উপকূলবর্তী এলাকার খনিজ সম্পদকে পাকাপাকিভাবে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে বিনা বিতর্কে লোকসভায় বিল পাস করিয়েছিল মোদী সরকার। 
২০০২৩ সালে মোদী সরকার যখন এই বিল পাস করাচ্ছে লোকসভাতে পিছিয়ে ছিল না এরাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। রাজ্যের বিপুল পরিমাণ সরকারি জমিকে ‘লিজ হোল্ড’ থেকে ‘ফ্রি হোল্ড’ করার আইন পাস করানো হয়েছিল রাজ্য বিধানসভা থেকে।
আর সেই বিধানসভাতেই বুধবার রাজ্য বিধানসভাতে চা বাগানের ৩০ শতাংশ জমি কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপির বিধায়করা। আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামা এই প্রস্তাব আনেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান ব্যানার্জি। 
বিজেপির আনা প্রস্তাব সম্পর্কে চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়নের মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আলম জানান,‘‘ এরাজ্যে চা বাগান থেকে বনাঞ্চলে বিজেপি’র রাজ্য সরকার যা করছে, এখানে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার সেটাই করছে। বনাঞ্চলের জমিকে কর্পোরেটকে তুলে দিতে চায় বিজেপি সরকার। সংসদে তারজন্য বিল পাস করানো হয়েছে। এরাজ্যেও একইভাবে লিজ হোল্ড থেকে ফ্রি হোল্ড করা হয়েছে।’’ চা বাগানের নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘চা বাগান, বনবস্তি এলাকার যাঁরা বাসিন্দা তাঁদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ ও জীবন জীবিকার লড়াইয়ের জন্যই কর্পোরেটের বিরুদ্ধে এই মানুষরাই আন্দোলন চালিয়ে আটকে রেখেছেন। এখানে বিজেপি ও তৃণমূল-দুই সরকারেরই ভূমিকা একই।’’
আসামের শিলচরে ডোলো চা বাগানের শ্রমিকদের আন্দোলনের কথা তুলে আনছেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা। বিজেপি’র আসাম সরকারের ব্যবস্থাপনায় একটি বেসরকারি বিমান বন্দরের জন্য ডোলো চা বাগানের জমির চা গাছ কে উপড়ে ফেলে দখল শুরু হয়েছিল। চা শ্রমিকদের প্রতিরোধ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত গড়ায়। সেই ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে, ডোলো চা বাগানকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। উপড়ে ফেলা চা বাগানে আবার বসাতে হবে নতুন করে চা গাছ। আসামের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এই রায় দিতে গিয়ে গ্রিন ট্রাইব্যুনালের রায় ছিল, বিমান বন্দর করার আগে এলাকার পরিবেশগত কোনো সমীক্ষা হয়নি। একইসঙ্গে এলাকাবাসীর সব অংশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শিলচরের ডোলো বাগানের এই লড়াইয়ে অভিজ্ঞতা থেকেই জিয়াউল আলম বলেছেন,‘‘ আমাদের এরাজ্যেও সরকার আগেই ১৫ শতাংশ চা বাগানের জমি কর্পোরেটের কাছে তুলে দিয়েছিল। এবার তা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। অথচ দেড়শো বছর ধরে বাগানে বসবাসকারী বাগিচা শ্রমিকদের সঙ্গে ন্যূনতম আলোচনা করার ধৈর্য সরকার দেখাতে পারেনি। আমরা ‘গ্রিন’ বনাম ‘গ্রোথ’এর বিরুদ্ধে। আমরা গ্রোথ উইথ গ্রিন চাই।’’
অথচ ৫ ফ্রেব্রুয়ারি বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই দ্রুতগতিতে চলছে চা বাগানের জমি লুটের প্রক্রিয়া।
শিলিগুড়ি শহরের উপকন্ঠেই চা বাগানের প্রায় ৩৬ একর জমি থেকে শুরু গেছে গোড়া থেকে চা গাছ তোলার কাজ। মমতা ব্যানার্জির বাণিজ্য সম্মেলনে ৩০ শতাংশ চা বাগানের জমি ‘ফ্রি হোল্ড’ করার ঘোষনার সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি। কিন্তু তার আগেই দাগাপুর চা বাগানের বিপুল এলাকাজুড়ে চা গাছ উপড়ে ফেলার দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত বাগান শ্রমিকরা।
বুধবার চা বাগান গিয়েছিলেন দার্জিলিঙ জেলা চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়নের নেতারা। বাগান শ্রমিকদের কাছ থেকে জমি থেকে চা গাছ উপড়ে ফেলার খবর পেয়ে ফ্যাক্টারি গেটে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা। ম্যানেজারের কাছে পৌঁছে জমির প্রশ্নে বিরোধিতার কথা জানিয়ে আসেন নেতারা। বাইরে এসে দেখেন মহল্লা থেকে চা বাগানের মহিলা এসে ভিড় করেছেন। বাগান শ্রমিক মহিলারাই নিয়ে যান বাগানের সেই এলাকা যেখানে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হচ্ছে গোড়া সহ চা গাছ। চিয়াকামান মজদুর ইউনিয়নের নেতা গৌতম ঘোষ জানান, ‘‘ এক খন্ড জমি বাগান থেকে নিতে হলে লড়াই হবে। সেই লড়াই করার জন্য মুখিয়ে আছেন বাগান শ্রমিকরা।’’
গত মঙ্গলবার চা বাগানের ৩২ টি ট্রেড ইউনিয়নের মঞ্চ জয়েন্ট ফোরাম বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে জনসমক্ষে ঘোষণা করে জানিয়ে দিতে হবে, কোনোভাবেই চা বাগানের ৩০ শতাংশ জমিকে পর্যটন শিল্পের নামে কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। নেতৃত্বের অভিযোগ, যেহেতু বাণিজ্য সম্মেলনের সভা থেকে ৩০ শতাংশ জমি কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি, তাই সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে জনসমক্ষেই।
গত মঙ্গলবার জয়েন্ট ফোরামের বৈঠকের পর এদিন দার্জিলিঙ শহরে জিএনএলএফ, হামরো পার্টি, সিপিআরএম দলের চা শ্রমিক সংগঠন সহ চিয়া কামান মজদুর ইউনিয়নের নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। চিয়া কামান মজদুর ইউনিয়ন’এর সভাপতি সমন পাঠক জানিয়েছেন, ‘‘ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষনার পর থেকে পাহাড়ের চা বা বাগান শ্রমিকরা ক্ষোভে ফুঁসছে। সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করতে এলে তীব্র অশান্তির মুখে পড়তে হবে প্রশাসনকে।
Tea Garden
খনিজ সম্পদ লুট থেকে চা বাগানের জমি, মোদী মমতার এক সুর
                                    
                                
                                    ×
                                    
                                
                                                        
                                        
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0