MALDAH MIGRANT DEATH

অবহেলার চরম, আইজলে নিহত সানাউলের দেহেও পচন, ক্ষোভ চৌদুয়ায়

রাজ্য জেলা

MALDAH MIGRANT DEATH পচনের গন্ধ প্রবল, সুগন্ধি ঢালছেন পরিজনরা। রবিবার মালদহের চৌদুয়ায় সানাউল শেখের দেহ ঘিরে গ্রামবাসীরা।

আইজলে রেল সেতু ভেঙে নিহত শ্রমিক সেনাউল হকের মরদেহ পৌঁছালো গ্রামে। রবিবার রতুয়া-২ ব্লকের চৌদুয়ার গ্রামে তাঁর দেহও পৌঁছেছে যথাযথ সংরক্ষণ ছাড়াই। রাজ্য এবং কেন্দ্রের দুই সরকারের অবহেলার আরেক নমুনায় দেখল মালদহ। শোকের মধ্যেই বাড়ল ক্ষোভ।  

২৩ আগস্ট সকালে মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিমি দূরে সাইরঙয়ে একটি নির্মীয়মান রেল সেতু ভেঙে মালদহের ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। একে একে তাঁদের দেহ ফিরেছে গ্রামে। বাকি ছিল কেবল সানাউল শেখের দেহ পৌঁছানো। সংরক্ষণের অভাবে দেহে পচন ধরেছে। এর আগে যাঁদের দেহ আনা হয়েছে, অবহেলা এবং অব্যবস্থার একই নজির দেখা গিয়েছে। রেলেরই কাজে গিয়েছিলেন তাঁরা। রেলের ভূমিকা ঘিরেও রয়েছে ক্ষোভ।

নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ১৬ জনের বাড়ি রতুয়া-২ ব্লকে, ইংরেজবাজার ব্লকের ৫ জন। গাজোল ও কালিয়াচক-২ ব্লকের ১ জন করে শ্রমিক এই দুর্ঘটনায় মারা যান। তবে একসঙ্গে এই  ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 

ঘটনার দিন ১৮ জনের দেহ উদ্ধার হয়। পরের দিন ৪ জন এবং দুর্ঘটনার দু’দিন পর আরেক পরিযায়ী শ্রমিক সেনাউল হকের মরদেহ উদ্ধার হয়। শুক্রবার মালদহে পৌঁছায় ১৮ জনের দেহ। শনিবার পৌঁছায় আরও ৪ জনের দেহ। তিন দিন ধরে পৌঁছেছে দেহ।

তবে তিনদিই অবর্ণনীয় অবহেলার মধ্যে দেহ এসে পৌছেছে গ্রামে। দেহের সংরক্ষণ ঠিক ভাবে না হওয়ায় পচন হয়, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের হাতে এভাবেই এসেছে একের পর এক দেহ। তাঁদের শেষবার দেখার জন্য কফিন খোলা সম্ভব হয়নি। অকল্পনীয় অবহেলার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়কেই দায়ী করছেন স্থানীয় মানুষ।

দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও মন্ত্রী তো দূরের কথা, কোনও সরকারি আধিকারিক দুর্ঘটনাস্থলে গেছেন বলে শোনা যায়নি। কেন্দ্রের কোনও মন্ত্রীর যাওয়ার কথাও শোনা যায়নি। সেই সঙ্গে অপদার্থতার নজির হয়ে রইল, বাড়ির পথে শেষ যাত্রার সময়, ১২০০ কিমি দূরের গন্তব্যে সংরক্ষণ ছাড়াই দেহ পাঠানোর ঘটনা। 

কেন্দ্রীয় সরকার মৃতদের পরিবারের হাতে ১০ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়ার ঘোষণা করলেও রাজ্য সরকারের তরফে এখনও আর্থিক বা অন্য কোন সহায়তার কথা ঘোষণা করা হয়নি। তবে মৃতদেহ অবহেলায় পাঠানো হয়েছে বলে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে মুখ খুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য ও দলের মন্ত্রীরা। 

এ প্রসঙ্গে সিআইটিইউ-র জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিক নাম শুনলেই অবহেলা দেখানো হচ্ছে করোনার সময় থেকে। রাজ্যে কাজ না পেয়ে বা পেলেও ন্যায্য মজুরি না পেয়ে গ্রামের মানুষ কাজের জন্য রাজ্যের বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর মিলছে। করোনার সময় কলকারখানা বা অন্য কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঘরে ফিরতে গিয়ে শুধুমাত্র মালদহ জেলার ২৩ জন নাগরিক মারা যান। তাঁদের পরিবারের প্রতি কোনও সহযোগিতার হাত আজও বাড়িয়ে দেয়নি রাজ্যের তৃণমূল সরকার।’’

রবিবার সকালে সেনাউল সেখের মরদেহ গ্রামে গিয়ে পৌছালে পরিবার ও গ্রামবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। গ্রামেই ছিলেন ছিলেন কৃষক নেতা মেসের আলি ও নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা সেখ তাবরেজ। 

Comments :0

Login to leave a comment