20 May General Strike

২০ মে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক

জাতীয়

চার শ্রম বিধি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া বাতিল এবং অবিলম্বে ভারতীয় শ্রম সম্মেলনের আয়োজন করা সহ ১৭ দফা দাবিতে ২০ মে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান উঠে এল শ্রমিক-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই‍‌-আন্দোলনের মঞ্চ থেকে। দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীদের জাতীয় স্তরের স্বনিয়ন্ত্রিত ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলির ডাকে মঙ্গলবার নয়াদিল্লির পেয়ারেলাল ভবনে অনুষ্ঠিত হয় শ্রমিক-কর্মচারীদের জাতীয় কনভেনশন। সেখানে বিশদে আলোচনা হয়েছে জনজীবনে মোদী সরকারের ন‌য়া উদার অর্থনৈতিক নীতির একের পর এক আক্রমণ নিয়ে। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে সারা দেশে এই সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কনভেনশন, ধর্মঘটকে সর্বাত্মক ও সফল করার আহ্বান জানিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে ঘোষণাপত্র। তাতে বলা হয়েছে, আগামী দু’মাস ধরে ওই ১৭ দফা দাবিকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে প্রচার চালাবেন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীরা। প্রচার আন্দোলনকে তুঙ্গে তুলে মে মাসের ২০ তারিখে তাঁরা শামিল হবেন সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘটে। একমাত্র বিজেপি’র সঙ্গী শ্রমিক সংগঠন বিএমএস (ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ) এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে নেই, তাদের কোনও প্রতিনিধি এদিনের কনভেনশনে ছিলেনও না।

এদিনের কনভেনশনে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের একের পর এক ভাষণে উঠে এসেছে মোদী সরকারের বহুমুখী আক্রমণের চিত্র। শুরুতে এই আক্রমণের রূপ ও চরিত্র ব্যাখ্যা করে পেশ করা হয় একটি প্রস্তাব, তাতেই আহ্বান জানানো হয় ২০ মে দেশব্যাপী ধর্মঘটের। এরপর সেই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এক সুরে তাঁরা প্রতিবাদ জানান বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের সরকারের শ্রমিক-বিরোধী, কৃষক-বিরোধী এবং সামগ্রিকভাবে জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে। তাঁরা বলেছেন, শ্রমিক-কর্মচারী তথা ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একদিকে দেশের সম্পদ এবং আরেকদিকে জীবন ও জীবিকার স্বার্থে নানা দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছে, সমানে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলিকে। কিন্তু মোদী সরকার কান বন্ধ করে বসে আছে। তাই এখন একটাই কথা বলার, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়’। মোদী সরকারের সমস্ত জনবিরোধী নীতির উদ্দেশে গলা তুলে একসঙ্গে বলতে হবে ‘না’। আগামী ২০ মে সাধারণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীদের সেই সমবেত ‘না’ গর্জে উঠবে। কনভেনশনের প্রস্তাবেও বলা হয়েছে, ধান্দার পুঁজিপতিদের স্বার্থে মোদী সরকার নির্লজ্জভাবে বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলির স্বার্থবাহী নীতি নিয়ে চলছে। তা দেশের শ্রমজীবী মানুষ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। শ্রমিক-কর্মচারীরা যখন ঐক্যবদ্ধভাবে এই সব নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তখন কেন্দ্রের সরকার তাতে কর্ণপাত না করে বসে থাকতে পারে না। মোদী সরকারকে তা জানিয়ে ও বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে। ভারতের শ্রমজীবী মানুষই দেশের সম্পদের প্রকৃত স্রষ্টা। কেন্দ্রের সরকারের মদতে ও সহযোগিতায় ধান্দার পুঁজিপতিরা তাঁদের সেই সৃষ্টিকে লুট করবেন, তা তাঁরা কোনওভাবেই হতে দেবেন না।  

কনভেনশন জোরালো ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, দেশের সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধভাবে মোদী সরকারের এই সব নীতি রুখে দিতে বদ্ধপরিকর। দেশের শ্রমজীবী মানুষ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ২০ মে’র ধর্মঘট আগামী দিনে দেশব্যাপী শ্রমিক-কৃষকদের আরও বড় ও তীব্র সংগ্রামের সূচনা করবে। শোষণ ও আয়ের ক্রমবর্ধমান অসাম্যকে প্রতিহত করতে, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টাকে রুখতে এবং দেশবাসীর সঙ্গে সামগ্রিক অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে শ্রমজীবী মানুষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁদের জীবনের দুর্দশা বেড়েই চলেছে এবং তার জন্য কেন্দ্রের বর্তমান এনডিএ সরকারই দায়ী। এই সরকার বৃহৎ শিল্পীগোষ্ঠীর স্বার্থে শ্রমিক-বিরোধী যেসব নীতি নিয়ে চলছে, তার পরিণতিতেই দেশে কর্মহীনতা, দারিদ্র ও অসাম্য চরম আকার নিয়েছে। সরকারকে বাতিল করতেই হবে চারটি শ্রম বিধি, বন্ধ করতেই হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত পরিষেবাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ, আয়োজন করতেই ভারতীয় শ্রম সম্মেলনের। এগুলি থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এনডিএ সরকার শ্রমজীবী মানুষকে ধর্ম, অঞ্চল, জাত, সংস্কৃতি, ভাষা প্রভৃতির ভিত্তিতে ভাগ করার যত কুৎসিত চেষ্টাই করুক না কেন, ঐক্যবদ্ধভাবেই তাকে পরাস্ত করবেন মেহনতি মানুষ। কেন্দ্রের সরকারের একের পর এক আক্রমণে তাঁরা ক্ষুব্ধ, তাঁরা ক্রুদ্ধ। সেই ক্ষোভ ও ক্রোধের সর্বাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ২০ মে। 

যে দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ এই কনভেনশনের মূল উদ্যোক্তা ছিল, তারা হলো সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, এআইইউটিইউসি, টিইউসিসি, এসইডব্লিউএ, এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ এবং ইউটিইউসি। এদিনের এই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন ব্যাঙ্ক, বিমা, কয়লা, ইস্পাত, বন্দর ও ডক, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, ডাক, রেল, প্রতিরক্ষা, সড়ক পরিবহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল ও সিভিল সার্ভিসের মতো সরকারি ক্ষেত্র, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত অধিগৃহীত সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন সংগঠিত ও অসংগঠিত শিল্পের স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মী, স্বনিযুক্ত কর্মী, গৃহ পরিচারক, গিগ কর্মী, বিড়ি শ্রমিক, নির্মাণ কর্মী, মুটিয়া-মজদুর এবং অঙ্গনওয়াড়ি, আশা ও মিড ডে মিলের মতো প্রকল্প কর্মীদের প্রতিনিধিরাও। কনভেনশন পরিচালনা করে আইএনটিইউসি’র ও এস তোমার, এআইটিইউসি’র মোহন শর্মা, এইচএমএস’র জে আর ভোঁসলে, সিআইটিইউ’র কে হেমলতা, এআইইউটিইউসি’র বিজয় পাল সিং, টিইউসিসি’র জি শিবশঙ্কর, এসইডব্লিউএ’র আশা বেন, এআইসিসিটিইউ’র সন্তোষ রায়, এলপিএফ’র আর কে মৌর্য এবং ইউটিইউসি’র শত্রুজিৎ সিংকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।  

 

Comments :0

Login to leave a comment