Truck strike

পিছু হঠলো কেন্দ্র, এখন চালু হচ্ছে না নয়া আইন

জাতীয়

চাপের মুখে পিছু হঠতেই হলো কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। ট্রাক-ট্যাঙ্কার ধর্মঘটের জেরে যখন গোটা দেশে জ্বালানি, পণ্য পরিবহণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিল তখন কেন্দ্রীয় সরকার এক প্রকার বাধ্য হয়েই মঙ্গলবার রাতে আশ্বাস দেয় যে, এখনই কড়া শাস্তিমূলক নয়া আইন চালু করা হবে না। সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গে আলোচনাই করেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জারি করা হবে নতুন বিধি। তবে ধর্মঘটী ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকদের দাবি ছিল, ওই আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এদিন রাতের দিকে জানা যায়, সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ‘অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস (এআইএমটিসি)-র পক্ষ থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকদের। পরে রাতেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তরফে প্রচার করা হয় যে, সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকরা। সরকারিভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর পাওয়া না গেলেও মনে করা হচ্ছে সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে ধর্মঘট স্থগিত রাখতে চলেছেন ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকরা।
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা বস্তুত পরিস্থিতির চাপে পড়েই বৈঠক বসেন ধর্মঘটীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। অনেক রাত পর্যন্ত বৈঠকের পর ধর্মঘটীদের অনড় মনোভাব আঁচ করেই নমনীয় সমাধান সূত্রের রাস্তা বেছে নিতে বাধ্য হয় সরকার। তাঁদের উদ্বেগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারেনি কেন্দ্র। সেকারণেই বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, নয়া আইন এখনই চালু করা হবে না। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই চালু করা হবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ১০৬ (২) এর অধীনে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা বিধানের বিষয়ে ভারত সরকার ট্রাকচালকদের উদ্বেগের বিষয়টি বিবেচনা করেছে এবং সর্বভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেছে এদিন।’’ সঙ্গে এও জানায় যে, ‘‘সরকার এও বলতে চায় নয়া আইন এবং বিধানগুলি এখনও কার্যকর করেনি। আমরা এটাও বলতে চাই যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারা ১০৬ (২)  চালু করার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস’র সঙ্গে আলোচনার পরে নেওয়া হবে।’’
বৈঠকের পর অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস’র সভাপতি অমৃতলাল মদন সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা শুধু আমাদের চালক নন আপনারা আমাদের সৈনিকও। সৈন্যরা যেমন দেশের সীমান্তে কাজ করেন, আপনারাও তাই করেন। আমরা চাই না আপনারা কোনও অসুবিধার মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দশ বছরের শাস্তি ও জরিমানা স্থগিত রেখেছেন। অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস’র সঙ্গে পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত কোনো আইন আরোপ করা হবে না।”
ঔপনিবেশিক ফৌজদারি আইন পরিবর্তনের নামে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে নতুন বিধি এনেছে তাতে ‘হিট অ্যান্ড রান’ বা ধাক্কা মেরে পিষে দিয়ে চম্পট দিলে এবং সেই ঘটনায় মৃত্যু হলে অভিযুক্ত চালকের ১০ বছর পর্যন্ত জেল হওয়ার উল্লেখ আছে। অথচ পুরানো আইনে এই মামলায় চালকের মাত্র দু’বছরের জেল হতো ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায়। ফলে নয়া আইনের কড়া শাস্তির বিষয়টি মানতে রাজি নন পরিবহণ চালকরা। একারণেই তাঁরা তিনদিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, কেন্দ্র আইন প্রত্যাহার না করলে লাগাতার ধর্মঘটও হতে পারে। এরপরেই বস্তুত টনক নড়ে কেন্দ্রের এবং বৈঠকে বসতে সম্মত হয়।
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, কেন্দ্রের এই আইনের বিরুদ্ধে ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকদের ধর্মঘটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেই। সোমবার রাতে রাজস্থানের কেকরি জেলায় উত্তেজিত জনতা একটি পুলিশ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর-ইট ছোঁড়ে। কয়েকজনের জখম হওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে। কোনও কোনও রাজ্যে ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকদের ধর্মঘটকে সংহতি জানিয়ে শামিল হয়েছেন বাস কিংবা অটো চালকরাও। তিনদিনের এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে সোমবার। তবে ধর্মঘটীরা এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, কেন্দ্র নয়া আইন প্রত্যাহার না করলে প্রতিবাদ-আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এদিন খোলাখুলিভাবে ধর্মঘটী ট্রাক-ট্যাঙ্কার চালকদের ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছিল। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এই ধরনের আইনের অপব্যবহার করে ‘তোলাবাজি’ এবং ‘সংগঠিত অপরাধ’ আরও বেশি মাত্রায় ঘটবে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ হ্রাস করে এখন গরিবদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ফাঁদ পেতেছে।’’ সমর্থন জানিয়েছিল সিআইটিইউ-ও।
হিমাচল প্রদেশে ধর্মঘটের জেরে জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পেট্রোল পাম্পের সামনে লম্বা লাইন লক্ষ্য করা গিয়েছে। আগামীদিনে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে আন্দাজ করে দু এবং চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে রেশন করে জ্বালানি দেওয়ার নির্দেশিকা জারি করেছে হিমাচল প্রদেশ কর্তৃপক্ষ। একই ছবি লক্ষ্য করা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরেও বিরাট লাইন দেখা গিয়েছে পেট্রোল পাম্পের সামনে। পাঞ্জাব সরকার রাজ্যবাসীকে জ্বালানি নিয়ে অহেতুক আতঙ্কে না ভোগার আরজি জানিয়েছে এদিন। ব্যাপক প্রভাব পড়ে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়, হরিয়ানাতেও। কোথাও কোথাও ধর্মঘটীদের সংহতি জানাতে শামিল হন বাস, অটো চালকরাও। আশা করা যাচ্ছে, বুধবার থেকে হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
 

Comments :0

Login to leave a comment