TMC on CPI(M)

‘ভোট কাটুয়া’: বিজেপি’র সুরে সিপিআই(এম)-কে আক্রমণ তৃণমূলের

রাজ্য

বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন যে সিপিআই(এম)’কে ভোট দেওয়ার মানে ঘুরিয়ে তৃণমূলকেই ভোট দেওয়া। একই সুরে বুধবার বেজে উঠলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। 

পঞ্চায়েতের ফল গণনা শুরুর পর দিন, বুধবার, সিপিআই(এম)-কে ‘ভোট কাটুয়া’ বললেন কুনাল ঘোষ। নন্দীগ্রামে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কেন্দ্রের, ফল নিয়েই মাথাব্যথা দেখিয়েছেন কুনাল। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি যে আসনে জিতেছে সেখানে তৃণমূলের সঙ্গে জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে সিপিআই(এম)। ভোট কেটে নেওয়ায় হেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। 

পঞ্চায়েতের ফল ঘোষণার দিনই ওয়েবসাইট বিকল রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বহু জায়গায় মনোনয়ন কেন্দ্রে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র কাউন্টিং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ কাউন্টিং এজেন্টদের পিটিয়েছে গণনা কেন্দ্রে যাওয়া আটকাতে। তা সত্ত্বেও বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি এবং তৃণমূলের কুনাল ঘোষ, দু’জনের বক্তব্য খারিজ করার মতো ভোট পেয়েছে বামফ্রন্ট এবং সহযোগীরা। 

প্রাথমিক হিসেব, বিভিন্ন সূত্র থেকে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখাচ্ছে যে বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোটের প্রায় সমান ভোট পেয়েছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএস। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী হিসেবে ভোটের অঙ্কেও বিজেপি’কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বামফ্রন্ট ও সহযোগী জোট। 

প্রাথমিক হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিজেপি’র ভোটের হার প্রায় ২১ শতাংশ। ২০ শতাংশে রয়েছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএস জোট। গত বিধানসভা ভোটে এই রাজনৈতিক শক্তির ভোট ছিল ১০ শতাংশ। 

অন্যদিকে, মনোনয়ন থেকে গণনা কেন্দ্র পর্যন্ত লাগাতার কারচূপির পরও তৃণমূলের ভোট ৫২ শতাংশ। যেভাবে ভোট হয়েছে, তৃণমূল জাল ভোট দিয়েছে, ব্যালট বাক্সের সিল ভেঙে ব্যালট ঢোকানো হয়েছে, বিরোধীদের ছাপ থাকা ব্যালট ফেলে দেওয়া হয়েছে- আসলে যে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট অনেক কম, তা নিশ্চিত। 

কুনাল বলেছেন যে কন্যাশ্রীর মতো বিভিন্ন প্রকল্পের অধিকার রক্ষার পক্ষে রায় দিয়েছেন গ্রামের মানুষ। প্রশ্ন উঠছে, উন্নয়ন হয়ে থাকলে কমিশন এবং পুলিশকে নিয়ে এমন নির্বিচার জালিয়াতি করার দরকার পড়ল কেন? 

নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে এদিন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’র নেতা হয়ে ওঠা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেছেন কুনাল। তাঁর দাবি, নন্দীগ্রাম বিধানসভায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। নন্দীগ্রামের মানুষ মনে করেন শুভেন্দু নন, নন্দীগ্রামের বিধায়ক মমতা ব্যানার্জিই। উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে অল্প ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। 

কুনাল ঘোষ একইসঙ্গে ‘ঘরের সমস্যা’-কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সমস্যা না থাকলে আরও বাড়ত ভোট। শুভেন্দুকে তোলাবাজ, সুবিধাবাদী বলেও গাল পেড়েছেন তিনি। 

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বিজেপি’কে ঠেকিয়ে বাম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির উত্থানে তৃণমূল এত ভীত কেন। বিজেপি’র সুরে সিপিআই(এম)-কে ‘ভোট কাটুয়া’ বলতে হচ্ছে কেন। বস্তুত বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গিয়েছে তৃণমূলের দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিছুদূর এগিয়ে গতি কমিয়ে দিচ্ছে। আজকের শিক্ষক নিয়োগ থেকে অতীতের সারদা কেলেঙ্কারির মতো একের পর এক ঘটনায় তদন্ত হয়েছে আদালতের নির্দেশেই। আর চলেছে ক্ষতিগ্রস্তদের আন্দোলন। আদালতই বারবার তদন্তের গতি কমিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সমালোচনাও করেছে। 

বামপন্থীরা প্রচারে তৃণমূল-বিজেপি’র ‘সেটিং’-কে আক্রমণ করেছেন। দুই লুটেরাকেই হারানোর ডাক দিয়েছেন। হুমকি, হামলা, ভোট লুটের বিরুদ্ধে লড়ে বিপুল সংখ্যায় মানুষ সেই আহ্বানে সাড়াও দিয়েছেন। তৃণমূল মুখপাত্রের বক্তব্যে স্পষ্ট, মানুষের এই মেজাজকে বিজেপি’র মতো ভয় পাচ্ছে তৃণমূলও।  

Comments :0

Login to leave a comment