CAA

নাগরিকত্ব আইন চালুর প্রচারে ফের সক্রিয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

জাতীয়

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে ফের প্রচারে নামল কেন্দ্র। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মাধ্যমের সূত্র’ উল্লেখ করে ফের বলা হয়েছে চালু হবে এই আইন। নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার আগেই আইনের বিধি চূড়ান্ত করা হবে। 
এই প্রচার যদিও নতুন নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই বলেছিলেন যে ভোটের আগে চালু হবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। আর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতারা নিয়ম করে সেই প্রচার চালাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গেই এই আবহে আবার বহু নাগরিকের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয়করণ করা হয়েছে। যে কারণে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। কারণ আধার নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়াটি একেবারেই একতরফা। 
এদিন আবার সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে যে নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার আগেই এই ঘোষণা হবে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করার সঙ্গেই নির্বাচন আচরণ বিধি চালু করে দেয়। কবে চালু হবে সরকার তা জানল কী করে, সেই প্রশ্নও রয়েছে এই প্রচার ঘিরে। রাজনৈতিক মহলে যদিও অনুমান রাজ্যে রাজ্যে আলোচনার পর হিসাব অনুযায়ী মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই নির্বাচন ঘোষণা করতে পারে কমিশন। 
২০১৯’র ১১ ডিসেম্বরে তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে সংখ্যার জোরে ১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী পাশ হয়। সেবারই প্রথম নাগরিকত্বের সংজ্ঞায় ধর্মীয় পরিচয় টেনে আনে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রীস্টান এবং পারসীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে সংশোধনীতে। বাদ রাখা হয় মুসলিমদের। 
কিন্তু এ দেশে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু হিন্দুরাও কতটা সুরক্ষিত থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন জোরালো। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, দেশভাগের প্রভাব যেখানে সরাসরি পড়েছে, স্বাধীনতার সময় উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসা নাগরিকদের মধ্যেও শঙ্কা ছড়িয়েছে এই ঘোষণা। আইনের ঘোষণা অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। কাদের করতে হবে আবেদন, অস্পষ্ট এখনও। ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার কিভাবে দেখাবেন তাঁরা, কোন নথি হাজির করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্নের ভিড় রয়েছে। যে কারণে পাঁচ বছরেও আইন চালুর জন্য বিধি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে, মতুয়া অংশের ভোট পেতে এই প্রচারকে ব্যবহার করে চলেছে বিজেপি। বস্তুত নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় জনপঞ্জী বা এনপিআর, জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা এনপিআর চালুর প্রচার করা হয়েছে ধর্মীয় বিভাজনের উদ্দেশ্যেই। দেশজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে তুমুল। সব ধর্মের মানুষ একত্রেই শামিল হয়েছেন প্রতিবাদে। 
‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র’ উল্লেখ করে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে যে  নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি অনুযায়ী আবেদন নেওয়ার জন্য তৈরি অনলাইন পোর্টালও। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অনলাইনেই হবে।
সংসদীয় বিধি অনুসারে, কোনও বিলে রাষ্ট্রপতি সই করে দিলে ৬ মাসের মধ্যে তার বিধি ঘোষণা করে আইনটি চালু করতে হয় অথবা সংসদের সচিবালয়ের কাছে সময় চেয়ে আবেদন জানাতে হয়। গত চার বছর ধরে অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ক্রমাগত সেই সময় চেয়ে নিয়েছে। জানুয়ারি মাসে ওই আইনের বিধি তৈরির জন্য সপ্তম বার সময় বাড়িয়েছিল সংসদীয় সচিবালয়। 
এ রাজ্যে ভোটের আগে সিএএ প্রচারে একাধিক বার এনেছে বিজেপি। রাজ্যের সরকারে আসীন তৃণমূলও দ্রুত ঝাঁপিয়ে ‘ত্রাতা’ হওয়ার চেষ্টা করেছে। ধর্মীয় ভাগাভাগির আবহে দ্বৈরথ তৈরির চেষ্টা হয়েছে।
সিএএ’র নতুন প্রচার প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) বারেবারেই বলেছে, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের আইন করাই হয়েছে বিভাজনের জন্য। তার বিরুদ্ধেই একজোটে প্রতিবাদ প্রতিরোধ চলেছে।
ভোটের আগে রামমন্দির থেকে কাশী, মথুরা নিয়ে প্রচারে জোর বাড়াচ্ছে বিজেপি। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিই বলেছেন যে ‘চারশো আসন পার’ স্লোগান তুললেও আসলে বিজেপি নিজেই নিশ্চিত নয় জয়ের ব্যাপারে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন যে ‘‘লুটেরারা যখন লুট করতে চায় তখন ধর্মের নামে ভাগ করে জনতাকে। এই লক্ষ্যেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে, আধার কার্ডকে ব্যবহার করা হচ্ছে। দিল্লি আর নবান্নের লুট রুখতে লড়াইকে একজোট রাখতে হবে।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment