মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রচারের সময় জোর গলায় বলেছিলেন তিনি রাষ্ট্রপতি হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। তিনি ভোটে জিতেছেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভারও নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁর শাসনের ১১ মাস কেটে গেলেও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কিন্তু থামেনি। গত কয়েক মাস ধরে তিনি অবশ্য সর্বত্র দাবি করে বেড়াচ্ছেন এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নাকি ৮টি যুদ্ধ থামিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান পাক-ভারত যুদ্ধ। যদিও ভারত ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছে। তবে পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। ভারত স্বীকার না করলেও ট্রাম্প অন্তত ৬১বার দাবি করেছেন তিনিই পাক-ভারত যুদ্ধ থামানোর আসল কারিগর। বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়ে উচ্চ হারে শুল্ক চাপিয়ে ভারতকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করেছেন বলে ট্রাম্প বার বার উল্লেখ করেছেন।
৮টি যুদ্ধ থামিয়েছেন বলে দাবি করলেও যে যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থামাবেন বলেছিলেন সেই যুদ্ধ কিন্তু থামেনি। যে শান্তি চুক্তির মধ্যে দিয়ে গাজায় ইজরায়েলি যুদ্ধ থামিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সেই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ৪৫ দিনে ৪৯৭বার গাজায় হামলা চালিয়ে কয়েকশো লোককে নতুন করে খুন করেছে ইজরায়েল। আশ্রয়হীন করেছে নতুন করে কয়েক হাজার মানুষকে। যুদ্ধ বন্ধের নামে গাজায় কার্যত প্যালেস্তাইনবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আমেরিকার অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহযোগিতা ও সাহায্য পেয়েই ইজরায়েল গাজা ধ্বংস ও দখলের অভিযান চালাচ্ছে। যে যুদ্ধের নেপথ্য কারিগর আমেরিকা সেই আমেরিকাই হাস্যকরভাবে দাবি করছে যুদ্ধ থামানোর। আমেরিকা না চাইলে গাজায় ইজরায়েলি গণহত্যা চলত না।
বার কয়েক চেষ্টা করে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থ হয়ে এখন যুদ্ধ থামাতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছেন। প্রসঙ্গত আজ ট্রাম্প যে যুদ্ধ থামানোর কথা বলছেন সেই যুদ্ধের উৎসের মধ্যেই রয়েছে আমেরিকার ভূমিকা। বস্তুত রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতো না যদি রাশিয়ার দাবি মতো আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো সামরিক জোট পূর্বদিকে সম্প্রসারণ না হতো। রাশিয়াকে চাপে রাখা এবং কোণঠাসা করার লক্ষ্যে আমেরিকা ও ইউরোপের জোট রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত ন্যাটোকে টেনে নিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য করা। রাশিয়া মনে করে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্য হওয়া মানে রাশিয়ার নিরাপত্তার বিপন্নতা বাড়া। তাই রাশিয়া ঝুঁকি না নিয়ে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। এবং ইউক্রেনের ২০ শতাংশ দখলে নেয়।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প বুঝে গেছেন ইউক্রেন বা আমেরিকা ইউরোপের শর্তে এই যুদ্ধ থামানো যাবে না। দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেও রাশিয়াকে দমানো যায়নি। ট্রাম্প হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন রাশিয়ার পুতিন ভারতের মোদী নন যে এক হুমকিতেই নতজানু হয়ে যাবেন। তাই যুদ্ধ বন্ধে তিনি যে ২৮ দফা শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন তা রাশিয়ার মূল দাবি মেনে নিয়েই। এখন দেখা যাক ট্রাম্পের চাপের কাছে ইউক্রেন ও ইউরোপ আত্মসমর্পণ করে কি না।
editorial
ট্রাম্প এবং ইউক্রেন যুদ্ধ
×
Comments :0