’র বহুদলীয় প্রতিযোগিতায় ১৭ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানের ফারুকিকে স্পর্শ করলেন কুলদীপ। অক্ষরের দখলে মহম্মদ হ্যারিস ও হুসেইন তালাতের উইকেট। পাকিস্তানের ইনিংস শেষ করেন বুমরা। পাওয়ার প্লে’তে মার খেলেও, ডেথ ওভারে যথারীতি স্বমহিমায় তিনি। নির্ধারিত ওভারের পাঁচ বল বাকি থাকতেই অলআউট পাকিস্তান। অল্পের রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই করল তারা।

Comments :0

Login to leave a comment